• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
১২ হাজার সিদ্ধান্ত ঝুলছে মন্ত্রণালয়ে

বাংলাদেশ সচিবালয়

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

১২ হাজার সিদ্ধান্ত ঝুলছে মন্ত্রণালয়ে

২৫ হাজারেরও বেশি সিদ্ধান্ত নেয় দশম সংসদের বিভিন্ন স্থায়ী কমিটি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৮ নভেম্বর ২০১৮

আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নিয়ে তোড়জোড় চলছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও সব রাজনৈতিক দলে। নতুন সংসদের নেতৃত্বে আসার প্রতিযোগিতা চলছে তৃণমূলে। চলমান দশম সংসদের দিকে ফিরে তাকানোর ফুরসত নেই কারো। দশম জাতীয় সংসদকে সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চাকেন্দ্র করার দাবি ছিল সরকারি ও বিরোধী দলের। এ লক্ষ্যে সংসদ গঠনের শুরুতে ৩৯ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং বিভিন্ন সাংবিধানিক কমিটিসহ আরো ১১ সংসদীয় কমিটি করে সংসদের কাছে সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিতের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছিল। গত পাঁচ বছরে এসব কমিটি ৩ হাজার ২২৫ বৈঠক করে ২৫ হাজার ৪৯৪ জনগুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব বাস্তবায়নের সুপারিশ পাঠানো হয়েছিল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে। পরে আর কোনো দায়বদ্ধতার দেখা মেলেনি সংসদ সচিবালয়ের। পাঠানো এসব সিদ্ধান্তের কত সংখ্যক বাস্তবায়ন হয়েছে, তার কোনো পরিসংখ্যান রাখেনি তারা। সংসদীয় বিভিন্ন কমিটি এবং সংসদ সচিবালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাঠানো সুপারিশের অর্ধেকও বাস্তবায়িত হয়নি। অন্যদিকে মন্ত্রণালয়গুলোর দাবি, কাগজে-কলমে প্রায় সব সিদ্ধান্তই বাস্তবায়িত হয়েছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, দশম জাতীয় সংসদ গঠনের পর ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত এসব সিদ্ধান্ত নেয় বিভিন্ন সংসদীয় কমিটি। কমিটিগুলোর ওইসব বৈঠকের কার্যপত্র, বাস্তবায়নের প্রতিবেদন এবং সংসদে উত্থাপিত কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, কমিটি প্রদত্ত সুপারিশের অর্ধেকও বাস্তবায়ন হয়নি। সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটি। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাই এই কমিটির মূল কাজ। কমিটি তাদের ২১তম বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের খোয়া যাওয়া অর্থ ফেরত আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে। ২০১৬ সালের ১০ মে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ওই সুপারিশ করা হলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। ওই একই বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ খোয়া যাওয়া নিয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ আরো চারটি সুপারিশ করা হয়। এর একটিও বাস্তবায়ন হয়নি।

ওই কমিটির সভাপতি সাবেক ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী। তার বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া থানায়। তিনি প্রায় প্রতিটি বৈঠকে নড়িয়ার নদীভাঙন রোধের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেন। কিন্তু তেমন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভয়াবহ নদীভাঙনের কবলে একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতীয় সংসদের সাংবিধানিক এক কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের চিত্র এমন হলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিগুলোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার সহজেই অনুমেয়।

অন্যদিকে মন্ত্রণালয়ের হিসাব বলছে অন্য কথা। সর্বশেষ ১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ২৪তম বৈঠকে উত্থাপিত সুপারিশ ও বাস্তবায়ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বর্তমান সংসদ গঠনের পর তাদের মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি ১৫৫ সুপারিশ করে। এর মধ্যে জননিরাপত্তা বিভাগ-সংশ্লিষ্ট সুপারিশ ছিল ৯৬। এর মধ্যে ৮৫টি বাস্তবায়িত হয়েছে। এর ৩৪ সিদ্ধান্ত চলমান থাকবে। আর বাস্তবায়নের জন্য চলমান রয়েছে আট সুপারিশ। তিনটি আপাতত বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে জানায় মন্ত্রণালয়। অন্য মন্ত্রণালয়গুলোর দেওয়া বাস্তবায়ন প্রতিবেদনেও কমিটিগুলোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার সন্তোষজনক বলেই দাবি করা হয়।

সংসদীয় কমিটিগুলোর সাচিবিক দায়িত্বপালনকারী একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সরকারের শেষ সময়ে কে আর এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে যাবে। নতুন সংসদে সবকিছু নতুন করে শুরু হবে। তাই যে যেভাবে পারছে সুপারিশ বাস্তবায়নের হার দেখাচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads