• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
ইলিশের বাড়ী চাঁদপুরে ইলিশের আকাল, হতাশ জেলেরা

চাঁদপুর হাইমপুর সদর উপজেলার হরিণা ফেরিঘাট এলাকায় জেলে নৌকা

ছবি: বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

ইলিশের বাড়ী চাঁদপুরে ইলিশের আকাল, হতাশ জেলেরা

  • মো. মহিউদ্দিন আল আজাদ, চাঁদপুর প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৭ জুন ২০১৯

রূপালী ইলিশের বাড়ী বলে খ্যাত চাঁদপুরে ইলিশ নেই। ইলিশ না পেয়ে পদ্মা-মেঘনায় জাল ফেলে খালি হাতে ফিরে আসছেন জেলেরা। অল্প যা কিছু পাওয়া যাচ্ছে তার দাম আকাশ চুম্বী।

চাঁদপুর পদ্মা-মেঘনা নদীর উপকূলীয় এলাকায় ৫১ হাজার ১৯০ নিবন্ধিত জেলে পরিবার রয়েছে। বছরের বেশিরভাগ সময় নদীতে থেকে মাছ আহরণ করে তারা জীবন জীবিকা নির্বাহ করেন। জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় সরকার মার্চ-এপ্রিল দুই মাস ইলিশের পোনা জাটকা রক্ষায় মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করে। মা ইলিশ রক্ষায় আবার সেপ্টোম্বরের শেষ ও অক্টোবর মাসের শুরুতে ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া বাকী সময়ে নদীতে মাছ আহরণে কোনো বিধি নিষেধ নেই। কিন্তু এ বছর মার্চ-এপ্রিল এর নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা ইলিশ না পেয়ে হতাশ। কাঙ্ক্ষিতহ ইলিশ পাওয়ার অপেক্ষায় থাকতে হবে আগামী সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত। তবে অনেকের আশা জুন-জুলাইতে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে পাওয়া যেতে পারে ইলিশ।

সরেজমিন চাঁদপুরের হাইমচর ও সদর উপজেলায় জেলেপাড়াগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ জেলেই অলস সময় পার করছেন। কেউ নৌকা মেরামত করছেন, আবার কেউ জাল মেরামত করছেন। নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও মাছ আহরণ না করে সময় জেলেরা সময় কাটাচ্ছে চা দোকানে আড্ডা দিয়ে। জাটকা রক্ষা কর্মসূচীর সময় মৌসুমী অসাধু জেলেরা অধিক পরিমাণে জাটকা ইলিশ নিধন করায় নদী এখন প্রায় মাছ শূন্য। আর যে পরিমাণ পাওয়া যায় তা খরচ উঠানো অসম্ভব।

চাঁদপুর মৎস্যজীবী নেতা তছলিম বেপারী বলেন, ইলিশ আমাদের জেলার ব্র্যান্ডিং পণ্য। ইলিশ রক্ষায় আমরা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখি। কিন্তু বিশাল নদী এলাকায় হাজার হাজার জেলে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। আমাদের জেলার জেলেরা নিষিদ্ধ সময় মাছ আহরণ থেকে বিরত থাকলেও বাইরের জেলার জেলেরা এসে মাছ আহরণ করে। এছাড়া নদীর পানি দূষণ, চর জেগে উঠা ইত্যাদি কারণেও পদ্মা-মেঘনা নদীতে ইলিশের বিচরণ কমেছে। এসব সমস্যা সমাধানে সরকার এগিয়ে আসলে আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা থাকবে। ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে বছর জুড়ে রূপালী ইলিশের স্বাদ নেওয়া যাবে।

হাইমচরে মাছ ধরতে আসা শরীয়তপুরের জেলে কাশেম জানান, শরীয়তপুরে পদ্মায় চর পড়ে যাওয়া আমরা ১৪ জন জেলে বর্ষার শুরুতে হাইমচরে মাছ ধরতে এসেছি। এখান থেকেই দাদন নিয়েছি। মাছের যে অবস্থা দাদন কিভাবে শোধ করবো তা নিয়েই চিন্তায় আছি।

হাইমচর উপজেলার মোহনপুর এলাকার জেলে মিজানুর রহমান বলেন, সাগর থেকে মেঘনা নদীতে ইলিশ আসার পথে বিভিন্ন বাধার সৃষ্টি হয়। চর জেগে উঠা পানি দুষণের কারণে আমার আগের মত রূপালী ইলিশ পাচ্ছি না। এ কারণে আমাদের উপজেলার অনেক জেলে এখন বেকার রয়েছেন।

সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের জেলে শাহজাহান বলেন, ইলিশ পাওয়ার আশায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে নতুন জাল তৈরি করেছি। কিন্তু ইলিশের দেখা মিলছে না। আমরা অন্য পেশায় কাজ করেও অভ্যস্ত নাই। তাই ইলিশ পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। নদীতে ইলিশের বিচরণ শুরু হলে আহরণে নামবো।

সদরের হানারচর ইউনিয়নের মৎস্য ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান সৈয়াল বলেন, আমাদের এলাকায় প্রায় ১০০ জেলে পরিবার রয়েছে। প্রতিদিনই ইলিশ পাওয়ার আশায় নদীতে নামেন। এক নৌকায় কমপক্ষে ৭ থেকে ৯ জন জেলে থাকেন। জ্বালানি খরচসহ যে পরিমাণ খরচ হয়, তাতে যে ইলিশ পাওয়া যায় তাতে জনপ্রতি ২০০ টাকা করেও পাওয় যায়না। বৃষ্টি ও পাহাড়ি পানি নামলে ইলিশের দেখা মিলবে আশা করছি।

হাইমচরের মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান জানান, চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় এখন আর আগেরমতো রূপালি ইলিশ পাওয়া যায় না।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, নদীর নাব্যতা সংকট, নদীতে চর পড়ার কারণ ইলিশ মাছ সাগর থেকে উপরে আসতে বাঁধা পায়। তবে  বর্ষায় নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে চাঁদপুরের পদ্মা মেঘনায় ইলিশ পাওয়া যাবে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী বলেন, মে ও জুন মাসে ইলিশ একটু কমেই থাকে। কারণ মিঠা পানিতে আসা ছোট ইলিশগুলো এ সময়ে সাগরের দিকে চলে যায়। আবার জুলাই আগস্ট মাসের দিকে ডিম ছাড়ার জন্য মিঠা পানিতে আসে। আশা করি, ওই সময় জেলেরা ইলিশ পাবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নদী কেন্দ্র, চাঁদপুরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুঠো ফোনে বলেন, মে, জুন, জুলাই মাস সাধারণত ইলিশের ডাল সিজন। এ সময় অল্প-স্বল্প ইলিশ পাওয়া যায়। যদি এবার ইলিশের অভয়াশ্রম ভালো করে রক্ষা করা হতো তাহলে এ সময়েও কিছু ইলিশ পাওয়া যেত।

তিনি বলেন, আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর ইলিশের প্রজনন মৌসুম। সেই ৩ মাসেই ব্যাপক পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যাবে। এ ছাড়াও যদি বৃষ্টিপাত শুরু হয় এবং নদীর পানি বৃদ্ধি পায় তাহলে এ মৌসুমেও ইলিশ মাছ নদীতে ধরা পড়বে।

এ কর্মকর্তা আরো বলেন, ২০১৯-২০২০ সালে বাংলাদেশে ইলিশ আহরণের লক্ষমাত্রা হলো ৫ লাখ ৭০ হাজার টন। গত মৌসুমে ইলিশ আহরণের লক্ষমাত্রা ছিল ৫ লাখ ২৫ হাজার টন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads