• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
জনশক্তি রপ্তানি কমলেও প্রবাসী আয়ে রেকর্ড

ছবি : সংগৃহীত

শ্রমশক্তি

জনশক্তি রপ্তানি কমলেও প্রবাসী আয়ে রেকর্ড

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ২৭ জুন ২০১৯

চলতি অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে নতুন রেকর্ড হচ্ছে। এরই মধ্যে বিগত যে কোনো অর্থবছরের তুলনায় বেশি প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। তবে তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রবাসী আয়ে রেকর্ড হলেও জনশক্তি রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে কমছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামীতে প্রবাসী আয়ও কমতে শুরু করবে। 

সরকারি হিসাব বলছে, ২০১৮ সালে অভিবাসী কর্মীর সংখ্যা ছিল ৭ লাখ ৩৪ হাজার ১৮১ জন। এর মধ্যে অভিবাসী নারী কর্মীর সংখ্যা ১ লাখ ১ হাজার ৬৯৫ জন। ২০১৮ সালে প্রাপ্ত রেমিট্যান্স ছিল ১৫ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অবশ্য ২০১৮-১৯ অর্থবছরের হিসাবে প্রবাসী আয় এরই মাঝে ১৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। মোট শ্রমশক্তিতে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের অবদান ১২ শতাংশ। মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপি’র অংশ হিসেবে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ।কিন্তু ২০১৭ সালে জনশক্তি রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭৩১ জন। কিন্তু ২০১৯ সালের মে মাস শেষে জনশক্তি রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার ৭৭১ জন। অর্থাৎ পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে বলা যায়, চলতি বছর জনশক্তি রপ্তানির পরিমাণ ৭ লাখের নিচে নেমে আসবে। এটি বাড়তে পারে কেবল সরকার যদি কার্যকর ও সঠিক পদক্ষেপ নেয় জনশক্তি রপ্তানি বাড়াতে। অবশ্য সরকার ১৪টি দেশের সঙ্গে শ্রম অভিবাসন বিষয়ে সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি সই করেছে। বর্তমানে বিদেশে রয়েছেন ১ কোটি ২৪ লাখ ২৫ হাজার ৮৯৫ জন নাগরিক। স্বাধীনতার পর দেশে এসেছে ১৪ লাখ ১৪ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা, যা বর্তমান সরকারের ঘোষিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রায় আড়াইগুণ।

এদিকে বৈধ পথে প্রবাসী আয় দেশে আসতে আগামী অর্থবছর থেকে নগদ প্রণোদনা দেওয়া হবে। দুই শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দেওয়া হবে। এজন্য বাজেটে অর্থ বরাদ্দ রেখেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।  জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো-বিএমইটির হিসাবমতে, বিদেশে বাংলাদেশি নাগরিকের প্রতি ৪ জনের তিনজন কাজ করছেন ৫টি দেশে। দেশগুলো হলো- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার ও মালয়েশিয়া। প্রবাসী আয়ের সিংহভাগও আসে এই কয়েকটি দেশ থেকে। তবে মালয়েশিয়ায় শ্রম বাজার নিয়ে সংকট চলছে। বর্তমানে দেশটিতে মোট ৯ লাখ ৯০ হাজার ১৪৬ জন বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছেন। যাদের একটি অংশ অবশ্য অবৈধভাবে দেশটিতে বসবাস করছেন। সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় সংগ্রহকারী ১০টি দেশের মধ্যে এর অবস্থান চতুর্থ।

সরকারের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মোট জনশক্তির সর্বোচ্চ ২৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক কাজ করছেন সৌদি আরবে। দেশটিতে ৩৫ লাখ ২৪ হাজার ১৭১ জন বাংলাদেশি বৈধভাবে কাজ করছেন। অর্থাৎ মোট প্রবাসী নাগরিকের এক-তৃতীয়াংশ এই দেশটিতে। তবে সম্প্রতি দেশটিতে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে যাওয়া বাংলাদেশি নারীরা ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নির্যাতন ও যৌন হয়রানির শিকার হয়ে দেশটি থেকে নারী শ্রমিকরা ফেরত আসছেন প্রতিনিয়ত।

টিআইবি বলছে, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মী নিয়োগ বন্ধের সিদ্ধান্তের সংবাদে আমরা একদিকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, অন্যদিকে জনশক্তি রপ্তানিতে একচেটিয়া ও সিন্ডিকেটভিত্তিক অনৈতিক ব্যবসা বন্ধে মালয়েশিয়া সরকারের এ সিদ্ধান্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখার জন্য সরকারের নিকট আহ্বান জানাই। কারণ এর মাধ্যমে মালয়েশিয়া সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ইতিবাচক ও অংশগ্রহণমূলক আলোচনার মাধ্যমে পুনরায় অভিবাসী কর্মী পাঠানোর সুষম সুযোগ তৈরির পথ সুগম হয়েছে। তবে এটাও পরিষ্কার যে, এ সুযোগ গ্রহণের পূর্বশর্ত হচ্ছে পুরো খাতকে সিন্ডিকেটের প্রভাবমুক্ত করা এবং যারা অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা।

অভিবাসনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০১৭ সালে রেকর্ডসংখ্যক জনশক্তি রপ্তানি হয়েছিল। মূলত এর প্রভাবে বেড়েছে প্রবাসী আয়। এর পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে টাকা দুর্বল হওয়ায় এবং হুন্ডি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ায় প্রবাসী আয় বেড়েছে। আগের বছরগুলোর মতো গত বছরও নতুন কোনো শ্রমবাজার উন্মোচিত হয়নি। ২০১৮ সালে নারী শ্রমিকদের বিদেশ যাওয়ার হার গত বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ কমেছে। গত বছর আট শতাধিক নারীশ্রমিক নির্যাতিত হয়ে দেশে ফিরেছেন।

বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে জনশক্তি রপ্তানি হয়েছিল ১০ লাখ ৮ হাজার ৫২৫ জন। সেই হিসাবে ২০১৭ সালের তুলনায় প্রায় ২৭ দশমিক ২০ শতাংশ জনশক্তি রপ্তানি কমেছে।

২০১৮ সালে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির প্রায় ৬৩ শতাংশ হয়েছে উপসাগরীয় এবং অন্যান্য আরব দেশে। বাকি ৩৭ শতাংশের বেশির ভাগ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক কর্মী গেছেন সৌদি আরবে। এরপর মালয়েশিয়া, কাতার, ওমান ও সিঙ্গাপুরে।

তবে গত বছরের নভেম্বরে সৌদি আরব সরকার ‘সৌদিকরণ কর্মসূচির (প্রতি কারখানায় ২০ শতাংশ সৌদি নাগরিক থাকা বাধ্যতামূলক)’ শুরু করেছে। এর মাধ্যমে প্রবাসীদের জন্য ১২ ধরনের চাকরি বন্ধ ঘোষণা করেছে সৌদি সরকার। এতে সে দেশের শ্রমবাজার আস্তে আস্তে বাংলাদেশিদের জন্য সংকুচিত হয়ে আসছে। ইতোমধ্যে এসব কাজে জড়িত বাংলাদেশিরা দেশে ফিরতে শুরু করেছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads