চিনি বিক্রি না হওয়ায় নাটোরের লালপুর উপজেলার নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস লিমিটেড চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানটির কাছে শুধু কৃষকের পাওনা এখন প্রায় ১৫ কোটি টাকা। দেশের সর্ববৃহৎ এ চিনিকলটিকে সচল ও টিকিয়ে রাখতে খুব দ্রুত চিনিকলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ডিস্টিলারী, র সুগারসহ অন্যান্য লাভজনক কারখানার প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং চিনি আমদানির ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চিনিকলের বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন এ চিনিকলে ১ হাজার ৭০০ মেট্রিকটন আখ মাড়াই করা হয়। এর মধ্যে ৩০০ মেট্রিকটন আখ চিনিকলটির নিজস্ব খামারের বাকি ১ হাজার ৪০০ মেট্রিকটন আখ চিনিকলটি আখচাষীদের কাছ থেকে কেনা হয়। আর প্রতিদিনের কেনা আখের দাম ৪৯ লাখ টাকা। বর্তমানে আখচাষীরা প্রায় ১ মাস ধরে তাদের আখ বিক্রির টাকা পাননি। এর পরিমাণ ১৪ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা। এর আগে মিলটি এমন আর্থিক সংকটে পড়েনি বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা।
সালামপুর গ্রামের আখচাষী আমজাদ হোসেন জানান, ২৭ দিন আগে আমি মিলে আখ বিক্রয় করলেও আজ পর্যন্ত আমি আখের টাকা পাইনি।
কেশবপুর গ্রামের ইনতাজ আলী,মধুবাড়ী গ্রামের মকবুল হোসেনসহ একাধিক কৃষক জানান, তারও প্রায় এক মাস আগে মিলে আখ বিক্রি করেছেন কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা আখের টাকা পাননি। আখের টাকা না পাওয়ায় তারা ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খরচ, শ্রমিকের মুজুরী,আখ পরিবহনের গাড়ির ভাড়াসহ নিজেদের প্রয়োজনীয় কাজ সঠিক সময়ে করতে পারছেন না।
লালপুরের আখচাষী ইনছার আলী, গৌরীপুরের সাবের আলী, কদিমচিলানের জাহাঙ্গীর আলমসহ একাধিক আখচাষীরা জানান, বর্তমানে মোবাইল ব্যাংক শিওর ক্যাশের মাধ্যমে আখের মূল্য পরিশোধ করায় টাকা উত্তোলন সহজ হলেও কর্তৃপক্ষের টাকা পরিশোধে বিলম্বের কারণে আখচাষীরা বিড়ম্বনায় পড়ছে।
তারা আরো জানায়, আখের টাকা প্রতিদিন পরিশোধের ক্ষেত্রে বর্তমানের পদ্ধতি ভালো, কিন্তু পরিশোধে দেরী হলে বর্তমান পদ্ধতিটি খুব কাজে আসে না। আগে মিলে আখের মূল্য পরিশোধে দেরী হলে প্রয়োজনে কমিশনে দিয়ে বিল ভাঙ্গানো যেত কিন্তু এখন তাও সম্ভব হচ্ছে না।
কৃষকের আখের দাম পরিশোধের ব্যাপারে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল জানান, দেশে উৎপাদিত আখের চিনির গুণগত মান অন্যান্য চিনির চাইতে ভালো এবং স্বাস্থ্য সম্মত। মিলে উপাদিত চিনির চাহিদা আছে তবে আমদানি করা সাদা চিনির দাম কম হওয়ায় আমাদের চিনি বিক্রি কম হচ্ছে। এসব কারণে কৃষকদের সময়মত আখের মূল্য পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এ সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।