• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

আইন-আদালত

আইনের আওতায় আনা হচ্ছে ৯৯৯ অপব্যবহারকারীদের

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ০১ মার্চ ২০১৯

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯’র ‘কল টেকার’দের উত্ত্যক্তকারী, মিথ্যা তথ্য প্রদানকারী ও ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে এই নম্বর ব্যবহারের অপচেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে পুলিশ। পুলিশ ইতোমধ্যে শতাধিক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছে, যারা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছে এবং নারী কল টেকারদের সঙ্গে কথা বলার সময় তাদের প্রেমালাপ ও বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। এদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা দিয়ে গ্রেফতার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।

সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর চালু হয় ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস কল সেন্টার-৯৯৯। অল্প সময়ে এটি সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। এ জরুরি  সেবা কাজে লাগিয়ে সম্পদ ও মানুষের জীবন রক্ষা এবং অনেক অপরাধ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে।

গত দুই বছরে কয়েক লাখ মানুষ-৯৯৯-এ কল করে জরুরি সহায়তা নিয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেও কতিপয় বখাটে ও উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি অযথা কল করে নারী কল টেকারদের উত্ত্যক্ত করে। নারী কল টেকারদের বিনয়সূচক ‘স্লামুআলাইকুম স্যার, জাতীয় জরুরি সেবা থেকে বলছি, আমি আপনার জন্য কী করতে পারি’- এর জবাবে বখাটেরা কেউ কেউ বলেছে, ‘আপনার কণ্ঠস্বর খুব ভালো, আমার ভালো লেগেছে’। আবার কেউ বলেছে, ‘মিষ্টি কণ্ঠের কোকিলা তরুণী, আমি তোমাকে ভালোবাসি, বিয়ে করতে চাই।’ এ রকম অসংখ্য উটকো ঘটনায় বিব্রত এবং বিরক্ত পুলিশের নারী কল টেকাররা।

এ ছাড়া সম্প্রতি ময়মনসিংহে পাশের বাড়ির শত শত  কলাগাছ কেটে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এরপর নিজেদের ২-৪টি কলাগাছ কেটে ৯৯৯-এ ফোন করে সহায়তা চায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে উল্টো চিত্র দেখতে পায়। বিষয়টি তারা পুলিশ সদর দফতরকে জানায়। পুলিশ সদর দফতর উত্ত্যক্তকারী ও মিথ্যা তথ্য প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে।

অথচ জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে ফোন করার জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

নির্দেশনা অনুযায়ী জরুরি পুলিশি সেবার ক্ষেত্রে ৯৯৯ অপারেটর সেবাপ্রত্যাশীকে নিকটস্থ থানার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেবেন। একই সঙ্গে সেবাপ্রত্যাশীও থানাকে তার অভিযোগটি জানাতে পারবেন। যেহেতু রেফারেন্সের জন্য ৯৯৯-এ কল রেকর্ড করা হয়ে থাকে, তাই পুলিশের সঙ্গে কথা বলার জন্য সঠিক তথ্য দিতে হবে। কেউ শত্রুতাবশত কাউকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে ৯৯৯-এ ফোন করলে তার  বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা  নেওয়া হবে। পুলিশি সহায়তার  ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ই নিকটস্থ থানায় গিয়ে অভিযোগ করতে হবে। কারণ লিখিত অভিযোগ ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ তদন্ত শুরু করতে পারে না। ৯৯৯-এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট থানার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগকারীর করণীয় সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।

কেউ যদি কোনো অপরাধ ঘটতে দেখেন তাহলে দ্রুত নিরাপদ স্থানে পৌঁছে ৯৯৯-এ কল করতে হবে। অপরাধীকে চিনে থাকলে তা জানাতে হবে এবং কাউকে সন্দেহ হলে সেটিও জানাতে হবে। অপরাধীর হাতে অস্ত্র ছিল কি না, জানাতে হবে। অপরাধী দেখতে কেমন? তার ধর্ম, আনুমানিক বয়স, উচ্চতা, ওজন, কাপড়ের রঙ প্রভৃতি তথ্য দিতে হবে। অপরাধীর অবস্থান, তারা পালিয়েছে কি না, কোন দিকে গেছে, তাদের সঙ্গে কোনো যানবাহন ছিল কি না, থাকলে তার ধরন ও প্রকৃতি এমনকি গাড়ির নম্বরের অংশবিশেষ প্রভৃতি তথ্য দিতে হবে।

আপনি যদি কোনো মোবাইল ফোন থেকে কল করে থাকেন তাহলে আপনার নম্বরটি কল করার পর খোলা রাখতে হবে, যাতে অপারেটর যেকোনো মুহূর্তে আপনার সঙ্গে পুনরায়  যোগাযোগ করতে পারেন। এর বাইরে আপনার চাহিদা অনুযায়ী পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস বা অ্যাম্বুলেন্স কর্তৃপক্ষও আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

এদিকে প্রতিদিন প্রচুর শিশু বিনা কারণে ৯৯৯-এ ফোন করে থাকে। ফলে প্রকৃত বিপদগ্রস্তরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। সময় ও সুযোগ করে সস্তানদের শেখাতে কীভাবে এবং কখন ৯৯৯-এ ফোন করতে হবে।

এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দফতরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি (স্পেশাল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কনফিডেন্সিয়াল) মো. মনিরুজ্জামান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশ পুলিশ এখন অনেকটাই এগিয়ে গেছে। পুলিশের সেবা জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছানোর অংশ হিসেবেই এটা চালু করেছে সরকার। কিন্তু কিছু শিশু, বখাটে, উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি এবং কেউ কেউ নিজের শত্রুতা চরিতার্থ করতে প্রতিপক্ষকে অহেতুক হয়রানি করার মানসে ৯৯৯ ব্যবহার করে। ইতোমধ্যে আমরা শতাধিক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছি। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা আরো বলেন, কিছু বিকৃত মানসিকতার মানুষের জন্য আমরা ৯৯৯-র  মতো একটি মহতী উদ্যোগকে ব্যর্থ হতে দেব না। দুষ্কৃতকারী বা এর অপব্যবহারের চেষ্টাকারী যারাই হোক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads