• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

সাহিত্য

শরতের কবিতা

  • প্রকাশিত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

শরতের কুহকে

শিহাব সরকার

 

অরণ্যানি ছড়িয়ে যায় চাঁদের ধূলি

পরীরা পাহাড়ে নেমে পাশা খেলে মধ্যরাতে

আজ কোনো জাদুটোনা, ডাইনিরা নেই,

বাতাসে মাদল শিঙাবাঁশি আনন্দঘণ্টা

 

অজানা বনবিহারের এই তো সময়।

 

বনের ভিতরে বিজন যোগী-সন্ন্যাসীরা

শরতের জলসায় জমেছে জ্যোৎস্নাসম্ভোগ

রাত্রিভর মহুয়ার বন্যায় যৌবন মত্ত

যোগীরা যোগীর আসনে, ধ্যান ভাঙিবে না?

 

শরতের কুহকে আমার ফাঁস লেগেছে

শহর থেকে এসে ঝর্ণাজলে মুছেছি ঝুলকালি

 

ও মা, দুইদিকে টানিছে আনন্দপরমা!

 

হে ভাদ্র হে আশ্বিন

মামুন মুস্তাফা

শরতের আকাশ হাসানো কাশ কাশ শুভ্রতা নিয়ে কে

মেলে দিয়েছিলো জ্যোৎস্নাহত মেঘের শাড়ি?

অথচ শারদ সকালে চোখ খুলে দেখি তোমার

নিশিঘন কালো চুলে শরতের শিশির বিন্দু বিন্দু

জলে পরাহত পুরুষের তৃষ্ণা মেটায়।

 

            হে ভাদ্র হে আশ্বিন

শরতের শাদা মেঘ বাষ্পীভূত হয়ে যায় এই

ভাটি বাংলায়;— গাঁদাফুলবনে রমণী ও রমণে

কেবলি ধূলি ও মেঘের মৃত্যু উদ্যাপিত হলো!

মানবীর কাঁচুলি খোলার রাত ঘন হলো না কিছুতেই।

 

এই ভাদ্রে শরতের আকাশ দেখি না কোনো

কেবল ভাদুরে দিবস...মাটির গহীন ক্রন্দন...

তবুও শরতের বিদায় পথে লক্ষ করি ঝরে

পড়া শিউলি ফুলে দয়িতার সজল মুখ।

 

 

হায় রে শরৎ!

শিবলী মোকতাদির

হে আমার সর্ব বকুল

নিমজ্জিত বৈঠার ভয়ানক ছায়া

আমাকে জ্ঞান করো।

আঙরা ও আতরের লোভে,

যদি আমি দুই কূলে ভেসে উঠি ফের

জেনো তুমি-এই ভুল অন্বেষণে,

আছি আমি নিজস্ব ধ্যান আর ধারণায় গঠিত হয়ে

তোমার ঘুমের মধ্যে

ভাসা-ভাসা হায় রে শরৎ!

হায় রে মোটা-মোটা বর্ষালি ভয়

আমারে মান্য করা

সেই হেতু ততটা বাধ্যতামূলক নয়!

 

শরৎ বন্দনা

আনোয়ার কামাল

বিলে ফুটেছে শাপলা, ঝিলের কচুরিপানায় ঘর বেঁধেছে ডুবুরি পানকৌড়ি

ডুবসাঁতারে পটু পানকৌড়ি ছানাদের নিয়ে ডুব দেয় আবার ভেসে ওঠে

শরতের মেঘের কোণে জমে থাকে বিন্দু বিন্দু বেদনার জলকণা;

মেঘেরা দুঃখকে ভুলে যেতে ছেড়ে দেয় হূদয়ে জমিয়ে রাখা ক’ ফোঁটা জল।

 

ঝিরঝিরে হাওয়া গা শিনশিনে আবেশে উদাসী মনে নীলাকাশে

সাদা বকের হাতছানি, মন চলে যায় শরতের উঠোনে।

 

 

 

শরৎপত্র

মনিরুজ্জামান মিন্টু

আজ সব কাশফুল মেঘের অলংকারে সেজে বিকেলের কাছে সোনালি রোদ রেখে যায় চলে... যে আলোয় পত্রবাহক পথ চিনে যাবে তোমার কাছে... সে আলোর আয়ু থেকে তোমার ঠিকানা আজ বহুদূরে... রাত্রি নেমে এলে জোনাকিরা যাবে ডাকহরকরা আর পত্রের প্রিয় সহচর সেজে... তবুও পত্র যাবে ঠিকানাবিহীন শূন্যের অজানা ঘোরে...

 

পাখির পালকে ভর করে...

আকাশের রৈখিক নীল দেখে...

জলের প্রতিমা ঘেঁষে...

পত্রবাহকের হাতে হাত ঘুরে ভেজা বরষায়...

 

ও পরবাসী মেঘ... এই শ্রাবণ ধারায়...

ভেসে যায় মনোহর দৃশ্যাবলি...

আমার অলিখিত প্রেম...

 

 

শারদদৃশ্য

অনু ইসলাম

 

শারদবেলায় রৌদ্ররথে যাত্রা ছিল পীতবর্ণের কার্পেটে হেঁটে হেঁটে

মনোবৈঠা আজও তা অন্বেষণ করে হলুদডোবা সন্ধ্যাবেলায়

আকাশপরিধি বেয়ে ছেঁয়ে গেছে আগুনকুসুম রঙ; জলআয়নায়—

ভেসে উঠছে কুসুম রঙের আগুন!

 

প্রান্তবেলায় দাঁড়িয়ে কেউ বলবে না আবার তবে পরিচর্যা হোক

নতুনের;- জয়ের ভেতর এতটা দুর্বার পরাজয় থমকে যাক

সুন্দর, তুমি তো লুকিয়ে থাকো নিজেরই আড়ালে ডুমুরেফুল হয়ে—

তাই বলছি, এখন ভাঙার সাহস চাই; বেরিয়ে এসো-

শাদা অন্ধকার ঘেঁষা শুভ্রফুলের প্রকরণ ভেঙে সবুজ উঠোনে

 

রঙপেন্সিলে আঁকা শারদদৃশ্য বাস্তবিক ফুটে উঠুক ক্যানভাস জুড়ে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads