• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

আইন-আদালত

যুবলীগ নেতা খালেদের বিরুদ্ধে ৩ মামলা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

রাজধানীতে অবৈধ ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাব-৩-এর ওয়ারেন্ট অফিসার গোলাম মোস্তফা বাদী হয়ে গুলশান থানায় অস্ত্র, মাদক ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এই তিনটি মামলা দায়ের করেন। গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সুদীপ চক্রবর্তী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

সুদীপ চক্রবর্তী জানান, বুধবার রাতে গুলশানে অভিযান চালিয়ে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে আটক করে র্যাব। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে থানায় হাজির করা হয়। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে আলাদা তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

গুলশান বিভাগের ডিসি আরো জানান, বুধবার খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে একটি শটগান, দুটি পিস্তল, শটগানের ৫৭ রাউন্ড গুলি ও ৭.৬৫ এমএমের ৫৩ রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়। এছাড়া ৫৮৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও ১০ লাখেরও বেশি দেশি নগদ টাকা ও সাত লাখের বেশি বিভিন্ন দেশের মুদ্রা জব্দ করা হয়। তিনটি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের মেয়াদ ২০১৭ সালে শেষ হয়ে গেছে বলেও তিনি জানান।

সুদীপ চক্রবর্তী বলেন, আমরা অস্ত্র ও মাদক আইনে দায়ের করা দুটি মামলায় খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে সাত দিন করে রিমান্ডের আবেদন চেয়ে আদালতে পাঠিয়েছি। আর মানিলন্ডারিং আইনে করা মামলাটি শিডিউল অনুযায়ী পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তদন্ত করবে। তাদের কাছে ওই মামলার কাগজপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। রিমান্ডে এনে তাকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

আসামিকে আটকের পর আদালত পাঠাতে দীর্ঘ সময় লাগার কারণ সম্পর্কে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, আসামির বিরুদ্ধে তিনটি আলাদা মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাই মামলার তথ্য, উপাত্ত ও আইনের ধারাসহ সবকিছু বিবেচনা করে এজাহার লিখতে সময় লেগেছে। তাই আসামিকে আদালতে হাজির করতে দেরি হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

গুলশান থানার পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম বলেন, অস্ত্র ও মাদকের পৃথক দুই মামলায় তার সাত দিন করে ১৪ দিনের রিমান্ড চেয়ে আমরা আদালতে আবেদন করেছি। গুলশান থানায় দায়ের হওয়া মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আদালতে এ আবেদন করা হয়। ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম মাহমুদার আদালতে এ রিমান্ড শুনানি হবে।

র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম বলেন, আটক খালেদকে র্যাব-৩ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করা হয়।

তিনি বলেন, ক্যাসিনো ও মাদক ব্যবসা নিয়ে আটক খালেদকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। 

দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, রাতভর জিজ্ঞাসাবাদে মতিঝিলের ক্যাসিনো পরিচালনার বিষয়টি মতিঝিল থানা পুলিশ, মতিঝিল জোন, পুলিশ সদর দপ্তর ও ডিএমপি সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা জানতেন বলে দাবি করেন খালেদ। তবে পুলিশের সঙ্গে ক্যাসিনো পরিচালনার জন্য কোনো আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলেননি তিনি।

সূত্র জানায়, খালেদের ক্যাসিনোর বিষয়ে পুলিশ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সংস্থা এবং রাজনীতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জানতেন। তাদের ‘ম্যানেজ করে’ ক্যাসিনো চালাতেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন তিনি।

র্যাব সূত্র জানিয়েছে, ক্যাসিনোর এই টাকার ভাগ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও চলে যেত। যেসব সন্ত্রাসী দেশের বাইরে থাকেন তারাই মূলত এই ভাগ পেত।

র্যাবের কাছে খালেদ জানিয়েছেন, মগবাজার টিঅ্যান্ডটি কলোনির সন্ত্রাসী নাজির আরমান নাদিম ও শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের হয়ে ঢাকায় কাজ করেন খালেদ। চাঁদাবাজি ও ক্যাসিনোর টাকা ওমানের মাসকটে থাকা সন্ত্রাসী নাদিমের কাছে পাঠান খালেদ। সেখান থেকে জিসানও ভাগ পান টাকার। শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান বর্তমানে ভারতের পাসপোর্ট দিয়ে জার্মানিতে স্থায়ী হয়েছেন। জিসানের দুবাইয়ের দেরাতে চারটি গোল্ডের দোকান আর আল ফজিরা সিটি জায়েদ শেখ মার্কেটে রয়েছে নাইট ক্লাব। এসব ব্যবসায় চট্টগ্রামের অনেক ব্যবসায়ীর শেয়ার রয়েছে। সেই সুবাদে জিসান জার্মানি থেকে দুবাইয়ে আসা-যাওয়া করেন। ঢাকায় জিসানের যেখানে যেখানে আধিপত্য ছিল তার সবই নিয়ন্ত্রণ করতেন খালেদ।

র‍্যাব জানায়, বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত ঢাকার মোট চারটি ক্যাসিনোতে একযোগে অভিযান চালানো হয়। এতে গ্রেপ্তার হয় ২০১ জন। এর মধ্যে মতিঝিলের ইয়ংমেনস ক্লাব থেকে ২৪ লাখ ২৯ হাজার নগদ টাকাসহ ১৪২ জনকে আটক করা হয়। বনানীর আহম্মেদ টাওয়ারে অবস্থিত গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ নামক ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র‍্যাব। কাউকে না পেয়ে ক্যাসিনোটি সিলগালা করা হয়।

র‍্যাব আরো জানায়, মতিঝিলের ঢাকা ওয়ান্ডার্স ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ১০ লাখ ২৭ হাজার টাকা, ২০ হাজার ৫০০ জাল টাকাসহ ক্যাসিনোটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্লাবে চার লাখ ৯৮ হাজার ৬০০ টাকাসহ ক্যাসিনো পরিচালনা ও খেলার অভিযোগে মোট ৪০ জনকে আটক করা হয়। এছাড়া এ অভিযানে বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেপ্তার মোট ২০১ জনের মধ্যে ৩১ জনকে ১ বছর করে এবং বাকিদের ছয় মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছেন র‍্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট।

এদিকে বৃহস্পতিবার মতিঝিল থানার পাশেই ইয়ংমেনস ক্লাবের ক্যাসিনোতে অভিযানের পর থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ সব জেনেও কেন চুপ করে ছিল, কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, সে বিষয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার তারা ঢাকার ক্যাসিনো গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

সকালে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, রাজধানীতে অবৈধ জুয়ার আড্ডা, ক্যাসিনো চলতে দেওয়া হবে না। এসব জুয়ার বোর্ড, ক্যাসিনো পরিচালনা ক্ষেত্রে যত প্রভাবশালীরাই জড়িত থাকুক না কেন, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশ কঠোর হবে। র‍্যাব অভিযান শুরু করেছে পুলিশও করবে। ইতোমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার জুয়ার বোর্ড ও ক্যাসিনোর তালিকা করা শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, আমি এই সপ্তাহেই কমিশনার হিসেবে কাজ শুরু করেছি। যারা এই বিষয় দেখেন তাদের নির্দেশ দিয়েছি, কোথায় কী হচ্ছে, কারা পরিচালনা করছে তা তালিকা করে জানাতে। তারা কাজ করছেন। ইতোমধ্যে একটি জোনের তালিকা আমি পেয়েছি। অন্য জোনের তালিকাও করা হচ্ছে। র‍্যাব যেমন অভিযান শুরু করেছে তেমনি পুলিশের ভূমিকাও একই রকম। স্পষ্ট করে বলছি, রাজধানীর কোথাও জুয়ার বোর্ড কিংবা ক্যাসিনো চলতে দেওয়া হবে না।

কমিশনারের এই ঘোষণার পর থেকেই ঢাকার বিভিন্ন জোনে অভিযানের প্রস্তুতি নিয়েছেন থানা পুলিশের সদস্যরা। সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা বা রাতে এই অভিযান শুরু হবে। তবে অভিযানকে কেন্দ্র করে কেউ যাতে ক্যাসিনোর মালামাল সরিয়ে অন্যত্র চলে যেতে না পারে সে বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে। অভিযানের বিষয়ে আগাম কোনো কথা বলতে রাজি হননি র‍্যাব-পুলিশের সদস্যরা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads