• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
দুর্ঘটনার মূলে সচেতনতার অভাব মানবসৃষ্ট দুর্যোগ বাড়ছে

দুর্ঘটনার মূলে সচেতনতার অভাব

প্রতীকী ছবি

জাতীয়

দুর্ঘটনার মূলে সচেতনতার অভাব মানবসৃষ্ট দুর্যোগ বাড়ছে

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ২০ এপ্রিল ২০১৯

সম্প্রতি অগ্নিকাণ্ড, সড়ক দুর্ঘটনাসহ মানবসৃষ্ট নানা দুর্ঘটনা ঘটছে। দিন যত যাচ্ছে এ রকম দুর্যোগ-দুর্বিপাক যেন আঁকড়ে ধরছে গোটা জাতিকে। আর এতে সরকারের নীতিনির্ধারক মহলসহ দেশের সর্বত্র উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। গত বুধবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত এক সভায় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এসব বিষয় উল্লেখ করে নাগরিকদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এবং একই সঙ্গে নাগরিকদের সচেতন করার ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন।

সূত্র জানায়, ইলেকট্রিক শর্ট সার্কিট, সিগারেটের আগুন, গ্যাসের চুলা থেকে সাধারণত আগুনের সূত্রপাত ঘটে। এসব সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা এবং অসচেতনতার কারণে ঘটে থাকে। আবার আগুন লাগার পর প্রথম দিকে প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডই থাকে অনেকটা নিয়ন্ত্রিত। অনেক ক্ষেত্রে একটু চোখ কান খোলা রেখে উদ্যোগী হলেই তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। কিন্তু ঘটে তার উল্টো। সচেতনতা না থাকায় আগুন নেভানোর জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নিয়ে মানুষ অন্য তৈজসপত্র নিয়ে ব্যাকুল হয়ে পড়ে। ফলে আগুন কিছুক্ষণের মধ্যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া লালবাগ, বনানী, গুলশান ও যাত্রবাড়ীসহ বিভিন্ন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ব্যাপকতা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। প্রতিবেদনে নাগরিকদের সচেতনতার অভাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। গত বুধবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নিজেও এসব প্রতিবেদন দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধির ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেন।

এ ব্যাপারে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টু বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সাধারণ মানুষ এখন অনেক সচেতন। অনেক বিষয় আছে আমাদের বুঝতে সময় লাগলেও সাধারণ নাগরিকরা দ্রুত বুঝে নেয়। সেটা রাজনৈতিক পরিস্থিতি হোক আর দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট হোক। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে বিভিন্ন বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আর এ উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকেই। কারণ জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় সরকার চলে।

তিনি আরো বলেন, উন্নত বিশ্বে ফায়ার সার্ভিস পর্যায়ক্রমে এলাকাভিত্তিক অগ্নিনিরোধ ও অগ্নিনির্বাপণ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে, যা আমাদের বাংলাদেশে এখনো সেভাবে শুরু হয়নি। অবশ্য আমাদের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অনেক দায়িত্বশীল ও সাহসী। তারা স্বল্প সরঞ্জাম নিয়ে বড় বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা মেকাবেলা করে জানমাল রক্ষা করছে।

তিনি আরো বলেন, শুধু আগুন কেন? সড়ক দুর্ঘটনার ব্যাপারেও সরকারের অনেক কিছু করণীয় আছে। এখনো পরিবহন সেক্টরে অনেক সমস্যা আছে, যেসব সমস্যা সমাধান করাটা সরকারেরই দায়িত্ব। এ সেক্টরে ইনভেস্ট বাড়াতে হবে এবং আরো মনোযোগ দিতে হবে। নইলে শত চিৎকার চেঁচামেচি করেও সমস্যার সমাধান হবে না। সরকারের পাশাপাশি জনগণেরও কিছু দায়িত্ব আছে। ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে চলা, চলন্ত গাড়ি থামিয়ে রাস্তার মাঝখান থেকে গাড়িতে না ওঠা। আন্ডারপাস, ওভারপাস ও ফুট ওভারব্রিজ, জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করা এবং যত্রতত্র রাস্তা পারাপার না হওয়া।

অগ্নি দুর্ঘটনার পাশপাশি সড়ক দুর্ঘটনা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার দিন দিন বাড়ছে। সড়কে দুর্ঘটনার অনেক কারণের মধ্যে মূল কারণ চালকদের সচেতনতার অভাব। এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, দেশের হাসপাতালগুলোর বেডের ২৫ শতাংশে রয়েছে কেবল সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিরা। ১৪ শতাংশ মৃত্যুর কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। এ কারণে বছরে আর্থিক ক্ষতি হয় প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। সারা বিশ্বে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় ১০ লাখ  লোক প্রাণ হারায়, পঙ্গু হয় ৫০ লাখ  লোক। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০ হাজার গাড়ির বিপরীতে দুজন লোকের মৃত্যু হয়; পাকিস্তানে ১৯ জন, ভারতে ২৫ জন এবং বাংলাদেশে ৬০ জনের মৃত্যু হয়।

অন্যদিকে বাংলাদেশে প্রতি এক হাজার লোকের জন্য গণপরিবহন আছে মাত্র দুটি, যেখানে নেপালে ৯টি, ভারতে ১২টি ও পাকিস্তানে ১৪টি। যুক্তরাষ্ট্রে সড়ক দুর্ঘটনা কম হওয়ার কারণ সেখানে চালক ও পথচারী সবাই ট্রাফিক আইন মেনে চলে; ভুয়া লাইসেন্সধারী চালক নেই এবং সড়ক সুপরিসর, চালকরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। আমাদের  দেশে  কেউ ট্রাফিক আইন মানতে চায় না। সড়কে ইচ্ছামতো গাড়ি চালায় চালক। পথচারীরা অসতর্ক। ফলে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলছে। এ  দেশে সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ সাতটি। বেপরোয়া গাড়ি চালানো, অদক্ষ-লাইসেন্সবিহীন চালক নিয়োগ, নিয়ম ভেঙে ওভারলোডিং-ওভারটেকিং, চালকদের দীর্ঘক্ষণ বিরামহীন গাড়ি চালানো, ট্রাফিক আইন অনুসরণ না করা, ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি চলাচল বন্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ না করা এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ও বেহাল সড়ক।

সড়ক দুর্ঘটনার এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি থেকে আমাদের মুক্ত হতে হবে। সরকারের পাশাপাশি সব মহলকে সড়ক দুর্ঘটনা  রোধে এগিয়ে আসতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads