• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

সাহিত্য

মানুষপাঠ

  • সালেহ বায়েজীদ
  • প্রকাশিত ২৪ নভেম্বর ২০১৮

দু’পায়ের ওপর অদ্ভুতভাবে ভর করে যে কতটা বছরের পর বছর তেল ছাড়া চলে তাকে সাঁইজি কী নাম দিয়েছিল জানি না। পূর্ণিমার রাতে সম্পূর্ণ নিজেকে মুক্ত করে যে যন্ত্রটা ভাবতে চায়, এটা রাত নয় দিনের আস্ফাালন। তারপরও সময় থেমে থাকে না। সেখানে আবেগ অথবা ভালোবাসা যা-ই ভর করুক না কেন, তা কেউ ফুৎকার দিয়ে উড়িয়ে দিতে পারে না।

বোধের ভিতর অদ্ভুত এক কাঁপুনি দিয়ে তা কখনো জাগিয়ে তোলে। বড্ড অদ্ভূত লাগে সেই বোধটুকু বহন করতে। কখনো তা মৃদুভাবে এলায়িত হয় কোনো এক দূর অজগরের দেশে। কান্নার ভেতর যে ঘূর্ণায়মান হাসি থাকে সে অতলস্পর্শ কাঁপন সহ্য করতে পারে না যন্ত্রটা। চলন্ত বাসে উভচর ভেবে যখন সে নিজের অস্ত্র ঠেকিয়ে ধরে, তখন পাশ ফিরে বলে- ‘উঠি, আমি গবেষক।’ এই ব্যবচ্ছেদ হয়ে কেন বার বার নিজেকে গিনিপিগ করে তোলা। তবে সবটা মিথ্যে নয়। সোনালি মুখোশ পরা সত্যটাকে কখন যে চুম্বন করেছিল আদমের সাপ সে কথা বলা যায় না। তবে নেচে উঠেছিল যখন আদমের সাপ সে কথা যন্ত্রটা আবিষ্কার করে। সত্য আর সত্য থাকে না তাতে সালু কাপড় জড়ানো থাকে। পরীক্ষা করতে গিয়ে বারকয়েক এ কথা মনে হতেই নিজের ভেতর বিষকাঁটা অনুভব করে যন্ত্রটা। যেখানে অনন্ত আগুনে পুড়ে খাক হয়ে থাকতে হয়। জীবনের সঙ্গে রৌদ্র ছায়ার যে লুকোচুরি তা দর্পণে প্রতিফলিত হয় না। হয়তোবা জীবনের গভীর আবেশ থেকে তেল নুনের অভাব ছেড়ে যায়।

রঙধনুর সাতটি রঙ যেমন সত্য ঠিক তেমনি বহুবর্ণগুচ্ছ তৈরি হয় এসব রঙের মিশ্রণ থেকে। সেখান থেকে কিছু রঙ এনে যদি বছরের পর বছর নিজের ওপর রঙ লাগানো হয় তাতে জং ধরা রোধ করা যাবে না কারণ নিয়মটাই যে এমন। এখানে কেউ কাউকে রঙ করে দেয় না। এ রঙ জীবনের বর্ণিল সময়ে অর্জন করে নিতে হয়।

কখনো এমন হয়েছে বহুদূরে একটা গাঙচিল অথবা শঙ্খচিল উড়ে যাচ্ছে, কিন্তু না সে আমাকে চেনে না। চিনতে যে মনটা দরকার তার পেছনে যন্ত্রটার কোন বোধ কাজ করছে, হতে পারে। আবার না-ও হতে পারে। সত্যায়িত সত্যকে যেমন ধোঁয়াচ্ছন্ন আবেগে জড়ানো যায় না তেমনি মিথ্যের এক নহর নিজের ভেতর স্থাপন করে নেয় যন্ত্রণা। অভিব্যক্তির কোন আস্ফাালনে সে বিগড়ে যায়। কখনো খেজুরের রসের মতো ছড়িয়ে পড়ে আবার কখনো বিষকাটালির মতো তা বিষবিদ্ধ হয়। এ কেমন সংরক্ষণের উপায়। যদি না উপচে পড়ে সেই তো ভালো। কিন্তু নেত্র যে কেবল টাকিমাছ দেখে অথবা দূর অতীতে দেখেছিল।

আমি জানি লাখো মানুষের ভেতর যন্ত্রণা কেন এখনো সমুজ্জ্বল আছে। তবে কী ভিনগ্রহের সে সূর্যদেবতা। না তা হবে কেন? সে স্বর্গলোকের ঘোড়া। দেখছ কখনো সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম এ ঘোড়াটা এখনো বুটের ডাল খায়। মানবিকতার প্রশ্নে সে কেবল খাদক। জীবনের অন্তিম লগ্নে স্বপ্ন যেমন মেদুরতা দান করে তেমনি অদ্ভুতভাবে ঈশ্বর তার বাম হাত ঢুকিয়ে দেয় যন্ত্রটার মধ্যে। সেখানে তখন আস্তানা হয় লোভ, কাম, ঈর্ষা, অথবা অন্যকিছুর...। যন্ত্রণাটা দাঁড়াতে চেষ্টা করে, কোটি কোটি লেজ তখন তার দিকে ধেয়ে আসে এবার যন্ত্রটা তার বুকের একটা অংশ উন্মুক্ত করে আর তাতেই ঢুকে পড়ে যতসব বস্তাপচা পুস্তক। না পুস্তক নয় কিছু বস্তাপচা পুডিং, কাস্টার্ড অথবা সিদ্ধ মাছ। বিড়ালটা ভেতরে বসে কাঁটা বেছে সে মাছগুলো খায়। হঠাৎ একটা কাঁটা বিধে যায়। কোথায়? কোথায়? কেউ খুঁজে পায় না। অবশেষে একদিন এক বিশাল বক এসে কাঁটাটা খুঁজে পায় ধানমন্ডি লেকে।

যন্ত্রটা তখন নিশ্চল। অ্যামিবার মতো ক্ষীণপদ দিয়ে সে এমন এ সভ্যতাটাকে কুড়কুড় করে খায়। যদিও তা বিস্কুট নয়। তবে নিজেকে সে পুড়িয়েছিল এক জ্যোৎস্নারাতে। আসলে পোড়ায়নি, ভয়ে সে লুকিয়েছিল গভীর এক খাদে। যদিও খাদটাতে সে একা নামতে চায়নি। কিন্তু রাজকুমার যে বলেছিল- ‘এটা পাতালপুরি, যন্ত্র তুমি মানুষ হয়ে যাও।’ তারপর যন্ত্রটা নিজের খোলস ভেঙ্গে আস্ত একটা সাপ না একটা দু’পায়ের প্রাণী, না আস্ত একটা মানুষ তৈরি হলো। বড্ড জটিল ও দুর্বোধ্য মানুষ পাঠ করা। ৎ

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads