• মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪২৮
বৈশাখ : শুদ্ধ হোক জীর্ণতা 

ছবি : সংগৃহীত

সাহিত্য

বৈশাখ : শুদ্ধ হোক জীর্ণতা 

  • প্রকাশিত ১৫ এপ্রিল ২০১৯

সদাসমুজ্জ্বল

 

বাঙালির মনে আনন্দের উপলক্ষ খুবই কম। যতটুকু আছে তাও আবার নানা ধরনের ‘না’-এর জালে আবদ্ধ। মনে ভয় রেখে উচ্ছ্বাসের চূড়ান্ত রূপ প্রকাশিত হয় না। এ কারণে প্রায় নির্জীব জীবনযাপন করে বাংলার মানুষ। জাতির আনন্দ নিশ্চিত করতে এমন একটি পরিবেশ দরকার যেখানে অবাধ বিচরণ সম্ভব। সংস্কৃতি যে কোনো জাতির প্রাণ। সংস্কৃতি অগ্রসর হলে জাতি এগিয়ে যাবে। সময়ের প্রয়োজনে কিংবা আত্মার দাবি মেটাতে মানুষে নিজেই কিছু আনন্দের উপলক্ষ তৈরি করে। এই আনন্দের উপকরণ একসময় সংস্কৃতিতে রূপান্তরিত হয়। পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ক্ষেত্রেও বিষয়টি সত্য। আমাদের আত্মপরিচয়ের অনেকখানি জুড়ে রয়েছে এই উৎসব। মোগল সম্রাট জালালুদ্দিন মুহাম্মদ আকবরের সময়ে শুরু হওয়া পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে নানান আয়োজন করা হতো। গোটা বছরের খাজনা পরিশোধ করতেন প্রজারা এই দিনে। জমিদাররা খুশি হয়ে মিষ্টি খাওয়াতেন প্রজাদের। জমিদারি আমলে রাজা-প্রজা একসঙ্গে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতেন। তা ছাড়া পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা ‘হালখাতা’ করতেন। দেশভাগের পর পাকিস্তান আমলে পহেলা বৈশাখের উৎসব সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পায়নি বললেই চলে। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ১৯৫৪ সালে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য পায় পহেলা বৈশাখ। এই দিনে তিনি সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। যদিও পাকিস্তানি শাসক কর্তৃক তা প্রতিহত হয়। তবু বাঙালি পহেলা বৈশাখের আয়োজন থেকে সরে আসেনি। বেসরকারিভাবে ছায়ানট ১৩৭৫ সনের পহেলা বৈশাখে রমনার পাকুড়মূলে কবিসার্বভৌম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘এসো হে বৈশাখ, এসো...’ গানটি সমবেত কণ্ঠে গেয়ে সর্বপ্রথম বর্ষবরণ উৎসব শুরু করে। নতুন প্রাণে জেগে ওঠে পহেলা বৈশাখের উৎসব। ১৯৭২ সালে রমনার পাকুড়মূলে বর্ষবরণ জাতীয় উৎসবের স্বীকৃতি লাভ করে। তখন থেকে আজ অব্দি রমনার পাকুড়মূলে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতায় পালিত হচ্ছে বর্ষবরণ উৎসব। পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ উৎসব আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতির প্রধান অংশ। বাংলা সনের শুরু নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও, সে বিতর্কে যাব না। কোনো রকম সংকীর্ণতায় এই উৎসবকে আমরা জড়াতে চাই না। আমরা এই উৎসবকে প্রাণে ধারণ করেছি। মানুষ যা প্রাণে ধারণ করে সেটাই তার ধর্ম। বাঙালি সংস্কৃতি আমাদের প্রাণধর্ম। অবশ্য জীবনচিন্তা মুখ্য হলে মনের আনন্দ মুখ থুবড়ে পড়ে! এমন সময় আমরা পার করছি যখন সচেতনভাবে প্রগতিবিরোধীরা জাতিকে অথর্ব করতে সংস্কৃতিরোধ করতে চায়। নেতির আরাধনায় তারা আচ্ছন্ন। সংস্কৃতিপ্রাণ বাঙালি সব সময় তাদের নেতিবাচকতা রুখে দিয়েছে সংস্কৃতিচর্চার মধ্য দিয়ে। শত প্রতিকূলতার পরেও বাংলার মানুষ পহেলা বৈশাখ উদযাপন করে। ১৯৮০ সালে মঙ্গলশোভার প্রচলন হয়, যা বাংলা নববর্ষের উৎসবকে অন্য মাত্রা দান করে। ঢাকার চারুকলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। আনন্দের বিষয়, ঢাকার চারুকলা আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্রা পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। আগামীর বাংলা নববর্ষও বাঙালি জাতি ধর্ম, বর্ণের ঊর্ধ্বে গিয়ে পরম মমতায় উৎসব পালনের মধ্য দিয়ে বরণ করবে। নতুন বাংলা সন প্রতিটি মানুষের জন্য মঙ্গলবার্তা বয়ে আনুক এই প্রত্যাশা করি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads