• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
এখনই আলোচনা নয় : ভারত

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

ছবি : সংগৃহীত

ভারত

এখনই আলোচনা নয় : ভারত

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ০২ মার্চ ২০১৯

পাকিস্তানের সঙ্গে এখনই আলোচনায় প্রস্তুত নয় বলে জানিয়েছে ভারত। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দ্রুত গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা নিলেই কেবল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সন্ত্রাসীদের মদত দেওয়ার অভিযোগকে সামনে এনে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী হুশিয়ার করেছে, যতদিন পাকিস্তান এই অপতৎপরতা বন্ধ না করবে, ততদিন ভারত সে দেশের জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংসে হামলা চালিয়ে যাবে। চলমান উত্তেজনার মধ্যে গত বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো ভারতের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে কর্মকর্তারা এই ঘোষণা দেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চলমান উত্তেজনা নিরসনে দু’দেশের মধ্যে আবারো সংলাপ শুরুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে পাকিস্তান জানিয়েছে, তারা আলোচনায় রাজি। খবর : ডন, আলজাজিরা, এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও আনন্দবাজার পত্রিকা।

এর আগে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজি থাকলে তাকে শান্তি আলোচনার প্রস্তাব দিতে প্রস্তুত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। জবাবে ভারত জানায়, তাদের পাইলটকে মুক্তি দেওয়া হলেও শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকের পূর্বশর্ত: পাকিস্তান থেকে যেসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হচ্ছে দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে তার তদন্ত করতে হবে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল এসএস মহল গতকাল শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, এই উত্তেজনা পাকিস্তানের সৃষ্টি। কিন্তু ভারত শত্রুপক্ষের যেকোনো পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুত।

তিনি বলেন, কারিগরি সহায়তাদানকারী বাহিনী সেখানে উপস্থিত ছিল, সেনারা প্রস্তুত ছিল যেকোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবেলায়। সংবাদ সম্মেলনে নৌবাহিনীর রিয়ার অ্যাডমিরাল দলবির সিং গুজরাল দাবি করেন, পাকিস্তান সমুদ্রসীমা দিয়ে কোনো আগ্রাসন চালাতে গেলেও তারা চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রস্তুত ছিলেন। আমরা পাকিস্তানের যেকোনো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত। আমরা আমাদের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল আর জি কে কাপুর বলেন, আমরা আমাদের লক্ষ্যে হামলা চালিয়েছি। কিন্তু হতাহতের সংখ্যা এখনই বলা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আজাদ কাশ্মিরে হামলার প্রমাণ কীভাবে প্রকাশ করা হবে তা রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যাপার। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। এদিকে যুদ্ধের আবহে ভারত যখন সরগরম, তখন সরাসরি শান্তির বার্তা দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, রাজনীতির প্রয়োজনে আর একটা নির্বাচন জেতার জন্য যুদ্ধ আমরা চাই না। আমরা শান্তি চাই।

পুলওয়ামায় হামলার পর পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মিরে ভারতীয় বিমানবাহিনীর অতর্কিত হানা এবং তারপর থেকেই যেভাবে গোটা দেশে কার্যত যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মমতা। তিনি বলেন, মঙ্গলবার সকালে থেকেই শুনছি, বিমান হামলায় শত্রুপক্ষের ৩০০-৩৫০ লোক মারা গিয়েছেন। হামলায় আদৌ কেউ মারা গিয়েছেন কি না, তা আমরা জানতে চাই। জানতে চাই, বোমা কোথায় ফেলা হয়েছিল, বোমা ঠিক জায়গায় পৌঁছেছিল কি না।

এ প্রসঙ্গে বিদেশি গণমাধ্যমের নাম উল্লেখ করে তৃণমূল নেত্রী বলেন, তারা বলছে, এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। বোমাটা অন্য জায়গায় পড়েছে। কোনো মানুষ মারা যায়নি। কেউ বলছে একজন মারা গিয়েছেন। সত্যটি কী, তা আমরা জানতে চাই। আমরা ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে রয়েছি। কিন্তু, তাদের সত্যি কথাটা বলার সুযোগ দেওয়া উচিত। দেশের লোকেরও সত্যিটা জানা উচিত।

মমতা আরো অভিযোগ করেন, পুলওয়ামার ঘটনা এবং তারপর ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রত্যাঘাত, কোনো কিছু নিয়েই প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে একটি বৈঠকও করেননি। দেশের পক্ষে আমরা সবাই। দেশমাতৃকাকে আমরা সবাই ভালোবাসী। তবে জওয়ানদের রক্তে রাজনীতি করা আমরা পছন্দ করি না। জওয়ানদের রক্তের দাম অনেক বেশি। তারা আমাদের গর্ব। তারা সীমান্তে লড়াই করেন। কিন্তু, ভোটবাক্সে ভোটের ফায়দা তোলার জন্য তাদের নিয়ে রাজনীতি করে কেউ কেউ। এটার নিন্দা করি। রাজনীতির প্রয়োজনে আমরা যুদ্ধ চাই না। দেশের প্রয়োজনে হলে আমরা দেশের সঙ্গে রয়েছি। অন্যদিকে, ভারতীয় পাইলটকে মুক্তি দেওয়ার ঘটনাকে স্বাগত জানিয়েছে জাতিসংঘ। নয়াদিল্লিকে দেওয়া ইসলামাবাদের শান্তি আলোচনার প্রস্তাবকে ইতিবাচক বলছে তুরস্ক। আর মোদি-ইমরান বৈঠকের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।

উল্লেখ্য, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মিরের পুলওয়ামায় ভারতের সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের গাড়িবহরে আত্মঘাতী বোমা হামলায় বাহিনীটির অন্তত ৪৪ জন সদস্য নিহত হন। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদ হামলার দায় স্বীকার করে। গত মঙ্গলবার সেই জইশ-ই-মোহাম্মদের ঘাঁটি ধ্বংস করতে ১৯৭১ সালের পর প্রথমবারের মতো পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের আকাশসীমায় ঢুকে বিমান হামলা চালায় ভারত।

ভারতের প্রত্যাঘাতের ২৪ ঘণ্টা পর ভারতের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান। এর মধ্যে গত বুধবার কাশ্মিরে আকাশসীমা লঙ্ঘন করায় ভারতের দুটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। এ সময় ভারতীয় এক পাইলটকে আটকও করে পাকিস্তান। এরপর গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভারতীয় পাইলটকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দেন। এ ছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসার আগ্রহ প্রকাশ করেন ইমরান। তিনি বলেছেন, শান্তি প্রক্রিয়া চালিয়ে নিয়ে যেতেই এই উদ্যোগ। গতকাল শুক্রবার ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে ভারতের হাতে তুলে দেয় পাকিন্তান। তবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ পাকিস্তানের এ পদক্ষেপের ভিন্ন অর্থ দেখতে পাচ্ছেন। তারা বলছেন, জেনেভা কনভেনশন অনুসারে অভিনন্দনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এতে সমঝোতা বা অন্য কোনো বিষয় নেই।

ভারতীয় বিমানবাহিনীর উদ্ধৃতি দিয়ে ভারতের কয়েকটি গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক চাপের কারণে পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে ফিরিয়ে দিতে সম্মত হয়েছে পাকিস্তান। বৃহস্পতিবার ভারতের সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এয়ার ভাইস মার্শাল আরজিকে কাপুর দাবি করেন, জেনেভা কনভেনশন অনুসারে তাদের পাইলটকে ছাড়া হচ্ছে। যদিও নিয়ন্ত্রণরেখায় (লাইন অব কন্ট্রোল) পড়ে যাওয়ার পর পাকিস্তানের হেফাজতে থাকা ভারতের উইং কমান্ডার পাইলট অভিনন্দনকে ছেড়ে দেওয়ায় আমরা খুশি। তিনি বলেন, আমরা যা করতে চেয়েছিলাম, তা করেছি। দেখানোর জন্য আমাদের কাছে প্রমাণও আছে। এসব দেখানোর সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর নির্ভরশীল।

এদিকে এই উত্তেজনার মধ্যেই ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কাশ্মিরের সশস্ত্র বিদ্রোহীদের মদত দেওয়ার অভিযোগে পাঁচ বছরের জন্য তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মোদি সরকার। কাশ্মির নিয়ে ভারত-পাকিস্তান চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে দলটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনপরিবেশ বিঘ্ন ও অবৈধ সংশ্লিষ্টতার কারণে জামায়াতে ইসলামিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ১৯৪২ সালে গঠিত এই দলটির ওপর এই নিয়ে তৃতীয়বার নিষেধাজ্ঞার আরোপ করা হলো। এ বিষয়ে দলটির সিনিয়র নেতা বলেন, ভারতের এই ‘আয়রন ফিস্ট পলিসি’ কাজ করবে না। তিনি বলেন, এর আগেও আমাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। সরকার সেনাশক্তি ব্যবহার করেছে কিন্তু লাভ হয়নি। এবারো হবে না।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads