• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
ইন্টারনেট বিশ্ব দাপাচ্ছেন বাংলাদেশি কার্টুনিস্ট

তরুণ কার্টুনিস্ট মোরশেদ মিশু

ছবি : বাংলাদেশের খবর

তথ্যপ্রযুক্তি

ইন্টারনেট বিশ্ব দাপাচ্ছেন বাংলাদেশি কার্টুনিস্ট

  • এম. রেজাউল করিম
  • প্রকাশিত ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮

অনেক কষ্টের মধ্যেও যে সুখ খুঁজে পাওয়া সম্ভব অথবা বিধ্বংসী ছবিগুলোকে বদলে মন ছুঁয়ে যাওয়া কিছু ছবি তৈরি হতে পারে, তারই একটি নজির তৈরি করেছেন বাংলাদেশি কার্টুনিস্ট। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর কয়েকটি মর্মান্তিক ছবি নিয়ে যুদ্ধ-সংঘাতকে শান্তিতে রূপান্তর করে আঁকা কার্টুন ইন্টারনেটের মাধ্যমে এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিশ্ব। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ব্লগ, ওয়েবসাইটসহ বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত এবং প্রচারিত সংবাদেও উঠে এসেছে বাংলাদেশি এই কার্টুনিস্টের নাম।

বিশ্বের বিভিন্ন ব্লগ, ওয়েবসাইট কিংবা গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজ, ইনস্টাগ্রাম অথবা টুইটারের ফিডে দেখা যাচ্ছে এই কার্টুনিস্টের আঁকা ছবিগুলো। বিভিন্ন দেশের মানুষ সেগুলোকে শেয়ার করছেন তার নাম উল্লেখ করে। আর এই কার্টুনের মাধ্যমে সারা বিশ্বে পৌঁছে যাচ্ছে শান্তির বার্তা।

হয়তো মন আনচান করছে তার নাম জানতে অথবা ছবি দেখে ইন্টারনেটের এই জমানায় অনেকেই ইতোমধ্যে তার নাম জেনে গেছেন। তবুও বলছি ইন্টারনেটবিশ্ব কাঁপানো এই বাংলাদেশি কার্টুনিস্টের নাম মোরশেদ মিশু। তিনি ফান ম্যাগাজিন উন্মাদের সহ-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

গেল ফেব্রুয়ারিতে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধে আক্রান্ত মানুষগুলোর ছবি ফেসবুকে বেশি ছড়িয়ে পড়েছিল। কোনো কোনো ছবি এতই মর্মান্তিক ছিল যে দেখাও সহজ ছিল না। আর এমনসব ছবি নিয়েই মিশু এঁকেছিলেন তার শক্তিশালী কার্টুন সিরিজ ‘গ্লোবাল হ্যাপিনেস’। যেখানে তিনি তুলে ধরতে চেয়েছেন বিভিন্ন দেশের যুদ্ধে বা হানাহানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া মানুষগুলো দুঃখ-দুর্দশার দিনগুলো বদলে কীভাবে সুখী জীবনযাপন করতে পারত। তবে যা আজ শুধুই কল্পনা। 

নিজের এই কার্টুন সিরিজ নিয়ে মিশু বলেন, ঘটনাটা ২৫ ফেব্রুয়ারির। ছবিগুলো দেখার পর রাতে ঘুমাতেই পারিনি। তখন তিনি ভাবতে বসলেন, ‘এইসব ছবি দেখতে চাই না, তাহলে কী দেখতে চাই?’ উত্তর পেলেন, ‘দেখতে চাই হাসিমুখ।’ সেই চিন্তা থেকেই প্রথম ছবিটা আঁকা। আঁকা শেষে উন্মাদের নির্বাহী সম্পাদক অনিক খানকে জানালেন। তিনি সিরিজটার জন্য দুই লাইন ছড়া লিখে দিলেন আর একটা নামও- ‘দ্য গ্লোবাল হ্যাপিনেস চ্যালেঞ্জ’। আর ছড়াটি হলো ‘আমি শুধু আঁকতে জানি, কষ্টগুলো ঢাকতে জানি।’

কার্টুন সিরিজ নিয়ে মিশু বলেন, গ্লোবাল হ্যাপিনেস সিরিজের ছবিগুলোর প্রেক্ষাপট মোটেও কোনো একটা নির্দিষ্ট জায়গা নয়; বরং এর প্রেক্ষাপট যুদ্ধ বা হানাহানি এবং সাধারণ মানুষের ওপর এর প্রভাব। যেকোনো যুদ্ধের মূল ভিকটিম কিন্তু সাধারণ মানুষ। আমরা সাধারণ মানুষ কিন্তু হানাহানি চাই না। আমরা চাই সুখ-শান্তিতে থাকতে। আর সুখ বা শান্তি কিন্তু অর্থ-কড়ি কিংবা গোলাবারুদে নেই। সবুজ মাঠে কন্যাকে কোলে নিয়ে বাবার দৌড়ে বেড়ানো, বাবার বুকে ছেলের ঘুম, ভাইবোন মিলে একত্রে খেলা- চাঁদ দেখানো, খাঁচার পাখি উড়িয়ে দেওয়া, অলস বিকালে নদীতে মাছ ধরা, নতুন পড়তে শেখা, একটা শিশুর রূপকথার গল্পের বই পড়ে কল্পনার রাজ্যে হারানো কিংবা স্কুল-কলেজ ছাত্রদের ফুটবল খেলে কাপ জিতে ফেলা এমন সামান্য কিন্তু অদ্ভুত সুন্দর মুহূর্তগুলোর মধ্যেই হ্যাপিনেস বিরাজমান। আর এই ব্যাপারগুলো শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের সব জায়গায়ই একই রকম। আমার বিশ্বাস এই অনুভূূতিটি একটি বৈশ্বিক অনুভূতি।

এই সিরিজের এরই মধ্যে ১০টি ছবি এঁকেছেন মিশু। আঁকাআঁকির বিষয়ে এই কার্টুনিস্ট বলেন, দ্য গ্লোবাল হ্যাপিনেস চ্যালেঞ্জ সিরিজের প্রথম ছবিটা (সম্ভবত ইরাকের মসুল এলাকায় বম্বিংয়ের সময়) একজন বাবা তার বাচ্চাকে কোলে নিয়ে দৌড়াচ্ছেন। আমি সেই ছবিকে সুখের করে তুলতে চাইলাম। তাই সেটা বাবা-মেয়ের খেলার মুহূর্ত হিসেবে কার্টুনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ছবিটি আমার ফেসবুক পাতায় দেওয়ার পর অনেক সাড়া পেলাম। বিদেশি অনেক ফেসবুক পেজও ক্রেডিট দিয়ে, আবার না দিয়েও আপলোড করেছে ছবিটি।

এভাবে আমি এই সিরিজের ১০টি কার্টুন এঁকেছি। কারণ, আমি প্রতিবাদ করতে চাইনি, চেয়েছিলাম বিশ্ববিবেককে নাড়া দিতে, যা ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে বলে আমি ধারণা করছি।

ইতোমধ্যেই মিশুর এই কার্টুন সিরিজ আলজাজিরা, এজে প্লাস, সিএনএন এরাবিক, সিরিয়া টিভি, ইরান ওয়ার, ডেইলি জামেজাম, ডেইলি খোরাকান, ফুড পান্ডা, সারকাজমসহ পৃথিবীর ২১টি দেশের ৫৭টি ব্লগ, ওয়েবসাইট, নিউজপোর্টাল, সংবাদ পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে এই হ্যাপিনেস সিরিজ প্রচার করে।

এর মধ্যে কয়েকটি পত্রিকা, বিখ্যাত ফেসবুক পেজ ও টিভি মোরশেদ মিশুর মোবাইলে দেওয়া ভিডিও বার্তাও প্রচার করেছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads