• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

ধরাছোঁয়ার বাইরে বিদেশিরা

স্থানীয় এনজিওর ওপর খড়্গ

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ

  • মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার
  • প্রকাশিত ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনবিরোধী বিতর্কিত ভূমিকার জন্য অনেক বিদেশি এনজিওর নাম উঠে এলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে তারা। অন্যদিকে ছোট ছোট কারণে খড়্গ নেমে আসছে স্থানীয় এনজিওর ওপর। এতে চরম বেকাদায় পড়েছে এসব এনজিওর কয়েক হাজার কর্মী।

কক্সবাজার এনজিও ফোরামের চেয়ারম্যান আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে যে মহাসমাবেশ করেছে সেখানে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ যে বক্তব্য দিয়েছেন তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থ হয়েছে? তার পাশে যেসব বিদেশি ছিল তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা হয়েছে? আমার জানামতে, কোরবানির ঈদের আগে তুর্কি পাহাড়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক এনজিও দা-ছুরি, গরু জবাই করার লম্বা কিরিচ সরবরাহ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা হয়েছে? মূলত গরিবের বৌ সবার ভাবি, সে জন্য বড় এনজিওর টাকায় চলা স্থানীয় এনজিও মুক্তির ওপর সবাই ভর করেছে। আমার মতে এটা অশনিসংকেত। কারণ কক্সবাজারে স্থানীয় এনজিও আছে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি, যেখানে ৯৫% স্থানীয় ছেলেমেয়েরা চাকরি করে। হ্যাঁ, যদি কেউ অপরাধ করে থাকে তার বিচার হওয়া উচিত। তবে সেটা যেন সবার ক্ষেত্রে সমান হয়।

তিনি বলেন, সবাই জানে কারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাধা দিচ্ছে, কারা রোহিঙ্গাদের ব্যানার-ফেস্টুন লিখে দিয়েছে। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে এখনো কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? তাহলে আমরা কি ধরে নেব স্থানীয় এনজিওগুলোর ওপর খড়্গ নামছে?

টেকনাফ উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন রাজু বলেন, এই কথা ঠিক এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের মনে চরম ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। কারণ এনজিওগুলোর কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হচ্ছে না এটা সবাই জানে। তিনি বলেন, এনজিওগুলোই রোহিঙ্গাদের নানাভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রত্যাবাসনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে বিচার হলে সবার জন্য সমানভাবে হতে হবে। বিদেশি এনজিওর প্রভাব বেশি তাই তাদের বিরুদ্ধে এনজিও ব্যুরো কোনো ব্যবস্থা নেবে না, আর আমাদের স্থানীয় এনজিওগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করে দেবে, এটা মানতে পারছি না।

স্থানীয় এনজিও বন্ধ হয়ে গেলে ঠিকই লাভবান হবে বিদেশি এনজিওগুলো। তাহলে কি আমরা বিদেশি এনজিওগুলোকে প্রশ্রয় দিচ্ছি? আমার জানা মতে, এর আগে বহু এনজিও রোহিঙ্গাদের দা, ছুরি, খন্তি, বঁটিসহ অনেক সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে। উখিয়ার রুমখা পালং ইউনিয়নের নাসরিন আক্তার চাকরি করেন স্থানীয় এনজিও মুক্তির শিক্ষা প্রজেক্টে। তিনি বলেন, আগে আমরা প্রতিবেশী অনেকের কাছ থেকে সহায়তা নিয়ে চলতাম। আমার বাবা সারা দিন মাঠে মজুরি করেও আমাদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে পারত না। অনেক

এনজিওতে চেষ্টা করে কোথাও চাকরি হয়নি। পরে মুক্তিতে চাকরি করার পর আমাদের পরিবারে কিছুটা সচ্ছলতা

এসেছে। বিদেশি এনজিওতে যখন চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে গেছি তখন অভিজ্ঞতার কথা বলে চাকরি দেয়নি। আমার মতে, স্থানীয় এনজিওগুলো বন্ধ হয়ে গেলে কক্সবাজারের স্থানীয়

ছেলেমেয়েরা মারাত্মক অসুবিধার মধ্যে পড়বে।

উখিয়া কলেজের অধ্যাপক অজিত দাশ বলেন, আমার জানামতে বিদেশি দাতা সংস্থার কথা ছাড়া স্থানীয় এনজিওর কোনো ক্ষমতা নেই কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা বা বাতিল করার। যদি স্থানীয়দের মধ্যে নিড়ানি সরবরাহ করার জন্য মুক্তির প্রকল্প বন্ধ করা হয়, তাহলে এর আগে যারা এগুলো অর্ডার দিয়ে প্রকল্প তৈরি করেছে সেসব বিদেশি এনজিওর প্রকল্প বন্ধ করা উচিত। জেনেশুনে কক্সবাজারের স্থানীয় মানুষের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ না করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, এছাড়া বিশাল রোহিঙ্গা সমাবেশে কারা টি-শার্ট সরবরাহ করেছিল, অনুমতি ছাড়া তারা কীভাবে এতবড় সমাবেশ করল, তাদের পাশে থাকা বিদেশিদের কেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো না, এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চায় কক্সবাজারের মানুষ।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রয়োগ হবে। এখন থেকে সব এনজিওর ব্যাপারেই নিয়মিত খোঁজখবর রাখা হবে, সেটা দেশি-বিদেশি যেই হোক। দেশের স্বার্থ পরিপন্থী কোনো কিছু হলেই সেখানে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads