• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
তামাকে রাজস্ব আয়ের চেয়ে চিকিৎসাব্যয় বেশি

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

তামাকে রাজস্ব আয়ের চেয়ে চিকিৎসাব্যয় বেশি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২১ জুন ২০১৯

বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির এক জরিপ জানিয়েছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৩ হাজার কোটি টাকা, কিন্তু তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায় দেশে বছরে ব্যয় হয় ৩০ হাজার কোটি টাকা। ফলে রাজস্ব আয়ের চেয়ে তামাকজনিত কারণে আর্থিক ক্ষতি বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে জরিপে।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টেকনিক্যাল অফিসার ড. মাহফুজুল হক সংবাদমাধ্যমকে জানান, তামাক থেকে অবশ্যই সরকার রাজস্ব পায়, এটি সত্যি কথা। কিন্তু অন্যদিকে তামাক ব্যবহারজনিত কারণে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ায় নিজের পকেট এবং সরকারি সিস্টেম থেকেও টাকা খরচ হয়। এই টাকার পরিমাণ আদায় হওয়া রাজস্বের থেকে বেশি। সুতরাং আমরা শুধু ইকোনমিক টার্মেও যদি চিন্তা করি যে টাকার হিসেবে কোনটা লাভজনক সে ক্ষেত্রে যদি ‘টোটাল তামাক’ বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব হারাবে তার চেয়েও বেশি গেইন করবে। কারণ তামাকজনিত কারণে মানুষ অসুস্থ হবে না এবং সে টাকা খরচ হবে না।

ধূমপানবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের বলেন, বাংলাদেশে যেসব কারণে অকালমৃত্যু হয় তার পঞ্চম কারণ তামাক। বাংলাদেশ যখন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তখন রোগ, মৃত্যু আর পঙ্গুত্বের বোঝা বাড়িয়ে সেই অগ্রযাত্রাকে স্তিমিত করে দিচ্ছে তামাক।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তামাক কোম্পানিগুলো সরকারকে অনেক বেশি রাজস্ব দেওয়ার কথা বলে আসছে বরাবরই। কিন্তু এর থেকে সৃষ্ট রোগের চিকিৎসায় যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয় তা রাজস্বের তুলনায় বেশি।

এদিকে সমীক্ষায় দেখা গেছে, মুখের ক্যানসার আক্রান্তদের ৯৫ শতাংশেরই ক্যানসারের কারণ ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যে (পান-জর্দা-গুল) আসক্তি। যদিও ২০১৬ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান স্পিকার সামিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার কথা জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওরাল অ্যান্ড মেক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ওরাল ক্যানসার সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ডা. মাহমুদা আক্তার বলেন, ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য ব্যবহারের কারণে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তামাকের কারণে অসুখ হওয়ার জন্য সরকারের স্বাস্থ্যসেবা এবং তার আলোকে যত অ্যালোকেশন হয় সেই খরচটা অনেক বেশি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে ধূমপান ও তামাক সেবনের কারণে ১২ লাখ মানুষ আটটি প্রাণঘাতী অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ৩ লাখ ৮২ হাজার মানুষ অকাল পঙ্গুত্বের শিকার হয় আর তামাকজনিত রোগে ভোগে ১২ লাখ মানুষ।

এছাড়া টোব্যাকো অ্যাটলাস শিরোনামের আন্তর্জাতিক এক প্রকাশনায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ তামাকজনিত রোগে মারা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তামাক ব্যবহারকে অসংক্রামক রোগের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণায় দেখা গেছে, হূদরোগ, স্ট্রোক, ক্যানসার, ডায়াবেটিসের মতো অসংক্রামক রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের ৯৮ শতাংশ মানুষ। আর তারা অসংক্রামক রোগের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে তামাক ব্যবহারকে চিহ্নিত করেছে।

তামাক কোম্পানি রাজস্বে অবদান রাখার যে ‘ক্লেইম’টা করে এটা পুরো সত্য নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে এই তামাকের কারণে অর্থনীতিতে লাভের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ বেশি এবং এই প্রধান ক্ষতিটাই বিবেচ্য হওয়া উচিত।

অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, টোব্যাকো থেকে একটা বড় রাজস্ব আসে, সে কারণে অনেকেই মনে করেন এমন কিছু করা উচিত না যে, এই সেক্টরটা চলে যায়। কিন্তু অর্থনৈতিক ডাইমেনশন যদি দেখা যায় তাহলে দেখা যাবে এই সেক্টর থেকে যে পরিমাণ কর্মসংস্থান বা রাজস্ব আসছে তার প্রভাবে একদিকে যেমন স্বাস্থ্য খরচ বাড়ছে তেমনি একটি অসুস্থ জাতি নিয়ে গড়ে উঠবে। যাদের অল্প বয়সে কর্মক্ষমতা লোপ পাবে, যা কি না অর্থনীতির বিচারে একটি বড় ক্ষতি।

হয়তো একদিনে তামাকমুক্ত সমাজ গড়া যাবে না মন্তব্য করে ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, কিন্তু ধীরে ধীরে সেদিকেই যেতে হবে। তামাক উৎপাদনের জমির ব্যবহার এমন দিকে নিতে হবে যে কাজ থাকবে, উৎপাদন থাকবে এবং এই পণ্যের চাহিদা আর থাকবে না। যে টাকা অন্যদিকে ব্যয় হতে পারত সেটা ব্যয় হচ্ছে চিকিৎসায়। একই সঙ্গে তামাকের উৎপাদনের ফলে অন্য ফসলের উৎপাদন হুমকিতে ফেলে, এগুলোও ক্ষতির বিবেচনায় নিতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads