• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
ঋণ বন্ধ হলে ধাক্কা খাবে রেল

ঋণ বন্ধ হলে ধাক্কা খাবে রেল

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

উন্নয়ন প্রকল্পে চীনের প্রাধান্য

ঋণ বন্ধ হলে ধাক্কা খাবে রেল

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৮ মে ২০১৯

বাংলাদেশ রেলের উন্নয়ন প্রকল্পে চীনের প্রাধান্য চলছে। ৬০-৭০টি প্রকল্পের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে জড়িত দেশটি। তারা যদি ঋণের শর্ত কঠোর করে বা কোনো কারণে যদি ঋণ বন্ধ করে দেয় তাহলে বড়সড় ধাক্কা খাবে শাখাটির উন্নয়ন।

২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের সময় ২৭টি প্রকল্পের অর্থায়নে প্রায় ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়।

সুদের হার ধরা হয় ২ শতাংশ, যাতে ব্যবস্থাপনা ফি গুনতে হবে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ হারে। প্রতিশ্রুতি ফি দিতে হবে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ হারে। এতে প্রায় ৬ বছরের রেয়াতকালসহ ঋণ পরিশোধের মেয়াদ হবে ২০ বছর। বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে রেলের উন্নয়নে পদ্মা লিঙ্ক রেল প্রকল্প, রাজধানীর চারপাশে চক্রাকার রেল প্রকল্পসহ প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার ৬০-৭০টি প্রকল্প গৃহীত হয়।

এছাড়া জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশনে ডুয়েল গেজ রেললাইন প্রকল্প (৭৫ কোটি ২৭ লাখ ডলার), আখাউড়া-সিলেট সেকশনে রেলওয়ে ট্র্যাক নির্মাণ (১৭৫ কোটি ডলার) এবং জয়দেবপুর-জামালপুর ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণকাজ। এগুলোর সরাসরি অর্থায়ন ও প্রকল্পে কাজ করা, কোনো প্রকল্পে ফিজিবিলিটি টেস্ট, কোনোটিতে পরামর্শক, আবার কোনো কোনো প্রকল্পে জয়েন্টভেঞ্চার ঠিকাদারিসহ সরাসরি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করে চলেছে চীনা কোম্পানিগুলো। রাষ্ট্রায়ত্ত চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) সরাসরি কাজ করছে এসব প্রকল্পে।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, চীনা অর্থায়নের নানাবিধ শর্ত নিয়ে বর্তমানে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এতে বড় বড় প্রকল্পের বাস্তবায়ন গতি ব্যাহত হতে পারে। ভবিষ্যতে ঋণ নিতে হবে আরো কঠিন শর্তে।

চীনা শর্ত বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। এখন থেকে ৩০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যের প্রকল্পে নমনীয় শর্তে গভর্নমেন্ট কনসেশনাল লোন (জিসিএল) বা সরকারি ছাড়ের সুবিধা নেওয়া যাবে না। পুরোটাই নিতে হবে কঠিন শর্তে প্রিফারেনশিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট (পিবিসি) হিসেবে।

সূত্র জানায়, চীনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে গভর্মেন্ট কনসেশনাল লোন বা জিসিএলের অর্থ চীন সরকার দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। আর পিবিসি ঋণের অর্থ দেয় চীনা এক্সিম ব্যাংক। যখন কোনো প্রকল্পে দুটি ঋণ একসঙ্গে থাকে তখন সেটি প্রক্রিয়াকরণ করতে দুটি সংস্থার অনুমোদনসহ নানা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়।

আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ২০১০ সালে ৬৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে চীন থেকে ২০ সেট ডেমু ট্রেন ক্রয় করেন, যা এখন রেলের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে শর্ত ছিল, যদি চীনের ঋণ গ্রহণ করা হয় তাহলে মালামালও তাদের কাছ থেকে ক্রয় করতে হবে। এছাড়া চীনা অর্থায়নেই বাস্তবায়িত হচ্ছে দেশে সবচেয়ে বড় প্রকল্প পদ্মা লিঙ্ক রেল প্রকল্প। এ প্রকল্পে ২৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিয়েছে চীন এবং প্রকল্পটিও বাস্তবায়ন করছে তারা।

এ প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এর আগে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই থেকে শুরু করে পরামর্শকও ছিল তারা। তবে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মূল কাজ যথাসময়ে শুরু হলেও চীনের ঋণ পেতে দেরি হওয়ায় বেশ কিছুটা পিছিয়ে গেছে পদ্মা লিঙ্ক রেল প্রকল্পের কাজ।

গত ৯ এপ্রিল একনেক বৈঠকে ১৬ হাজার ১০৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকার ‘আখাউড়া থেকে সিলেট সেকশনের মিটারগেজ রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর’ শীর্ষক প্রকল্পটিও পাস হয়। এ প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৭১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এতে সরকার দেবে ৫ হাজার ৪৫০ কোটি ৮ লাখ টাকা আর চীন সরকার ঋণ হিসেবে দেবে ১০ হাজার ৬৫৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। চলতি বছরের জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে প্রকল্পটি।

চীনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে গৃহীত অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে টঙ্গী-ভৈরব রেল প্রকল্প, লাকসাম-আখাউড়া রেল প্রকল্প এবং দোহাজারী-কক্সবাজার প্রকল্পসহ দেশের প্রায় ডজনখানেক ছোট-বড় প্রকল্প। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম বুলেট ট্রেন চালুর জন্য ইতোমধ্যেই সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করেছে চীনা কোম্পানি। পাশাপাশি চলছে আরো ৪-৫টি নতুন রেল প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ। দেশের প্রথম বুলেট ট্রেন প্রকল্পেও শর্ত সাপেক্ষে ঋণ দেবে চীন সরকার। এটি সফল হলে ঢাকা-রাজশাহী রুটেও বুলেট ট্রেন চালুর সম্ভাবনা রয়েছে যার জন্য মূল ভরসা চীনা অর্থায়নই।

এদিকে ১৪ মে মঙ্গলবার দেশীয় অর্থায়নে রাজধানীর চারপাশ ঘিরে চক্র রেলে এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সমীক্ষা চালাতে রেলভবনে চায়না রেলওয়ের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা কার্যক্রম যদিও বাংলাদেশের অর্থায়নে হচ্ছে। চুক্তির মূল্য ২৪ কোটি ৫৬ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ টাকা। এখানে সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় যৌথভাবে কাজ করছে চায়না রেলওয়ে সিয়্যুয়ান সার্ভে অ্যান্ড ডিজাইন গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশের বেটস কনসাল্টিং সার্ভিসেস লিমিটেড এবং ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড অ্যাডভাইজারস লিমিটেড।

রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, সহজ শর্তে চীনের কাছ থেকে এসব ঋণ নেওয়া হয়েছে এবং চুক্তি অনুযায়ী সিআরইসি কোম্পানি কাজ করছে। আন্তর্জাতিকভাবে টেন্ডার দিয়ে সব প্রকল্পে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয় বলেও এ সময় উল্লেখ করেন তিনি।

রেলের সাবেক মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন বলেন, চীন আমাদের প্রচুর ঋণ দিয়ে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা করছে। তবে আমরা ভারত ও এডিবিসহ বহু বিদেশি ঋণে রেলের উন্নয়নে কাজ করছি।

রেলের সাবেক জেনারেল ম্যানেজার সাগর কৃষ্ণ চক্রবর্তী জানান, কোন প্রকল্পে কে অর্থায়ন করবে, তা নির্ধারণের দায়িত্ব ইআরডির। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থ বিভাগ, পরিকল্পনা বিভাগের পরামর্শে তারা দাতার সন্ধান করে। আমাদের প্রকল্পগুলোতে ঋণের বিষয়ে দাতাগোষ্ঠীর সঙ্গে কথাবার্তা বলে সহজ শর্তে ঋণ কারা দেবে, সেটা তারাই নির্ধারণ করে থাকে। তিনি আরো বলেন, চীনা অর্থায়নের প্রকল্পগুলোতে চীনা কোম্পানি কাজ করবে, এটা একটি অবধারিত শর্ত। আবার যখন দেশীয় অর্থায়নে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পরামর্শক নিয়োগ হয়, তখন প্রথমে আন্তর্জাতিকভাবে টেন্ডার ডাকা হয়। যারা সে টেন্ডারে কাজ পায় তাদেরই কাজ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads