• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
বিহারের নির্বাচনের আলোয় পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন

প্রতীকী ছবি

ভারত

বিহারের নির্বাচনের আলোয় পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন

  • প্রকাশিত ২৫ নভেম্বর ২০২০

বিহার জনসংখ্যার দিক থেকে ভারতের ৩য় বৃহত্তম এবং আয়তনের দিক থেকে দ্বাদশ বৃহত্তম রাজ্য। অর্থনৈতিক দিক থেকে ভারতের অন্য রাজ্যগুলোর থেকে পিছিয়ে থাকলেও রাজনৈতিক এবং ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক থেকে রাজ্যটির গুরুত্ব অনেক। কিছুদিন আগেই বিহারে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিধানসভা নির্বাচন। আগামী বছর এপ্রিল-মে নাগাদ পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিহারের নির্বাচনী ফলাফলের একটি বড় প্রভাব যে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে পড়বে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

যদিও দুটি রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণ অনেক জটিল এবং ভিন্ন তবুও দুটি রাজ্যেরই ভোটের রাজনীতির ক্ষেত্রে সব থেকে বড় যে মিলটি লক্ষ করা যায় তা হলো নিম্ন বর্ণের হিন্দু এবং মুসলিমদের ভোট। বিহারের নির্বাচনে এবার বড় দুটি জোট গঠিত হয়েছে। টানা ৩ দফায় ক্ষমতায় থাকা নীতিশ কুমারের ‘জনতা দল ইউনাইটেড’ ৭ম বারের মতো ক্ষমতায় এসেছে কেন্দ্রের শাসক দল ‘ভারতীয় জনতা পার্টি’র সঙ্গে ‘ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক আল্যায়েন্স’ গঠন করে। অন্যদিকে কেন্দ্রের বিরোধী দল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়েছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল লালুপ্রসাদ যাদবের ‘আরজেডি’। ‘ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ আল্যায়েন্স’ নামক জোটটিতে কংগ্রেস এবং আরজেডির সঙ্গে বামদলগুলোও ছিল। বিহারের নির্বাচনে এবার নীতিশ কুমার বাজিমাত করলেও লালুপ্রসাদের পুত্র তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বে তার দলও যে বড় একটা সম্ভাবনা জাগিয়েছিল তা অস্বীকার করার উপায় নেই। বিহারের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব যে একদিন এই তরুণ তুর্কির হাতে আসবে সেটা তার শত্রুরাও অনায়াসে মেনে নেবে। বিজেপির ধর্মীয় বিভাজনের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে এবারের নির্বাচনে তারা প্রচারের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিয়েছে বিহারের অর্থনীতি, বেকার সমস্যা, কৃষক-শ্রমিকদের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ রাজ্যের সামগ্রিক আর্থসামাজিক উন্নয়নকে। ফলে তাদের জোট সরকার গঠনে ব্যর্থ হলেও একক দল হিসেবে সব থেকে বেশি আসন (৭৫টি) পেয়েছে আরজেডি। বিহারের দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলকে চিহ্নিত করে সেগুলোকে সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া দলটি একটা বড় সম্ভাবনা জাগিয়েছিল এবারের নির্বাচনে। পক্ষান্তরে বিজেপির নির্বাচনী প্রচারণায় প্রাধান্য পেয়েছে এনআরসি, সিএএ, পাকিস্তান, জঙ্গিবাদের মতো ইস্যুগুলো।

বড় ধরনের একটা সম্ভাবনা জাগানোর পরেও  নীতিশ কুমারের কাছে তেজস্বী যাদবের হারার কারণ হিসেবে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকই দায়ী করেছেন কংগ্রেসের সঙ্গে তাদের জোটবদ্ধ হওয়াকে। প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে রাহুল গান্ধীর ভূমিকাও। তেজস্বী যাদবের পরাজয়ের পেছনে আর একটি বড় কারণ হলো রাজ্যে ‘অল ইন্ডিয়া মজলিসে ইত্তেহাদুল  মুসলিমীন (এআইএমআইএম)’-এর আগমন। দলিত ও মুসলিমদের দল হিসেবে পরিচিত আরজেডির মুসলিম ভোট ব্যাংকের একটা বড় অংশই এবার গিয়েছে এআইএমআইএমের পকেটে। বিহারে এবার প্রথম বারের মতো নির্বাচন করেই তারা জিতে নিয়েছে ৫টি আসন।

পশ্চিমবঙ্গের আগামী বিধানসভা নির্বাচনেও এআইএমআইএম প্রথমবারের মতো নির্বাচন করতে যাচ্ছে। তারা রাজ্যের ক্ষমতাসীন সরকার তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করতে আগ্রহী। এআইএমআইএমের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কো-অরডিনেটর সৈয়দ জামিরুল ইসলাম প্রায় ৬ মাস আগেই তার দল তৃণমূলের সঙ্গে জোট করার বিষয়ে চিঠি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন। যদিও এখনো পর্যন্ত তৃণমূলের পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি। ধর্মের ভিত্তিতে গঠিত এই দলটির সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলটি জোট গঠন করতে আগ্রহী হবে বলে মনেও হয় না। এদিকে বিহারের পর পশ্চিমবঙ্গেও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধেছে বামেরা। বিহারের নির্বাচন মূলত দুটি বড় দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে একটা ত্রিমুখী লড়াই লক্ষ করা যাবে। একদিকে থাকবে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস, একদিকে বিজেপি আর অন্যদিকে বাম-কংগ্রেস জোট। রাজ্যে এআইএমআইএমের আগমনের ফলে তৃণমূল ও বামদের মুসলিম ভোট ব্যাংকের একটি বড় অংশের সমর্থন হারাবে তারা। যেটা পক্ষান্তরে বিজেপির পাল্লাকেই ভারী করবে।

২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে ২৯৪টি আসনে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। রাজ্যে ৩০% মুসলিম সংখ্যালঘুরা নির্বাচনে একটা বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। সেখানে এমন ৯৮টি আসন আছে যেখানে মুসলমানরাই জয়-পরাজয় নির্ধারণ করে। তাই আগামী বিধানসভা নির্বাচনে সব দলই চাইবে মুসলিম সংখ্যালঘুদের ভোট ব্যাংকটি নিজেদের দিকে টানতে। সিএএ, এনআরসি ইস্যুগুলো ব্যবহার করে বিরোধীরা যেমন বিজেপিকে ঘায়েল করতে চাইবে ঠিক তেমনি বিরোধীদের ঘায়েল করার মতো পর্যাপ্ত অস্ত্র রয়েছে বিজপির হাতে। ২০০৬ সালে প্রকাশিত সাচারের রিপোর্ট শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, সারা ভারতে হইচই ফেলে দিয়েছিল। রিপোর্টে বাম আমলে সংখ্যালঘু মুসলিমদের দুর্দশার চিত্র ফুটে উঠেছিল। ফলে তাদের প্রতি সংখ্যালঘুদের যে সমর্থন ছিল সেটি ঝুঁকে পড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে। এরপর বামেরা ক্ষমতা হারালে দৃশ্যপটে আগমন ঘটে তৃণমূল কংগ্রেসের। ২০১৬ সালে প্রকাশিত হয় অমর্ত্য সেনের গবেষণাপত্র ‘পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমদের জীবনের বাস্তবতা : একটি প্রতিবেদন’। এই গবেষণা অনুযায়ী তৃণমূল কংগ্রেসের শাসনামলে সংখ্যালঘুদের অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়েছে তা বলা যাবে না। তাহলে তৃণমূল কংগ্রেসও কি এবার সংখ্যালঘুদের সমর্থন হারাবে? এবার কী করবে পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু মুসলিমরা? তারা কি তাহলে হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপিকে সমর্থন জানাবে? সংখ্যালঘুদের সামনে বিকল্প কী?

লেখক :আফসানা রিজোয়ানা সুলতানা

শিক্ষার্থী, কৃষিতত্ত্ব বিভাগ, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads