• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
সহযোগিতা করছে চীন ও আসিয়ান

সহযোগিতা করছে চীন ও আসিয়ান

জাতীয়

সহযোগিতা করছে চীন ও আসিয়ান

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৯ নভেম্বর ২০১৮

দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায় বাংলাদেশ। আগামী ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। আন্তর্জাতিক সমাজও চায় রোহিঙ্গারা নিজ ভূমিতে ফিরে যাক। মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে চীন এবং আসিয়ানের পক্ষ থেকেও চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আসিয়ানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সফর শেষে মিয়ানমার সফররত সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান গত ৫ নভেম্বর নেইপিডোতে অং সান সু চির সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। বালাকৃষ্ণান ও সু চি উভয়েই রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসনের ওপর জোর দিয়েছেন। জাতিসংঘ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নিরাপদ পরিবেশ তৈরি হয়নি বলে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও বাংলাদেশের প্রস্তুতি দেখতে তাদের প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন।

ঢাকায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায় উভয় পক্ষ। মিয়ানমারের কাছে ইতোমধ্যে ৪৮৫টি পরিবারের ২২৬০ জন রোহিঙ্গার একটি তালিকা হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রথম ধাপে তাদের ফেরত পাঠানো হবে। তাদের মধ্যে হিন্দু রোহিঙ্গাও রয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ২২ হাজার ৪৩২ জন রোহিঙ্গার আরো একটি তালিকা হস্তান্তর করা হয়েছে মিয়ানমারকে। ওই তালিকা থেকে যাচাই-বাছাই শেষে ধাপে ধাপে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো হবে।

ইতোমধ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে বৈঠকের আগেই চীনের মধ্যস্থতায় ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে সম্মত হয় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। গত মাসে ঢাকায় চীনা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের একটি বৈঠকের ব্যাপারে তিন দেশ একমত হয়েছে। এরপর গত বুধবার রাতে ঢাকা আসেন জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমার-বিষয়ক বিশেষ দূত ক্রিস্টিন এস বার্গনার। এ সময় চীনে সফরে রয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে সফরগুলোর মধ্যে প্রচ্ছন্ন যোগসূত্র রয়েছে।

সূত্রমতে, চীনের মধ্যস্থতায়ই প্রতীক্ষিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। নির্বাচনের আগেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা এবং অন্তত একটি ব্যাচ পাঠানোর বিষয়ে এর আগেই মন্ত্রী পর্যায়ের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

ব্যতিক্রম কিছু না ঘটলে আগামী ১৫ নভেম্বর প্রত্যাবাসনের প্রথম ব্যাচ রাখাইনের উদ্দেশে কক্সবাজার ছেড়ে যাচ্ছে। ওই ব্যাচে কতজন রোহিঙ্গা ফিরছেন, তা নিয়ে সরকারি বিভিন্ন তরফে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য। তবে পররাষ্ট্র সচিব ৬ নভেম্বর ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে একাধিক সভায় বলেছেন, আমি সংখ্যা তত্ত্বে বিশ্বাসী নই। এ নিয়ে আগ বাড়িয়ে কিছু বলতেও চাই না। আমরা একাধিক ‘সংখ্যা’ নিয়ে কাজ করছি। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কতজন যায়? তবে তিনি চান প্রত্যাবাসন পরীক্ষামূলকভাবে হলেও শুরু হোক।

এর কারণ হিসেবে পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, বাংলাদেশ চায় দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু হোক। কারণ অনেকেই এ নিয়ে বাংলাদেশের দিকে প্রশ্ন তুলতে চায় যে, আমাদের জন্যই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হচ্ছে না।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রত্যাবাসনকে বাংলাদেশের জন্য কোনো ইস্যু না বানাতেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা। পররাষ্ট্র সচিব চীনের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের মধ্যে দফায় দফায় চিঠি চালাচালি ও আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের রোহিঙ্গাসংক্রান্ত বিশেষ দূত ক্রিস্টিন এস বার্গনারের বাংলাদেশ সফরের সূচি চূড়ান্ত হয়। মূলত তিনি প্রত্যাবাসনের মাঠপর্যায়ের প্রস্তুতি সরেজমিন দেখবেন এবং এ নিয়ে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরবেন।

সূত্র জানায়, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার পর প্রথমে ২-৩ দিন ট্রানজিট ক্যাম্পে থাকবে। সেখান থেকে অস্থায়ী বাড়িতে, তারপর ধীরে ধীরে তারা নিজ গ্রামে ফিরে যাবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আগে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা ট্রানজিট ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। এ ছাড়া প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া তদারকি করবে ইউএনএইচসিআর, ইউএনডিপি ও আইসিআরসি। 

তবে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াং হি লি এক বিবৃতিতে বলেছেন, রাখাইনে এখনো নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি মিয়ানমার সরকার। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে আশঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি।

তবে শুরু থেকে আসিয়ান জোটের দেশগুলোর মধ্যে রোহিঙ্গা সঙ্কটে অনাগ্রহ থাকলেও ধীরে ধীরে তারা এ সঙ্কট সমাধানের পথে সহযোগিতা দিচ্ছে। আসিয়ান ফোরামের বৈঠকের আগেই সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণানের নেতৃত্বে একটি বিশেষ টাস্কফোর্স বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার সফর করেছেন। এ বিষয়ে তিনি আসিয়ানের বৈঠকে সর্বশেষ অবস্থান বর্ণনা করবেন। আর এর মাধ্যমে এই প্রথম আসিয়ান দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছে। ব্যাংকক পোস্টের এক খবরে বলা হয়েছে, আসিয়ান-অনুমোদিত মিশনের লক্ষ্য হলো নিরাপদ প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads