• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
‘বিশুদ্ধ পানি চাই’

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

‘বিশুদ্ধ পানি চাই’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৫ জুলাই ২০১৯

আমাদের দরকার পানি। আমরা বিশুদ্ধ পানি চাই। ওয়াসা যদি সমস্যার সমাধান করতে পারে তাহলে ভালো। ওয়াসার পানির দূষণ নিয়ে শুনানিতে গতকাল বুধবার এমন মন্তব্য করেছেন বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

ওয়াসার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম মাসুম। রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তানভীর আহমেদ। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, সমন্বিত পানি পরীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল ফেকাল কলিফর্ম পাওয়া গিয়েছিল। সেই প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশ ছিল- সেগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে। আইসিডিডিআর,বি ও বুয়েটে (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) পানি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। ইতোমধ্যে পাতলা খান লেনের পানির রিপোর্ট পেয়েছি। মিরপুরেরটা আগামী রোববার পাব। এরপর তানভীর আহমেদ বলেন, আদেশের পরে পানি পরীক্ষার জন্য কমিটি গঠন করতে সময় লেগেছিল তিন মাস। আজকে প্রতিবেদনের ওপর জবাব দাখিলের কথা।

এ সময় আইনজীবীদের উদ্দেশে আদালত বলেন, আমাদের বিশুদ্ধ পানি চাই। ওয়াসা এটা নিশ্চিত করতে পারলে ভালো। এরপর আদালত পরবর্তী শুনানির জন্য ৩০ জুলাই দিন ধার্য করেন। উল্লেখ্য, পানি পরীক্ষায় আদালতের নির্দেশে গঠিত চার সদস্যের কমিটির প্রতিবেদন গত ৭ জুলাই আদালতে উপস্থাপন করা হয়। এতে ঢাকা ওয়াসার ১০টি বিতরণ জোনের ৩৪টি নমুনার মধ্যে আটটি পানির নমুনায় ব্যাকটেরিয়াজনিত দূষণ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। আদালত এ প্রতিবেদন সম্পর্কে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে চেয়ে ২৪ জুলাই শুনানির দিন রাখেন। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার রিট মামলাটি কার্যতালিকায় উঠে আসে।

পরে মাসুম বলেন, মিরপুর ও পাতলা খান লেনে পাওয়া ব্যাকটেরিয়া মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন। সেই ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া হলো ফেকেল ও ই-কোলাই। সুপারিশ অনুসারে আমরা ওয়ান বাই ওয়ান কারেক্টিফিকেশনে গিয়েছি।

পানি পরীক্ষার সমন্বিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওয়াসার ১০টি বিতরণ জোনের বিভিন্ন এলাকা থেকে দৈবচয়ন ও দূষণের অভিযোগ রয়েছে এমন ৩৪টি স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে কমিটি। এর মধ্যে ৮টি নমুনাতে ব্যাকটেরিয়াজনিত দূষণ পাওয়া গেছে। গত ১৬ মে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষে পানি পরীক্ষাবিষয়ক একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

প্রতিবেদনে ঢাকা ওয়াসার লিংকে (হটলাইন) গত তিন মাসে ময়লা পানির অভিযোগের তালিকা বিশ্লেষণ করে ১০টি জোনের ৫৯ এলাকায় ময়লা পানির প্রবণতা বেশি বলে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, গত ১৪ মে পানি পরীক্ষা কমিটির তৃতীয় সভা হয়। সভায় বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং আইসিডিডিআর,বি’র ল্যাবে পানির বিভিন্ন প্যারামিটারের মূল্যহার একীভূত করে মোট বাজেট সংযুক্ত করা হয়। এতে বলা হয়, এই ১০টি জোনের প্রত্যেক এলাকা থেকে ৩৫৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হবে। ফলে মোট নমুনার সংখ্যা দাঁড়াবে ১০৬৫টি। তিনটি ল্যাবরেটরিতে নমুনাগুলোর রোগ-জীবাণু ও ভৌত রাসায়নিক সংক্রান্ত পরীক্ষায় খরচ হবে মোট ৭৫ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ টাকা।

এ প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে মতামত শুনতে ওই কমিটির সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের (মাইক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্ট) চেয়ারম্যান ড. সাবিতা রেজওয়ানা রহমানকে আদালতে আসতে বলেন। ২১ মে তিনি হাইকোর্টে আসেন। আদালতে অধ্যাপক সাবিতা বলেন, যেসব পানিতে ময়লা দেখা যাচ্ছে বা ঘোলা সেগুলো পরীক্ষার দরকার নেই। সেগুলো তো রিজেক্টেড। যেটা সাধারণত স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এমন পরিষ্কার পানি পরীক্ষায় অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি যা পান করার পর কোনো এলাকায় রোগ ছড়াবার তথ্য মেলে। ওয়াসা ৫৯ এলাকার যে রিপোর্ট দিয়েছে তা কয়েক মাস আগের। ওয়াসার পানির উৎস হলো ভূমিস্থ, ভূগর্ভস্থ, শীতলক্ষ্যা বা বুড়িগঙ্গা। এসব উৎসের পানি ‘সিজন টু সিজনে’ তারতম্য থাকতে পারে।

পানি পরীক্ষার খরচের বিষয়ে বলেন, প্রতি স্যাম্পলে লাগবে পাঁচ হাজার টাকা।  সেক্ষেত্রে ৩৪ স্যাম্পলে মোট এক লাখ ৭০ হাজার টাকা খরচ হবে। এরপর আদালত আদেশে হাইকোর্ট ৩৪ পয়েন্টে নমুনা সংগ্রহে পানি পরীক্ষা করে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন। ওই আদেশ অনুসারে, ২৭ জুন অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে তা হস্তান্তর করেন।

প্রসঙ্গত, এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে গত বছরের ৬ নভেম্বর হাইকোর্ট ঢাকা ওয়াসার পানি পরীক্ষা করতে প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে চার সদস্যের কমিটি গঠনের আদেশ দেন। গত ১৮ এপ্রিল স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। কমিটির সদস্যরা হলেন- ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী মনিরুল আলম, বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম বদরুজ্জামান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সাবিতা রেজওয়ানা রহমান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads