• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
শেখ হাসিনার পক্ষেই আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

বিশ্লেষণ

শেখ হাসিনার পক্ষেই আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব

  • শরিফুল ইসলাম বিলু
  • প্রকাশিত ১৩ মার্চ ২০১৯

রাজনীতি-সংগঠন এবং সরকার পরিচালনায় ‘বঙ্গদরদি’ শেখ হাসিনা নিজের গড়া রেকর্ড ক্রমাগত নিজেই অতিক্রম করে চলেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ৭০ বছরের ইতিহাসে ১৯৮১ থেকে এ পর্যন্ত ৩৮ বছর ধরে তিনি দলটির শীর্ষ পদ অলঙ্কৃত করে আসছেন, যা গণতান্ত্রিক বিশ্বে নজিরবিহীন। আবার বাংলাদেশের ৪৮ বছরের পথ-পরিক্রমায় ইতোমধ্যেই তিনি প্রায় ১৬ বছর দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকার পরিচালনা করেছেন, যা এ মেয়াদেই ২০ বছর পূর্ণ করবেন।  এক্ষেত্রেও সারা বিশ্বে শেখ হাসিনার রেকর্ড অনন্য।

শপথ গ্রহণ থেকে এ পর্যন্ত দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, রাষ্ট্র পরিচালনায় বর্তমান মেয়াদে তার অগ্রাধিকারসমূহ এবং লক্ষ্য কী। অর্থনৈতিক উন্নয়নের চলমান ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি এবার তিনি রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সেবা খাতের উন্নয়নে হাত দেবেন।

মাদক প্রতিরোধ এবং দুর্নীতি দমনে চলমান কর্মসূচি জনমনে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপারে মন্ত্রী-এমপিদের সাবধান করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন- ‘বেতন-ভাতা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তারপরও দুর্নীতি করলে কেউ রক্ষা পাবেন না।’

রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রের শিক্ষাতত্ত্ববিদদের মত- শেখ হাসিনার আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা, রাজনৈতিক দর্শন ও উন্নয়ন কৌশল ইতোমধ্যে বিশ্ব-স্বীকৃত; নির্বাচনী রাজনীতিতে নিরুৎসাহিত জনগণের মধ্যে উৎসাহ ফিরিয়ে আনা, দুর্নীতি ও মাদক নিয়ন্ত্রণ করে সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষা এবং সর্বোপরি একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা- এই তিনটি চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবেলা করা গেলে ইতিহাসে শেখ হাসিনা অমর হয়ে থাকবেন।

সচেতন দেশবাসীর মূল্যায়ন- অর্থনৈতিক উন্নয়ন টেকসই করতে যে রাজনীতির ক্ষেত্রেও উন্নতি দরকার, সে তাগিদও শেখ হাসিনা উপলব্ধি করেছেন। তাই জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। বিরোধী ঐক্যফ্রন্টকে সংসদে আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা নিশ্চিত করে বলেছেন- ‘সংসদে এসে যত ইচ্ছা বক্তৃতা করেন, সরকারের সমালোচনা করেন, কোনো বাধা পাবেন না। মাঠের রাজনীতিতে সব দলকে নির্বিঘ্নে কার্যক্রম চালানোতেও কোনো বাধা থাকবে না।’

আওয়ামী লীগের ইতিহাসে সবচেয়ে দুর্দিনে দলের অনিবার্য ভাঙন ঠেকাতে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে শেখ হাসিনাকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকাণ্ডের পর টানা ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে ফিরেই তিনি আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে মজবুত করে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের প্রস্তুতি নেন। সর্বদলীয় রাজনৈতিক জোট গঠন করে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করেন। একানব্বইয়ের নির্বাচনে নিশ্চিত বিজয় জেনেও তাকে অপকৌশলের কাছে পরাজিত হতে হয়। তিনি দমে যাননি। ইতোমধ্যে দুই পর্যায়ে তিন মেয়াদে সরকার পরিচালনা করেছেন। সবশেষ গত ৭ জানুয়ারি ২০১৯ শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

৪৮ বছরের বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই ১৬ বছর সরকার পরিচালনায় অভিজ্ঞতালব্ধ শেখ হাসিনা। তার আমলে যাবতীয় ক্ষেত্রে যে হারে দেশের উন্নতি হয়েছে, তা আর কোনো সরকার করেনি। সততা, আত্মবিশ্বাস, সাহস, বিচক্ষণতা এবং কর্মদক্ষতায় নিজের গড়া রেকর্ড অনেক ক্ষেত্রে তিনি নিজেই অতিক্রম করে চলেছেন। তৃণমূলের হতদরিদ্র থেকে রাজধানীর সুশীল-বিত্তবান কেউই শেখ হাসিনার সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন না। তিনি আত্মবিশ্বাসী, তাই পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান। তিনি সাহসী, তাই বার বার মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে নিজেকে দৃঢ় রেখেছেন। রাজনীতি এবং সরকার পরিচালনা উভয় ক্ষেত্রেই তার বিচক্ষণতা আজ প্রমাণিত। তিনি এতটাই কর্মঠ যে, দিনের ১৮ ঘণ্টা কাজ করেন। তার ঘনিষ্ঠজনদের কাছে এটা অজানা নয় যে, গভীর রাতে সবাই যখন ঘুমে তখন শেখ হাসিনা জেগে জেগে দেশের কাজ করেন। যেকোনো প্রশ্ন বা সমালোচনার সরাসরি জবাব দেওয়া তার স্বভাব। সব মিলে তাই শেখ হাসিনা হয়ে উঠেছেন দেশের নবীন-প্রবীণ নির্বিশেষে সবার আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক।

যেকোনো ক্ষেত্রে দেশের জন্য কিছুটা হলেও অবদান রেখেছেন, এমন সেইসব অসচ্ছল প্রবীণও এখন নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারেন। তারা জানেন যে, কোনো সঙ্কটে শেখ হাসিনা তো আছেন। দরিদ্র প্রবীণরা দোয়া করেন শেখ হাসিনার বয়স্কভাতা পেয়ে। কর্মজীবীরা খুশি স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মান অনুযায়ী পর্যাপ্ত বেতন-ভাতার জন্য। সামরিক, বিজিবি, পুলিশ, আনসার, গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীসহ সেবামূলক কাজে নিয়োজিতরা সন্তুষ্ট নানাবিধ সুযোগ সুবিধার জন্য। তরুণ প্রজন্ম আনন্দিত ডিজিটাল বাংলাদেশ পেয়ে। কৃষক খুশি নিয়মিত সার-বীজ-ঋণ পেয়ে। শ্রমিক খুশি যে, তাদের জন্য শেখ হাসিনা কাজ করছেন। নারী ও শিশুদের জন্যও শেখ হাসিনার কর্মসূচি চোখে পড়ার মতো। ব্যবসা-শিল্পক্ষেত্রে শেখ হাসিনার অবদান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্যেই প্রমাণিত। শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক উন্নয়ন আজ ‘বিশ্ব-মডেল’। তিনি সংবেদনশীল; কারো বিপদে যেমন সমব্যথী হন, আবার আনন্দের সংবাদে হন উল্লসিত।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, শেখ হাসিনা এবার যেমন অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সৃষ্ট জনসন্তুষ্টির মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসেছেন, তেমনই আগামী সংসদ নির্বাচনে তার প্রধান অর্জনের স্লোগান হবে ‘গণতান্ত্রিক রাজনীতির বিকাশ’। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে একমাত্র বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা চাইলেই জাতীয় ঐক্য সম্ভব। তাই দলমত নির্বিশেষে সবার কর্তব্য প্রধানমন্ত্রীর এই ডাকে সাড়া দেওয়া।

প্রায় পাঁচ বছর পর দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচনকে ঘিরে এমন ব্যবস্থার কথা চিন্তা করতে হবে, যাতে ভোটে অনিয়মের কোনো সুযোগই না থাকে। প্রযুক্তির উন্নয়ন যেভাবে চলছে, তাতে এমন ব্যবস্থা এখন আর কঠিন নয়; যে ব্যবস্থায় ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ারও দরকার হবে না। যে যেখানে যে অবস্থায় থাকবেন, মেশিন টিপে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত অঙ্গীকারগুলো ঠিকঠাক পূরণ করা গেলে আগামীতেও জয়ের জন্য শেখ হাসিনাকে ভাবতে হবে না।

তবে অনেক ক্ষেত্রেই অঙ্গীকার পূরণে দলীয়, প্রাতিষ্ঠানিক এবং আইনগত বাধা মোকাবেলার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে কার্যকর উদ্যোগ ও ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষ করে মাদক, সন্ত্রাস ও দুর্নীতি দমনে সরকারি সংস্থাগুলোর পাশাপাশি গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা প্রয়োজন। ফলে এসব বিষয়ে প্রিন্ট মিডিয়াকে হাত খুলে লেখার অধিকার এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে সত্য প্রদর্শনের সুযোগ দিতে হবে। সর্বমহলের ভাষ্য, রাষ্ট্রযন্ত্রের সব ক্ষেত্রে আজ শেখ হাসিনার একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত। কেবল তিনিই পারেন অচলায়তন ভেদ করে বাংলাদেশকে প্রবল সম্ভাবনাময় করে গড়ে তুলতে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads