• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
চামড়া নিয়ে বড় দুশ্চিন্তা

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

চামড়া নিয়ে বড় দুশ্চিন্তা

  • নাজমুল হুসাইন
  • প্রকাশিত ২৬ জুলাই ২০১৯

দিন যত যাচ্ছে ততই পানির দরে নামছে পশুর চামড়ার দাম। গত কয়েক বছর থেকে এ খাতে যে মন্দাভাব বিরাজ করছে, সেটা এখন ধসে রূপ নিচ্ছে। গত ঈদুল আজাহায় এক লাখ টাকা দামের গরুর চামড়া হাজার টাকাও বিক্রি হয়নি। আর এবার তার থেকেও কমদামে চামড়া কিনতে চান ব্যবসায়ীরা। 

কেন এমন পরিস্থিতি— এ প্রশ্নের জবাবে চামড়া খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারেই চামড়ার দাম পড়তি। পাশাপাশি বাংলাদেশ চামড়া নিয়ে ইউরোপভিত্তিক জোট লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি)  সদস্য না হওয়ায় গত কয়েক বছরে প্রচুর বিদেশি ক্রেতা হারিয়েছে। এতে দেশ থেকে কমে গেছে চামড়া রপ্তানি। এমন অবস্থায় গত ঈদ ও পরবর্তী সময়ে সারা দেশে সংগৃহীত প্রায় অর্ধেক চামড়া দেশে মজুদ রয়ে গেছে। এর আর্থিক মূল্য ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা এ বছর আরো কমদামে চামড়া কিনতে চান জানিয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহমেদ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ চামড়া অবিক্রীত রয়ে গেছে। আর এখন ব্যাংকগুলোও চামড়া খাতে বিনিয়োগ করছে না। এ কারণে আমরা আসন্ন ঈদে গত বছরের থেকে কমদামে চামড়া সংগ্রহের জন্য মন্ত্রণালয়ের (বাণিজ্য মন্ত্রণালয়) সঙ্গে বৈঠকে জানাব।

তিনি বলেন, সাভারের চামড়াশিল্প নগরীর কর্মপরিবেশ সন্তোষজনক না হওয়ায় আমরা ইউরোপভিত্তিক জোট লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সদস্য হতে পারছি না। এ জন্য রপ্তানিকারকরা চামড়ার বাড়তি মূল্যও পাচ্ছে না। সব মিলিয়ে রপ্তানি কমছে। এখন ব্যবসায়ীরা ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন।

রপ্তানি কমার তথ্য উঠে এসেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যেও। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ রপ্তানি আয়ের উৎস চামড়া শিল্পের খরা কাটেনি। গত বছরও ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি নিয়েই শেষ হয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি। তথ্যনুয়ায়ী গত বছর এ খাতের রপ্তানি আয় কমেছে ৬ দশমিক ০৬ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমেছে ৯ দশমিক ২৭ শতাংশ। এ সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে ১০১ কোটি ৯৮ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ, যা আগের বছরে ছিল ১০৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলার।

এদিকে দেশের অভ্যন্তরেও বিকল্প চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনে সুখবর নেই। বাড়েনি চামড়া থেকে প্রস্তুতকৃত পণ্যের রপ্তানিও। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধের পর থেকে এ দেশের ক্রয়াদেশ কমে গেছে। বাংলাদেশ থেকে কোরিয়ায় বিপুল পরিমাণ চামড়া রপ্তানি হলেও সেটি বন্ধ। অন্যদিকে মানুষ এখন ব্যয় কমাতে চামড়ার বিকল্প পণ্যের দিকে ঝুঁকছে। সবমিলে এ খাতে ভালো কিছু হচ্ছে না। সরকারের এসব বিষয়ে আরো সহযোগিতা প্রয়োজন।

গত ঈদে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে সরকার চামড়ার দাম আগের বারের চেয়েও কম নির্ধারণ করেছিল। তারপরও কোরবানির পর এমন হয়েছে যে সে দরও ঠিক থাকেনি। শেষে কোরবানির পশুর চামড়া কেনাবেচা হয়েছে সরকার নির্ধারিত দরের চেয়েও কমে। রাজধানীতে সরকারের বেঁধে দেওয়া প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা হলেও ৩০ টাকার নিচে ছিল বেশির ভাগ চামড়ার দাম। এমনও হয়েছে যে অনেকে চামড়া বিক্রি না করতে পেরে সেটা ফেলে দিয়েছিলেন।

এবার আসন্ন ঈদ বাজার নিয়ে কাঁচা চামড়ার আড়তদারদের সংগঠন হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, এবার ট্যানারি মালিকদের চামড়া কেনার আগ্রহ আরো কম। আবার আমাদের গতবারের টাকাও এখনো পুরোপুরি পরিশোধ করা হয়নি। ফলে আমরাও ব্যবসায়ীদের টাকা এখনো শোধ দিতে পারিনি। ফলে অর্থসংকটের শঙ্কা রয়ে গেছে।

বিটিএ’র তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশ থেকে বছরে কমবেশি ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া। তবে বছরের মোট জোগানের অর্ধেকের বেশি আসে কোরবানির ঈদের সময়।

আর চামড়ার দাম নিয়ে শঙ্কা থাকায় এ বছর চামড়া পাচার বাড়তে পারে বলেও অনেক ব্যবসায়ীর অভিমত। তারা বলেন, এ ঈদে সংগৃহীত চামড়ার একটি বড় অংশ পাচারের আশঙ্কা করা হচ্ছে। আড়তদারদের দাবি, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা প্রতি বছরই চামড়া পাচার করেন। দাম কম হলে দেশের আড়তে চামড়া বিক্রি না করে ভারতে পাচার করা হয়। যদিও পরিস্থিতি বিবেচনায় অবৈধভাবে চামড়া পাচার ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads