• মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪২৮
প্রয়োজন হলেই জনগণের পাশে দাঁড়াবে সেনাবাহিনী : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

প্রয়োজন হলেই জনগণের পাশে দাঁড়াবে সেনাবাহিনী : প্রধানমন্ত্রী

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১৪ মে ২০১৮

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সদা সতর্ক থেকে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক হুমকি মোকাবেলায় সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পবিত্র সংবিধান ও দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য আপনাদের ঐক্যবদ্ধ থেকে অভ্যন্তরীণ কিংবা বৈদেশিক-বাহ্যিক যেকোনো হুমকি মোকাবেলায় সদা সতর্ক থাকতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার সকালে দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন। ঢাকা সেনানিবাস থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি এসব প্রকল্প উদ্বোধন করেন। এর মধ্যে রয়েছে- ঢাকা সেনানিবাসে ক্যানসার সেন্টার, ফার্টিলিটি সেন্টার, এডিবল অয়েল মিল এবং বিভিন্ন সেনানিবাসে সেনা সদস্যদের জন্য ব্যারাক, সেনাছাউনি, প্রশিক্ষণ ও আবাসন প্রকল্প। সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মুহম্মদ শফিউল হক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ‘দেশের সম্পদ’ এবং মানুষের ‘ভরসা ও বিশ্বাসের মূর্ত প্রতীক’ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাই পেশাদারিত্বের কাঙ্ক্ষিত মান অর্জনের জন্য আপনাদের সবাইকে পেশাগতভাবে দক্ষ, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সৎ ও কল্যাণময় জীবনের অধিকারী হতে হবে। তিনি বলেন, আপনারা ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের প্রতি আস্থা, পারস্পরিক বিশ্বাস, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, কর্তব্যপরায়ণতা, দায়িত্ববোধ ও সর্বোপরি শৃঙ্খলা বজায় রেখে আপনাদের কর্তব্য সম্পাদনে একনিষ্ঠভাবে কাজ করবেন বলে আমি আশা করি। তার সরকার সর্বদাই জনগণের সেবক হিসেবে দেশ পরিচালনা করতে চায়, শাসক হিসেবে নয়- উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের সেবা করার জন্য আপনাদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতা আমরা পেয়েছি। তিনি দৃঢ় আস্থা ব্যক্ত করে বলেন, বর্তমান সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনাকালীন যখনই প্রয়োজন হবে তখনই সেনাবাহিনী জনগণের পাশে এসে দাঁড়াবে, এটা আমার দৃঢ়বিশ্বাস। শেখ হাসিনা এ সময় সেনাবাহিনীর সঙ্গে দৃঢ় পারিবারিক বন্ধন থাকার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, পরিবারের সদস্য হিসেবে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের উপযোগী করে সেনাবাহিনীকে গড়ে তোলাকে আমি আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য বলেই মনে করি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উন্নত ও পেশাদার সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে ১৯৭৪ সালেই প্রতিরক্ষানীতি প্রণয়ন করেছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা কর্তৃক প্রদত্ত সুদূরপ্রসারী এই প্রতিরক্ষা নির্দেশনার আলোকেই সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামোবিন্যাস ও পরিবর্তনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, এর ফলেই আজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশ ও দেশের বাইরে এক সম্মানজনক অবস্থায় উন্নীত হয়েছে। এ বাহিনীর দীর্ঘদিনের অর্জিত সুনাম আপনাদের রক্ষা করতে হবে, যার স্বপ্ন ও দিকনির্দেশনা জাতির পিতা দিয়েছিলেন। তার সরকার সেনাবাহিনীর উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে বিশ্বাসী উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সেই লক্ষ্য সামনে রেখে আমরা প্রয়োজনীয় সব কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। একটি আধুনিক ও চৌকস সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে তার সরকার বদ্ধপরিকর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এজন্য ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করেছি, যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে সেনাবাহিনীতে নতুন পদাতিক ডিভিশন, ব্রিগেড, ইউনিট ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা এবং কিছু সংখ্যক ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়নকে প্যারা ব্যাটালিয়ন ও মেকানাইজড ব্যাটালিয়নে রূপান্তর করা হয়েছে।

বর্তমান সরকারের সময়কালে ২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে নারী সৈনিক ভর্তির সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে নারী প্রশিক্ষণার্থীগণ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন সেন্টার ও স্কুলে যোগদান করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মহিলা পাইলট সংযোজন এক নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। সরকারপ্রধান বলেন, দেশের ক্রান্তিলগ্নে ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ ও ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’-এর মাধ্যমে জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনা এবং গুলশানের হলি অর্টিজান বেকারিতে জিম্মি নাটকের অবসানে সেনাবাহিনী যোগ্যতার যে স্বাক্ষর রেখেছে- তা দেখে আমি অত্যন্ত গর্বিত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে অপারেশন উত্তরণ-এর আওতায় সেখানে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও সম্প্রীতি বজায় রাখার পাশাপাশি নানা ধরনের জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত রয়েছে। তিনি বলেন, আপনাদের পেশাগত দক্ষতার কারণে দীর্ঘপ্রত্যাশিত পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ তদারকিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যেমন কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রকল্প, হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প, বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার নির্মাণ, মহিপাল ফ্লাইওভার নির্মাণ এবং থানচি-আলীকদম সড়ক নির্মাণ দায়িত্ব আপনাদের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় ও বিভিন্ন বৈদেশিক মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা আত্মত্যাগ, কর্তব্যনিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য বয়ে আনছে সম্মান ও মর্যাদা, যা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে অত্যন্ত উজ্জ্বল করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেনাবাহিনী মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণের দায়িত্ব গ্রহণের পাশাপাশি তাদের অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণে সহায়তা ও চিকিৎসাসেবাসহ বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতায় দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশের ভাবমূর্তিকে আরো উজ্জ্বল করে তুলেছে। রেশন, স্কেল ও বিভিন্ন ভাতা বৃদ্ধির প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর সদস্যদের জন্য দুপুরে রুটির পরিবর্তে ভাতের ব্যবস্থা করেছি। যতদিন সেটা করতে পারিনি ততদিন আমিও দুপুরে ভাত খাইনি।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছি। এর আগে আমরা সমুদ্রসীমা জয় করেছি। সীমান্তে বিরোধ নিষ্পত্তি করে আমরা ছিটমহল সমস্যার সমাধান করেছি। তিনি বলেন, জলে, স্থলে ও আকাশসীমায় আমাদের অবস্থান সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট হয়েছে। বাসস।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads