• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে স্থবিরতা

জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে স্থবিরতা

সংরক্ষিত ছবি

জাতীয়

জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে স্থবিরতা

বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস আজ

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ১১ জুলাই ২০১৮

দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অনুপাতে বাড়ছে না জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী ব্যবহারকারীর সংখ্যা। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন কার্যক্রম চালু থাকলেও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বছরে সরকারের এক হাজার ৭০০ কোটি টাকার বেশি খরচ হলেও অধিকাংশ কর্মসূচি চলছে ঢিলেঢালাভাবে। কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ার তথ্য উঠে এসেছে সরকারি পরিসংখ্যানেও।

বাড়তি জনসংখ্যা কর্মসংস্থান, ভূমি, কৃষি, আবাসন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। ফলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ক্ষুদ্রায়তনের এ দেশে ব্যাপক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণগুলো হচ্ছে  বাল্যবিয়ে, নিরক্ষরতা, বহু বিয়ে, দারিদ্র্য, ধর্মীয় কুসংস্কার, জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে অজ্ঞতা ও মৃত্যুহারের চেয়ে জন্মহার বেশি ইত্যাদি। জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে নিরক্ষর ও গরিব মানুষ ধারণা পাচ্ছে না। অনেকের ধারণা থাকলেও জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী কেনার ক্ষমতা নেই।

এসব কারণের সঙ্গে গত কয়েক বছরে যোগ হয়েছে দেশজুড়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর ঘাটতি ও মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্কট।

যোগাযোগ করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংখ্যা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নূর-উন-নবী বলেন, ‘সামগ্রী সঙ্কটে জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে অরাজকতা বাড়তে পারে। এ অবস্থায় অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ বাড়ে। ফলে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে জনসংখ্যায়।’

বিশেষজ্ঞরা জানান, পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারকারীর সংখ্যা ধীরগতিতে বাড়ছে। অনেক পুরুষ জন্মনিয়ন্ত্রণের সব দায়িত্ব নারীর ওপর চাপিয়ে দেন। দেশে নয়জন নারীর বিপরীতে মাত্র একজন পুরুষ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন। গত চার দশকে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারকারী আটগুণ হয়েছে, আনুপাতিক হারে বেড়েছে পুরুষের অংশগ্রহণও। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সরকারের অনেক অগ্রগতিও হয়েছে। প্রজনন হার কমেছে ও জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হারও বেড়েছে। সেই অগ্রগতি ধরে রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

এ পরিস্থিতিতে আজ বুধবার পালিত হবে ‘বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস’। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হবে বিভিন্ন আয়োজনে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য-‘পরিকল্পিত পরিবার, সুরক্ষিত মানবাধিকার’। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দিবসের কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূল পর্যায়ে গত কয়েক বছর ধরে কনডম, আইইউডির (ইন্ট্রা ইউট্রাইন ডিভাইস) মতো বেশি ব্যবহূত জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রীর সঙ্কট চলছে। সঙ্কট মোকাবেলায় কর্তৃপক্ষ যথাযথ উদ্যোগ নিতে পারছে না। ফলে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মাঠকর্মীরা সক্ষম দম্পতিদের চাহিদা অনুযায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী দিতে পারছে না।

নিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর সঙ্কট দূর করতে কর্তৃপক্ষ সরবরাহের আশ্বাস দিলেও তা দেওয়া হচ্ছে না বলে মাঠ পর্যায়ের কয়েকজন কর্মী বাংলাদেশের খবরের কাছে অভিযোগ করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, জন্মনিয়ন্ত্রণে নারীদের দীর্ঘস্থায়ী পদ্ধতি আইইউডি। প্রত্যাশিত সন্তান জন্ম দেওয়ার পর নারীরা এ পদ্ধতি ব্যবহার করেন। প্রতি মাসে দেশে অন্তত ২৫ হাজার নারী এ পদ্ধতি ব্যবহার করেন। চাহিদা থাকলেও সরবরাহ না থাকায় এ বছরের এপ্রিলে মাত্র ১০ হাজার বিবাহিত নারী এ পদ্ধতি নিতে পেরেছেন। এ ছাড়া পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীর তিন হাজার পদ খালি বলে জানান তারা। অপরদিকে, বেসরকারি সংস্থা ‘সেভ দ্য চিলড্রেনের’ ২০১৬ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন মতে, দেশে ৩৫৮টি ইউনিয়নে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র নেই।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সব শেষ জরিপ মতে, গত বছর জনসংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৬ কোটি ২৭ লাখ। ২০১৬ সালে দেশের জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৮ লাখ। দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। গত পাঁচ বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার একই রয়ে গেছে। ২০১৭ সালের নভেম্বরে বিবিএসের প্রকাশিত জরিপ মতে, ‘গত পাঁচ বছরে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার প্রায় স্থবির। ব্যবহারকারীর সংখ্যাও আর বাড়ছে না। দেশের জনসংখ্যার ওপর পড়ছে এর বিরূপ প্রভাব। ২০৫১ সালে দেশের জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ২১ কোটি ৮৪ লাখ।’

জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (নিপোর্ট) ২০১৬ সালের অক্টোবরে জানায়, দেশে প্রতি মিনিটে ৪ দশমিক ২ জন মানুষ বাড়ছে। বছর শেষে মোট জনসংখ্যার সঙ্গে নতুন যুক্ত হচ্ছে ২২ লাখ ২১ হাজার ৮০০ মানুষ। ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তি হবে। বিবিএসের জরিপ মতে, তখন জনসংখ্যা হবে ১৭ কোটি ১৭ লাখ। জাতিসংঘের হিসাবে তখন জনসংখ্যা হবে ১৭ কোটি ২৩ লাখ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads