প্রযুক্তিতে উন্নত এবং অনুন্নত সব দেশের একসঙ্গে কাজ করতে আহ্বান জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। গত সোমবার বাহরাইনের রাজধানী মানামায় অনুষ্ঠিত গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনারশিপ কংগ্রেস সম্মেলনের ‘স্টার্টআপ ন্যাশনস মিনিস্ট্রিয়াল’ শীর্ষক অধিবেশনে আলোচক হিসেবে অংশ নিয়ে এই আহ্বান জানান তিনি।
পলিসি সেশন আলোচনায় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী উদ্ভাবন পরিকল্পনা, উদ্যোক্তা একাডেমি প্রতিষ্ঠা, হাইটেক পার্ক প্রকল্প ও ইনোভেশন সেন্টার প্রকল্প স্থাপন, আইটি প্রশিক্ষণ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি, তরুণ প্রজন্মের সক্ষমতা অর্জন এবং তথ্যপ্রযুক্তি উন্নয়ন ও বিকাশে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন অর্জন ও কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন।
সেশনে প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির কোনো ভৌগোলিক সীমারেখা নেই। আগামী দিনের পরিবর্তিত ও আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলতে হলে উন্নত ও অনুন্নত দেশগুলোসহ সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
ডিজিটাল বিপ্লবে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রুতগতির ইন্টারনেটের যুগে প্রবেশ করেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠার জন্য ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা করেছেন। এই রূপকল্প বাস্তবায়নে চারটি মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করে এগিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
পলক বলেন, সবাইকে ইন্টারনেট সংযোগের আওতায় নিয়ে আসতে বিগত দশ বছরে সরকার অনেকগুলো উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছে। বিগত তিন বছরে সব সরকারি অফিসকে ইন্ট্রানেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে এবং বর্তমানে ইনফো সরকার-৩ ও কানেকটেড বাংলাদেশ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সারা দেশকে ইন্টারনেট সংযোগের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করা হচ্ছে।
‘থ্রি এ’ স্ট্র্যাটেজি রয়েছে ইন্টারনেটের জন্য। ইন্টারনেট যেহেতু ফুলফিলমেন্ট অব দ্য সোসাইটি হবে, তাই এটির অ্যাভেইলেবল, অ্যাফোর্ডেবিলিটি ও অ্যাওয়ারনেস নিয়ে কাজ করা হচ্ছে’- বলেন তিনি।
২০৩০ সালের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নারীর ৫০ শতাংশ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকারের ওয়াইফাই (উইমেন আইসিটি ফ্রন্টিয়ার ইনিশিয়েটিভ) প্রকল্প চালু রয়েছে।
প্যানেল আলোচনায় তিনি আরো উল্লেখ করেন, গ্রামের অনেকেই স্মার্টফোন ব্যবহার করে ইন্টারনেট পাচ্ছে। ইনফো সরকার-৩-এর মাধ্যমে দেশের ২ হাজার ৬০০ ইউনিয়নকে ফাইবার অপটিক ক্যাবল সংযোগের আওতায় আনা হচ্ছে। দেশের সব ডিজিটাল সেন্টারে (ইউডিসি) বিপিও সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। ইডিসিতে দুই লাখ ফিক্সড ব্রডব্যান্ড সংযোগ দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া লার্নিং-আর্নিং, শি পাওয়ার, এলআইসিটি, সারা দেশে ২৮টি হাইটেক পার্ক, হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের আওতায় প্রশিক্ষণ, আইডিয়া প্রকল্পের আওতায় স্টার্টআপ বাংলাদেশ ক্যাম্পেইন এবং এসব প্রকল্পের আওতায় অনেক তরুণ-তরুণীর প্রশিক্ষণ নিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরে দেশে তিন লাখ তরুণ-তরুণীকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করা হবে।
সম্মেলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ইতালি, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, নেপাল, সুদান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, আর্জেন্টিনা, বেনিন, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, এস্তোনিয়া, গ্রানা, হাঙ্গেরিসহ বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, উচ্চ পর্যায়ের সরকারি ও বেসরকরি প্রতিনিধিরা অংশ নেন।