• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

সাহিত্য

বলতে এলাম ভালোবাসি

সহজ কথার সহজ উপস্থাপন

  • রহিমা আক্তার মৌ
  • প্রকাশিত ১৮ মে ২০১৯

অনেক প্রিয় ও ভালো বই থেকে যায় আমাদের অগোচরে। রাহাত রাব্বানীর ‘বলতে এলাম ভালোবাসি’ বইটিও আমার কাছে তাই। আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান মতিনের সঙ্গে রাহাত দেখা করে। বাবাকে নিয়ে লেখেন, “আসন্ন বিজয় টের পেয়েছিলেন এলাকাবাসীর ‘পাগলা মতিন’।” সত্যি বলতে, বাবাকে নিয়ে লেখাটা সংগ্রহ করার জন্যই বইটি কিনে নিয়ে আসি। বইটা পড়ছি আর আমি অবাক হচ্ছি। অনেক কিছুই জানতে পারছি যা অজানা ছিল।

প্রথমেই স্থান পাওয়া ‘মৃত্যুশোকাচ্ছন্ন রবীন্দ্রজীবন’ পড়ে পুরোই পাথর হলাম। রবির পুরো পরিবারের মৃত্যুগুলো কীভাবে সইলেন কবিগুরু রবিঠাকুর, সেই মুহূর্তগুলোকে ধরার চেষ্টা এই লেখায়। তার মধ্যেও স্থান পেয়েছে রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর প্রয়াণের কথা। শেষ করেছেন রবির মৃত্যু দিয়ে। ১৯১৫ সালে ষোলো বছর বয়সী জীবনানন্দ কিছু কবিতা পাঠিয়েছিলেন রবির কাছে। কবিতা পেয়ে জবাব পাঠালেন- ‘তোমার কবিত্বশক্তি আছে তাতে সন্দেহমাত্র নেই। কিন্তু ভাষা প্রভৃতি নিয়ে এত জবরদস্তি কর কেন বুঝতে পারিনে।’ রবির এই জবাবেই জীবনানন্দ খুঁজে পান তার আসল সত্যকে। জীবনানন্দের জীবনের মুখ্য চরিত্র বনলতা। রাহাতের বইয়ে জায়গা পেয়েছে জীবনানন্দের সেইসব কথা যা জীবনানন্দ কবিতার উপমায় তুলে ধরেছেন। ‘অমরত্বের মিছিলে তোমাকে অভিবাদন’ লিখেছেন কবি শহীদ কাদরীকে নিয়ে। মাত্র এগারো বছর বয়স থেকে লিখতে শুরু করা কবি শহীদ কাদরী ছিলেন অভিমানী। অল্প কথায় কবির সাহিত্যে প্রবেশ করতে চেয়েছেন রাহাত, পেরেছেনও অনেকটা। কবি শহীদ কাদরী যুদ্ধ নয়- চেয়েছেন শান্তি, সেও আলোচনা করেছেন রাহাত।

লিখেছেন চিরতরুণ কবি নির্মলেন্দু গুণকে নিয়ে। নির্মলেন্দু গুণকে পড়তে গিয়ে আমিও হারিয়ে যাই কবির লেখা ‘সংসার’ নামক কবিতায়। ‘বাংলা সাহিত্যের ধ্রুব নক্ষত্র’ শিরোনামে রাহাত লিখেছেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনকে নিয়ে। হেলাল হাফিজ নিজেই নিজেকে দুঃখের আরেক নাম বলেন, সেই শিরোনামে তার সুখ-দুঃখের কথা এসেছে একটা লেখায়। কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহকে নিয়ে আছে ‘বলতে এলাম ভালোবাসি’ বইটিতে। তরুণ লেখক ইজাজ আহমেদ মিলনকে নিয়ে লিখেছেন। লিখেছেন বারী সিদ্দিকী, গাছ মানুষ, লেখক আনিসুল হকসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে। প্রবন্ধ অনেক পড়েছি, লিখছি নিজেও। রাহাত রাব্বানীর লেখায় একটা সহজ উপস্থাপনা পাই যা খুব একটা নজরে পড়েনি।

বইয়ের শেষদিকে তুলে ধরেছেন নিজের স্কুল ও কলেজ জীবনের কিছু সুন্দর মুহূর্তকে। কলেজের প্রথম দিনে কর্নেল নবীর সুমধুর ভাষণ আজো তাকে উৎসাহ দেয়। সেই সুন্দরের মাঝে কালো অধ্যায় ছিল সড়ক দুর্ঘটনায় হারানো বন্ধুকে। তরুণ লেখক সাদাত হোসাইনের জন্মদিনে শুভেচ্ছা দিতে ভোলেননি, নিজের বইতেও একটা অংশে রেখেছেন। লিখতে তো অনেকেই পারে, পারে বলেই প্রকাশিত হচ্ছে হাজার হাজার বই; কিন্তু সহজ কথা সহজভাবে উপস্থাপন করতে সবাই পারে না। ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় রাহাত তা পেরেছে।

কবি ও প্রাবন্ধিক পিয়াস মজিদ রাহাত রাব্বানীর বই নিয়ে লিখেছেন, ‘যে বয়সে সবাই কেবল কবিতা, গল্প লিখে থাকে, সে সময় রাহাত নিপুণ নিষ্ঠায় রবীন্দ্রনাথ থেকে অকালগত মাহবুবুল হক শাকিলের সৃষ্টিভুবন পর্যন্ত যে অন্বেষী দৃষ্টিপাত করেছে তা বিস্ময়কর বটে। রবীন্দ্রনাথ থেকে বাংলা সাহিত্যের ঋদ্ধ পরম্পরায় জীবনানন্দ, আল মাহমুদ, শহীদ কাদরী, নির্মলেন্দু গুণ, রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও হেলাল হাফিজের মতো কবিদের শব্দশস্য যেমন রাহাতের অবলোকন ও আলোচনার বিষয় হয়েছে, তেমনি কথাশিল্পের ক্যানভাসে সেলিনা হোসেন, আনিসুল হকের লেখালেখিও এই তরুণ প্রাবন্ধিকের বিশ্লেষণ পেয়েছে। সাহিত্যের পরিসর ছাপিয়ে এই বইয়ে প্রান্তের মুক্তিসংগ্রামীরা লেখকের কেন্দ্রীয় মনোযোগ লাভ করেছে।’ সুতরাং বলাই চলে বইটি সবার পাঠ-মনোযোগ কামনা করে। ৎ

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads