• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
রোহিঙ্গা সঙ্কটে পাশে আছে বিশ্ব সম্প্রদায়

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেও ও বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট ইয়ং কিম

ছবি : পিএমও

জাতীয়

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গুতেরেস-কিমের সাক্ষাৎ

রোহিঙ্গা সঙ্কটে পাশে আছে বিশ্ব সম্প্রদায়

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ০২ জুলাই ২০১৮

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় বাংলাদেশকে তাদের অব্যাহত সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গতকাল রোববার তার তেজগাঁও কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে তারা ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের মহানুভবতার প্রশংসা করেন এবং এই বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায় বাংলাদেশের পাশে রয়েছে বলে জানান। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, বৈঠকে নেতৃবৃন্দ এই সমস্যার সমাধানে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখায় তাদের সঙ্কল্পের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

নিরাপদ, স্বতঃস্ফূর্ত ও মর্যাদার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে জাতিসংঘ মহাসচিব ও বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট গত শনিবার পৃথক ফ্লাইটে ঢাকা পৌঁছান। জাতিসংঘ মহাসচিব আজ সোমবার রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে কক্সবাজার যাবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট ও রোহিঙ্গাবিষয়ক জাতিসংঘ হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি মহাসচিবের সঙ্গে থাকবেন। তিনি কুতুপালং শরণার্থী শিবির পরিদর্শন ও সেখানে নারীদের সুযোগ-সুবিধার বিষয় পর্যবেক্ষণ করবেন। সন্ধ্যায় ঢাকায় ফিরে মিডিয়া ব্রিফিংয়ের পর রাত পৌনে ১টার দিকে ঢাকা ত্যাগ করার কথা তার। একই রাতে ঢাকা ছাড়বেন বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টও। জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন। তিনি বিকালে রেডিসন হোটেলে বাংলাদেশে জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংক কান্ট্রি টিমের সঙ্গে বৈঠক করবেন। পরে তিনি প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত ভোজসভায় যোগ দেন।

প্রেস সচিব বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব ও বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট মূলত রোহিঙ্গা সমস্যা এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্পর্কিত বিষয়াবলি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের বাংলাদেশে স্বাগত জানিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন। তিনি দীর্ঘকাল ধরে, সেই ১৯৭৭ সাল থেকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে চলে আসতে থাকার বিষয়েও তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ কেবল মানবিক কারণে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছে, কেননা এ দেশের জনগণেরও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতে শরণার্থী হিসেবে অনুরূপ আশ্রয় নেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি বলেন, সরকার প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে একটি দ্বীপে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে, যেখানে তারা জীবনযাপনের জন্য আরো ভালো অবস্থা পাবে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সম্পাদিত সমঝোতা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার এটার বাস্তবায়নে এখনো কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার স্বাস্থ্যসেবাসহ রোহিঙ্গাদের সব ধরনের মানবিক সহযোগিতা প্রদান করছে, বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আগমনে স্থানীয় জনগণ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সহমর্মিতার কথা উল্লেখ করে জাতিসংঘ মহাসচিব এ বিষয়ে মিয়ানমারের ওপর চাপ বজায় রাখার এবং বাংলাদেশকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন, বলেন প্রেস সচিব। বাসস

জাতিসংঘ মহাসচিব রোহিঙ্গাদের ধর্মীয় গোঁড়ামির বিষয়ে আশঙ্কা ব্যক্ত করে তাদের শিক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তাদের বিষয়ে মিয়ানমার আসলে কী করতে চায় সে বিষয়টি অনুধাবনের জন্য তিনি মিয়ানমারের ওপর আরো চাপ প্রয়োগের ওপরও জোর দেন। অ্যান্তোনিও গুতেরেস এ সময় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও বাংলাদেশের সমস্যার সমাধানে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য বিশ্বব্যাংকের পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়ে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট বলেন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও মানবিক বিষয়াবলি একযোগেই বাস্তবায়িত হবে। বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের ঋণের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রহীতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনার নেতৃত্বের প্রতি আমাদের আস্থা এ থেকেই প্রতীয়মান হয়। এলডিসিভুক্ত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্তরণের প্রশংসা করে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি এ বিষয়ে ব্যাংকের বোর্ড অব গভর্নরদের সভায় একটি প্রস্তাব পেশ করবেন, যাতে বাংলাদেশকে স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করা হয়।

প্রেস সচিব বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সেই সঙ্গে সন্ত্রাস দমন কর্মকাণ্ড এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির ভূয়সী প্রশংসা করেন। বাংলাদেশকে তিনি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অন্যতম সেরা দেশ হিসেবেও অভিহিত করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলায় আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের চুম্বক অংশ তুলে ধরে বলেন, কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ দ্রুতলয়ে এগিয়ে চলেছে এবং গেল অর্থবছরে বাংলাদেশ ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়েছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ভূমিকা এবং শাান্তিরক্ষী প্রেরণে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। তিনি বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশের ভূমিকারও প্রশংসা করেন। তিনি ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ প্রদানের একটি আলোকচিত্রও প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেন।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, ইআরডি সচিব কাজী শহিদুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads