• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
ই-কমার্স সেক্টরের উন্নয়নে অপরিহার্য বিগ ডাটা : মিজানুর রহমান সিনহা

সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং অগ্রজ আইটি লিমিটেডের আইসিটি কনসালটেন্ট মিজানুর রহমান সিনহা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

তথ্যপ্রযুক্তি

ই-কমার্স সেক্টরের উন্নয়নে অপরিহার্য বিগ ডাটা : মিজানুর রহমান সিনহা

  • এম রেজাউল করিম
  • প্রকাশিত ২৩ জুন ২০১৮

প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কারণে প্রতিদিনই অনলাইনে বেড়ে চলেছে নানা ধরনের তথ্যের আদান-প্রদান। একই সঙ্গে বাড়ছে ডাটা সাইজ। ধীরে ধীরে এই ডাটা ছাড়িয়ে যাচ্ছে আমাদের নির্দিষ্ট ধারণক্ষমতা, যাকে প্রযুক্তিবিদরা বলছেন বিগ ডাটা। এসব ডাটা নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে আসতে পারে যুগান্তকারী সমাধান। মানুষের জীবন হয়ে উঠতে পারে আরো অর্থবহ। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যেও আরো লাভবান হওয়া সম্ভব এই বিগ ডাটা ব্যবহার করে। আর এই বিগ ডাটা নিয়ে গবেষণা করছেন সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং অগ্রজ আইটি লিমিটেডের আইসিটি কনসালটেন্ট মিজানুর রহমান সিনহা।

তিনি ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে ড. মোহাম্মদ কামাল হাসানের তত্ত্বাবধানে কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডি করছেন। এখানে তার মেজর হচ্ছে বিগ ডাটা ও আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস)। শুক্রবার বাংলাদেশের খবরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, বিগ ডাটা নিয়ে তার গবেষণার অগ্রগতি, এর সম্ভাবনা, বর্তমানে এই খাতে চাকরির সুযোগসহ বিষদ বিস্তারিত। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম রেজাউল করিম।

বাংলাদেশের খবর : বিগ ডাটা সম্পর্কে জানতে চাই।

মিজানুর রহমান সিনহা : যেসব ডাটাকে ট্র্যাডিশনাল অ্যাপ্লিকেশন দিয়ে প্রসেস করা সম্ভব নয় সাধারণত সেগুলোকে বিগ ডাটা বলা হয়। যেমন ১০০ জিবি ডাটা কিন্তু অনেক বেশি ডাটা এবং এই ডাটাকে আমরা বিগ ডাটা বলতে পারি । কারণ, এই ১০০ জিবি ডাটাকে সাধারণত যেকোনো নরমাল মেশিন প্রসেস করতে পারবে না। ধরুন আপনার কম্পিউটারে মেমোরি ৮০ জিবি, কিন্তু আপনার ১০০ জিবি ডাটা রাখতে হবে যা আপনার বর্তমান ধারণক্ষমতার বাইরে, এটি হচ্ছে আপনার জন্য বিগ ডাটা। আর এজন্য পৃথিবীতে প্রতিদিন ২.৫ বিলিয়ন জিবিরও বেশি ডাটা তৈরি হচ্ছে। তাই বলা যায় যত দিন যাবে ডাটার পরিমাণ ততই বাড়তে থাকবে।

বাংলাদেশের খবর : এই বিগ ডাটার বৈশিষ্ট্যগুলো জানান।

মিজানুর রহমান সিনহা : পরিমাণ (Volume) অনেক বড় ডাটা সেট (Amount of Data), যেমন- ফেসবুকের ডাটার সাইজ অনেক বড়, এ ছাড়া টুইটার, শেয়ার মার্কেট ইতাদি, যেখানে প্রতিদিন অনেক ডাটা তৈরি হচ্ছে। গতি (Velocity) কত দ্রুত ডাটাকে জেনারেট এবং প্রসেস করা যায় (Speed of data creation)। বিশেষ করে রিয়েল টাইমে এবং নির্দিষ্ট সময়ে যখন ডাটাকে প্রসেস করতে হয় তখন গতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বৈচিত্র্য (Variety)- বিভিন্ন সোর্স থেকে ডাটা জেনারেট হচ্ছে (Data types and sources) যেমন- অডিও, টেক্সট এবং ইমেজ ইত্যাদি। কারণ ডাটাগুলো স্ট্রাকচারড, সেমি স্ট্রাকচারড এবং আন স্ট্রাকচারড। এ ছাড়া আরো কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেমন ডাটার পরিবর্তনশীলতা (variability), ডাটা কতটুকু সঠিক অর্থাৎ ডাটার বিশ্বস্ততা (veracity), ভ্যালু এবং ভিজুয়ালাইজেশন।

বাংলাদেশের খবর : আপনি বিগ ডাটা নিয়ে কত দিন ধরে গবেষণা করছেন? কেন?

মিজানুর রহমান সিনহা : আমি বিগত বছরখানেক ধরে বিগ ডাটা ও ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) নিয়ে গবেষণা করছি। কারণ, সারা পৃথিবীতে প্রতিদিন প্রায় আড়াই বিলিয়ন জিবিরও বেশি ডাটা তৈরি হচ্ছে। তবে সেই অনুযায়ী তেমন অ্যাপ্লিকেশন তৈরি হচ্ছে না এই বিশাল ডাটাকে ম্যানেজ করার জন্য। বেশি ডাটা নিয়ে কাজ করলে সেটা ব্যবসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে, যা লাভজনক হতে পারে। তাহলে প্রশ্ন, এই ডাটা যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই হারে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি হচ্ছে? হচ্ছে না। এজন্যই বিগ ডাটা নিয়ে সারা বিশ্বে এত মাতামাতি, তাই ইন্ডাস্ট্রি এবং একাডেমিতে বিগ ডাটার ওপর কাজ করার প্রচুর সুযোগ রয়েছে। তাই বর্তমানে বিগ ডাটাকে গবেষণার হট টপিকই বলা চলে।

বাংলাদেশের খবর : আপনার গবেষণার কোনো ফলাফল কি হাতে পেয়েছেন?

মিজানুর রহমান সিনহা : এখনো যেহেতু গবেষণা চলছে, তাই সেভাবে কোনো ফলাফল নির্ধারণ করতে পারিনি। তবে গবেষণা করতে গিয়ে দেখেছি বিগ ডাটা প্রযুক্তি কীভাবে ইকমার্সে ব্যবহার করা যায়। আর এখন সেটা নিয়েই কাজ করছি।

বাংলাদেশের খবর : ই-কমার্সে বিগ ডাটা! আরেকটু বিস্তারিত বলা যাবে?

মিজানুর রহমান সিনহা : মানে আমি বলতে চেয়েছি ই-কমার্সে বিগ ডাটা অ্যানালাইসিস করে একজন গ্রাহককে রিয়েল টাইম অনেক সেবা দেওয়া যায়। যেমন, বর্তমানে আমরা যখন কোনো ই-কমার্স সাইটে যাই, তখন যেসব অফার দেখতে পাই তা সবার জন্য। কিন্তু বিগ ডাটা ব্যবহার করে শুধু একজন গ্রাহকের জন্যই নির্দিষ্ট প্যাকেজ তৈরি করা সম্ভব। যেমন, যখন কোনো গ্রাহক একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইটে ভিজিট করেন, তখনই তার পূর্বের পছন্দের ক্যাটাগরি, আর্থিক অবস্থা এবং পছন্দের ওপর তার চাহিদা অনুযায়ী রিয়েল টাইমেই নানা রকম প্যাকেজ তৈরি করে দেওয়া সম্ভব। এমনকি গ্রাহকের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে শপিংমলের সেলসম্যানের মতোই ই-কমার্স সাইটেও একজন রিয়েল টাইম অ্যাসিসট্যান্ট গ্রাহককে নানা ধরনের পণ্য সাজেস্ট করতে পারে। আমরা শুধু ফেসবুকের ডাটা অ্যানালাইসিস করেও যদি একজন গ্রাহকের চাহিদা নির্দিষ্ট করে তার চাহিদা অনুযায়ী কোনো প্যাকেজ তাকে অফার করতে পারি, প্রোডাক্টের অ্যাডগুলো পৌঁছানো যাবে। আর একজন গ্রাহক যখন কোনো সাইটে কিছু কিনতে গিয়ে এমন প্রিভিলাইজড পাবে এবং সময় বাঁচিয়ে দ্রুত কেনাকাটা সম্পন্ন করতে পারবে, তখন ই-কমার্স খাতে গ্রাহকদের আনাগোনাও বেড়ে যাবে। তথাপি ই-কমার্স সেক্টরের অনেক উন্নয়ন হবে বলেও আমি আশাবাদী।

এ ছাড়া আমাদের দেশের মেডিকেলগুলোও এখনো বিগ ডাটা নিয়ে কাজ করার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। কিন্তু যদি রোগীর পুরনো রেকর্ডগুলো নিয়ে বিগ ডাটা প্রযুক্তি দিয়ে আরো কম খরচে চিকিৎসা করা সম্ভব হবে। আর এ ধরনের যদি কোনো স্টার্ট-আপ বা প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান আসে, যারা স্বাস্থ্য খাতে বা মেডিকেলগুলোতে বিগ ডাটা প্রযুক্তি সেবা প্রদান করবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের চিকিৎসা খাত আরো উন্নত হবে।

বাংলাদেশের খবর : বাংলাদেশের বিগ ডাটা নিয়ে চাকরির বাজার কেমন?

মিজানুর রহমান সিনহা : বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিগ ডাটা নিয়ে চাকরির ক্ষেত্র মাত্র শুরু হয়েছে। আমাদের দেশে এখনো তেমন আকারে দক্ষ জনশক্তি গড়ে ওঠেনি। যার পেছনের অনেক বড় একটি কারণ হিসেবে আমি মনে করি, এই বিষয় নিয়ে আমাদের দেশে কোনো উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা না থাকা।

বাংলাদেশের খবর : এই সমস্যা থেকে কীভাবে পরিত্রাণ সম্ভব বলে আপনি মনে করেন?

মিজানুর রহমান সিনহা : এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিগ ডাটা ম্যানেজমেন্ট কোর্সকে সংযুক্ত করতে হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রফেশনাল প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। বিগ ডাটা নিয়ে গবেষণা করার মতো ল্যাব বা সংশ্লিষ্ট সুযোগ-সুবিধাগুলো নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশে বিগ ডাটা সার্ভিস নিয়ে কাজ করে তেমন সংখ্যক প্রতিষ্ঠান এখনো তৈরি হয়নি। তবে আমাদের অগ্রজ টেক ইতোমধ্যে এই সেবা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে এবং পাঁচ শিক্ষার্থীকে বিগ ডাটা অ্যানালিস্ট হিসেবে গড়ে তুলছে। একই সঙ্গে সরকারি খাত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যদি এই বিষয়ে গবেষণার লক্ষ্যে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়, তাহলে এই খাতে আমাদের অনেক বড় জনশক্তি তৈরি হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads