• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

জাতীয় কৃষি দিবস আজ

  • এস এম মুকুল
  • প্রকাশিত ১৫ নভেম্বর ২০১৮

সবুজ ফসলের মাঠজুড়ে কাঁচা-পাকা ধানের আভা ছড়িয়ে শুরু হলো অগ্রহায়ণের প্রথম দিন। আজ পহেলা অগ্রহায়ণ। জাতীয় কৃষি দিবস। কৃষিজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম সারিতে। হিমেল হাওয়ায় ভেসে আসা হেমন্তকাল সবুজ-হলুদ রঙে আমনের মৌ মৌ  সুবাস ছড়িয়ে দিগন্তজোড়া আনন্দ আহ্বানে কৃষক পরিবারের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে নতুন ফসলের বার্তা।

বাঙালির জাতীয় জীবনে স্মরণাতীত কাল থেকে পহেলা অগ্রহায়ণকে বিবেচনা করা হয় বছরের শুভদিন হিসেবে। এই দিনটিকে নবান্নের দিন হিসেবেও অভিহিত করা হয়। এই নবান্নকেই আবার হেমন্তের প্রাণ বলা হয়। নবান্নের সঙ্গে বাংলার কৃষি ও কৃষক পরিবারের আনন্দ, আতিথেয়তার গভীর সম্পর্ক। কেননা নতুন ধান কাটার সঙ্গে কৃষকদের পারিবারিক জীবনের পরিবর্তনের সম্পর্ক জড়িত। এই ফসল ঘরে তুলে পরিবারের সদস্যদের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা ও চিকিৎসার খরচ চালানো হয়।

প্রচলিত সনাতনী রীতি অনুযায়ী নতুন ধান কাটা আর সেই সঙ্গে প্রথম ধানের অন্ন খাওয়াকে কেন্দ্র করে পালিত হয় নবান্ন উৎসব। কনের জামাতাকে নিমন্ত্রণ করা হয় নতুন ফসলের পিঠা-পুলি, পায়েস খাওয়ার জন্য। বাপের বাড়িতে ‘নাইয়র’ আনা হয় কন্যাকে। ঘরে ঘরে নতুন চালের পিঠাপুলি আর পায়েসের আয়োজন করা হয়। এই আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর যুগেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় নতুন ধানের ভাত মুখে দেওয়ার আগে মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের কৃষকরা মিলাদ আর পূজার আয়োজন করে। সনাতন বিশ্বাস অনুযায়ী, নবান্ন উৎসবের সঙ্গে ধর্মীয় কিছু আনুষ্ঠানিকতার রীতি-রেওয়াজ আছে। অমুসলিম রীতিতে, নবান্ন অনুষ্ঠানে নতুন অন্ন পিতৃপুরুষ, দেবতা, কাক ইত্যাদি  প্রাণীকে উৎসর্গ করে। আত্মীয়স্বজনকে পরিবেশন করার পর গৃহকর্তা ও পরিবারবর্গ নতুন গুড়সহ নতুন অন্ন গ্রহণ করেন। নতুন চালের তৈরি খাদ্যসামগ্রী কাককে নিবেদন করা বিশেষ লৌকিক প্রথা। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, কাকের মাধ্যমে ওই খাদ্য মৃতের আত্মার কাছে পৌঁছে যায়। এ নৈবেদ্যকে বলে ‘কাকবলি’।

প্রথম মাস। এ মাসটি বাঙালির সামাজিক জীবনে ঐতিহ্যবাহী, অসাম্প্রদায়িক বন্ধনে আবদ্ধ। যদিও আকাশ সংস্কৃতির হাল আমলে অনেকটাই পাল্টে গেছে সেই অগ্রহায়ণের চিরাচরিত উৎসবের রীতি। এই পালন যেন ভুলতে বসেছে আধুনিকমনস্ক কৃষক সমাজও। তথাপি কৃষিনির্ভর গ্রামবাংলার সরল জীবনযাপনের প্রতীক এই নবান্ন উৎসব একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে যায়নি বাঙালির জীবন থেকে। এখন সরকারি উদ্যোগে অগ্রহায়ণের এই আনন্দের দিনটি মহিমান্বিত করে রাখার উদ্যোগ হিসেবে অগ্রহায়ণের প্রথম দিনটিকে জাতীয় কৃষি দিবস ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের কৃষি বিভাগের আয়োজনে সারা দেশেই পালিত হয় জাতীয় কৃষি দিবস।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭৫ ভাগ মানুষ এখনো গ্রামে বাস করে। গ্রামের প্রায় ৬০ ভাগ লোকের জীবন-জীবিকা এখনো কৃষি ও খামারভিত্তিক। শহরেও শতকরা প্রায় ১১ ভাগ মানুষ কোনো না কোনোভাবে সরাসরি কৃষির সঙ্গে যুক্ত। জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান শতকরা ১৫.৩৩ ভাগ। কৃষি খাতে কর্মসংস্থান ৪৮.১ ভাগ কর্মজীবী মানুষের।  জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও নগরায়ণের কারণে ফসলি জমি কমার পরও কৃষিক্ষেত্রে দেশের অকল্পনীয় উন্নতি সাধিত হয়েছে- এটি খুবই আশার দিক। ১৯৭১ সালে যেখানে সাড়ে ৭ কোটি মানুষের খাদ্য উৎপাদন অসম্ভব হতো সেখানে জমি কমার পরও ১৭ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। সরকারের বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণের ধারাবাহিকতার ফলে কৃষি এখন শুধু ফসলের মাঠে নয়- মৎস্য, গবাদিপশু পালন, সবজি ও ফলের বাণিজ্যিক চাষাবাদ থেকে শুরু করে ব্যতিক্রম এবং নতুন নতুন কৃষিজ বিষয়ে ব্যাপক আগ্রহ ও সাফল্য দেশের সামগ্রিক কৃষি উন্নয়নে আশার আলো দেখাচ্ছে। ধান, পাটের পাশাপাশি খাদ্যশস্য, শাকসবজি, রকমারি ফল, সমুদ্র ও মিঠাপানির মাছ, গবাদিপশু, পোল্ট্রি মাংস ও ডিম, উন্নত জাতের হাঁস-মুরগি, দুগ্ধ উৎপাদন অনেক বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে বিশ্ব উৎপাদন তালিকায় শীর্ষত্বের লড়াই করছে বাংলাদেশের কৃষি। কাজেই কৃষি এখন সামগ্রিক অগ্রগতির নাম।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads