• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসছে নিষিদ্ধ ওষুধ?

ছবি : সংগ‍ৃহীত

জাতীয়

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসছে নিষিদ্ধ ওষুধ?

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৪ আগস্ট ২০১৯

সারা দেশে ডেঙ্গু প্রায় মহামারী আকার ধারণ করেছে। এর মাঝে প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যু। আতঙ্ক নিয়ে হাসপাতালে ছুটছেন মানুষ। এর মাঝে সংশ্লিষ্টরা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ব্যবহূত মশার ওষুধের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এ ওষুধে মশা না মরার কথাও জানান তারা।

এমন নানা প্রশ্ন ও সন্দেহের মাঝে বিদেশ থেকে নতুন করে চারটি ওষুধ কেনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তাতেও দেখা দিয়েছে জটিলতা। যে চারটি ওষুধ কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেগুলোও জনস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ নয় বলে জানায় একাধিক সূত্র।

তথ্যানুযায়ী, চারটির দুটি জনস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ না হওয়ায় প্রত্যাহার করে নেয় থাইল্যান্ড সরকার। আর একটি ওষুধ পরিবেশসম্মত না হওয়ায় এক যুগ আগেই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তার রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে। এ ছাড়া একটি ওষুধ নিয়ে বিতর্কের কথা জানান কীটতত্ত্ববিদরা।

গত ২৮ জুলাই বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের যৌথ উদ্যোগে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কীটনাশক বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ অনুযায়ী চারটি ওষুধ কেনার সিদ্ধান্ত হয়। ওষুধগুলো হচ্ছে ম্যালাথিউন ৫৭% ইসি (গধষধঃযরড়হ ৫৭% ঊঈ), ম্যালাথিউন ৫% আরএফইউ (গধষধঃযরড়হ ৫% জঋট), ডেল্টামেথ্রিন+পিআরও-২% ইডব্লিউ (উবষঃধসবঃযৎরহ+চজঙ-২% ঊড), প্রিমিফোস-মিথাইল ৫০% ইসি (চরৎরসরঢ়যড়ং-গবঃযুষ ৫০% ঊঈ)।

এদিকে বিপিএল লিমিটেড কোম্পানির ‘ম্যালাথিউন ৫৭% ইসি’ কীটনাশকটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বাতিল হওয়া কীটনাশকের তালিকায় রয়েছে। পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলায় ২০০৭ সালের দিকে এর রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে সংস্থাটি। এর সিরিয়াল নং এপি-৬৮। এর আগে ২০০৩ সালের দিকে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন মশানিধনে এই ওষুধটি ব্যবহার করত। বর্তমানে বাতিল হওয়া এই ওষুধটিও কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাকি ওষুধগুলোর রেজিস্ট্রেশন নেই।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. শরীফ আহমেদ বলেন, ‘আলোচনা হয়েছে। যে চারটি ওষুধের নাম এসেছে তার মধ্যে দুটি ওষুধই থাইল্যান্ডে ফ্রিজআউট (প্রত্যাহার) করা হয়েছে। থাইল্যান্ড থেকে এ খবর পেয়েছি। এখন যেটা থাইল্যান্ড থেকে ফ্রিজআউট করা হয়েছে সেটা কি নেওয়া যাবে? এর সঙ্গে পরিবেশের একটা বিষয় আছে। পরিবেশসম্মত না হলে সেটা নেওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘ওষুধ আনার পর এটার ফিল্ড টেস্ট করতে হবে। এ জন্য মশার লার্ভা ধরে ২৪ ঘণ্টা গ্লুকোজ দিয়ে রাখতে হবে। এরপর এটা বড় হয়ে মশা হবে। তারপর এটার ফিল্ড টেস্ট করতে হবে। আমরা যখনই ওষুধের ভালো রেজাল্ট দেখবো তখনই সরকারের উচ্চ পর্যায়কে রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার জন্য জানাবো।’ তিনি জানান, ওষুধগুলো আমদানির ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কীটনাশকের নমুনা বিদেশ থেকে ৩১ জুলাই পৌঁছাবে। নমুনা পাওয়ার পর মহাখালীর আইইডিসিসআরে কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য পাঠাতে হবে। পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পর দুই সিটি করপোরেশন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করবে। রেজিস্ট্রেশন সম্পাদনের পরপরই কীটনাশক আমদানির জন্য এলসি খোলা হবে। রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এলসি পাওয়ার পর কীটনাশক উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করবে। উৎপাদিত কীটনাশক কার্গো বিমানে নিকটবর্তী শিডিউল অনুযায়ী বাংলাদেশে আনা হবে। প্রত্যাশিত কীটনাশক কাস্টমস ক্লিয়ারিং শেষে সিটি করপোরেশনের হাতে পৌঁছাবে। এ কীটনাশক নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশ্রণ শেষে ব্যবহার করতে হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘ম্যালাথিউন সারা পৃথিবীতে ব্যবহার হয়। তবে প্রিমিফোস-মিথাইল ৫০% ইসি নিয়ে একটু কথাবার্তা রয়েছে। তারা কি এটাও তালিকায় ঢুকিয়ে দিয়েছে? আর ‘ম্যালাথিউন ৫৭% ই সি’ যদি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নিষিদ্ধ করে থাকে তাহলে সেদিন যে মিটিং হয়েছিল সেখানে তাদের পরিচালকসহ সবাই উপস্থিত ছিলেন। তারা কেন বিষয়টি অবহিত করলেন না? যদি নিষিদ্ধ করা হয়, কী কারণে করা হয়েছে তার ব্যাখ্যা দিলেন না? তাদের তো মিটিংয়ে ডাকা হয়েছে, তারা সরকারকে গাইড করবে। সেখানে গিয়ে কেন মুখ বন্ধ করে ছিলেন?’ তিনি বলেন, ‘আমিও ওই কমিটির সদস্য। সেই মিটিংয়ে তো নির্দিষ্ট কোনো ওষুধের নাম উল্লেখ করা হয়নি।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ের পরিচালক (বালাইনাশক প্রশাসন ও মান নিয়ন্ত্রণ) কৃষিবিদ এ জেড এম ছাব্বির ইবনে জাহান বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তটি সরকারের হাই পজিশন থেকে হয়েছে। তাই কোনো মন্তব্য করতে পারব না।’

ওষুধ কখন আসবে তা নিয়েও ধোঁয়াশা : এদিকে ডেঙ্গু প্রতিরোধের নতুন ওষুধ কখন আসবে এ নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওষুধ আসতে কমপক্ষে চার মাস লাগবে। তারা এও বলছেন, ওই সময়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ রাজধানীসহ সারা দেশে থাকবে না।

গত ১ আগস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সেবাকক্ষে ডেঙ্গুবিষয়ক সমন্বয় সভায় মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘ডেঙ্গু পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে, আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।’ আর উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, নতুন ওষুধ আনার জন্য কয়েক দিন ধরেই জোর তৎপরতা চলছে। আইনি বাধা দূর হয়েছে। সাংবাদিকরা উত্তরের মেয়রকে প্রশ্ন করেন, ‘নতুন ওষুধ কবে আসছে?’ উত্তরে মেয়র বলেন, ‘আমি কবে আনছি, ডেটটি বলব না। আমরা চেষ্টা করছি যতদ্রুত সম্ভব ওষুধটা যেন আনা যায়।’

নতুন ওষুধ কবে আসবে, এটা যেমন পরিষ্কার হচ্ছে না তেমনি ওষুধ এলেই তা সঙ্গে সঙ্গে কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বিধিবিধান মেনে ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে হবে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি না, তা-ও জানতে হবে। এই পরীক্ষা করবে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।

প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, সব নিয়মনীতি ও প্রক্রিয়া মেনে পরীক্ষা শেষ করতে ৭ থেকে ১০ দিন লাগে। তিনি বলেন, ওষুধ কিনবে সিটি করপোরেশন। আমাদের কাছে নমুনা আসবে উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ের পরীক্ষার পর আমরা ওই স্যাম্পলের গুণগতমান পরীক্ষা করব। অর্থাৎ, যে মশার ওপর প্রয়োগ হবে, সে মশা সংগ্রহ করে তার ওপর প্রয়োগ করা হবে। পূর্ণাঙ্গ মশা মরে কি না ও মশার লার্ভা ধ্বংস হয় কি না, সেটা পরীক্ষা করা হবে। আমাদের কাছে নমুনা এলে পরীক্ষা করতে দুই-তিন দিন সময় লাগবে। কিন্তু মাঠপর্যায়ে প্রয়োগ করতে সময় লাগে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads