• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বিক্রি হচ্ছে রেনিটিডিন

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৫ অক্টোবর ২০১৯

গ্যাস্ট্রিকের বহুল প্রচলিত ওষুধ রেনিটিডিনে ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান পাওয়ায় বাংলাদেশে তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে বাজার থেকে এই ওষুধ তুলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় ওষুধ শিল্প সমিতি। তবুও এখনো বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ রেনিটিডিন।

জানা গেছে, এখন পর্যন্ত কোনো কোম্পানি রেনিটিডিন ওষুধ বাজারে থেকে উঠিয়ে নেয়নি। ফলে আগের মতো এখনো এ ওষুধটি বিক্রি হচ্ছে।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, রাজধানীর বেশিরভাগ ওষুধের দোকানে প্রকাশ্যে রেনিটিডিন বিক্রি হচ্ছে। ট্যাবলেটের পাশাপাশি সিরাপও বিক্রি করছে ওষুধ ব্যবসায়ীর।

জানতে চাইলে এসব দোকানি বলেন, সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে তাদের কাছে কোনো ধরনের নির্দেশনা আসেনি। গণমাধ্যমে কিছু প্রতিবেদন দেখলেও সরাসরি তাদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এদিকে ওষুধ কোম্পানিগুলো নতুন রেনিটিডিনের চালান না দিলেও পুরনো রেনিটিডিন ফেরত নিয়ে যায়নি।

এক ওষুধ বিক্রেতা বলেন, ওষুধ কোম্পানিগুলো সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে, তারা এই ওষুধ ফেরত নেবে না। অন্যদিকে ক্রেতারাও দীর্ঘদিন ধরে এ ওষুধ গ্রহণ করায় তাদের মধ্যে একটা বিশ্বাসযোগ্যতা চলে এসেছে। তাই বিক্রিও চলছে। কোম্পানিগুলো নতুন রেনিটিডিনের চালান না দিলেও পুরনো রেনিটিডিনগুলোই এখন বিক্রি হচ্ছে। আর কিছু কিছু ওষুধ, যেমন ব্যথানাশক, গ্যাস্ট্রিক, স্যালাইনের চালান ওষুধের দোকানগুলোতে সব সময় বেশি থাকে। কেননা এগুলোর চাহিদাই বেশি।

অন্য আরেক ব্যবসায়ী বলেন, কোম্পানিগুলো দোকানে মজুদ থাকা এসব ওষুধ বাজেয়াপ্ত করলে অর্থাৎ আমাদের কাছ থেকে ফিরিয়ে না নিয়ে গেলে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হবে। সেই ব্যবসায়িক ক্ষতি পুষিয়ে ওঠাটা খুব কঠিন হবে বলেই মূলত আমরা বিক্রি করছি। আর গ্যাস্ট্রিকের জন্য মানুষ এক বাক্যেই রেনিটিডিন আর ওমিপ্রাজলকেই চেনে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরো দায়িত্ববান ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানাচ্ছি।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, বাজারে নিবন্ধিত বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির ২২০ ধরনের রেনিটিডিন ওষুধ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন মাত্রার রেনিটিডিন ট্যাবলেট, সিরাপ ও ইনজেকশন। রেনিটিডিন প্রস্তুতকারী প্রায় প্রতিটি ফার্মা কোম্পানিরই বিভিন্ন মাত্রায় এই তিন ধরনের ওষুধই রয়েছে। এর মধ্যে ৩১টি কোম্পানি ভারতের দুটি কোম্পানি থেকে রেনিটিডিনের কাঁচামাল গ্রহণ করলেও অন্যান্য কোম্পানিগুলো সরাসরি তাদের (রেনিটিডিন) কাছ থেকে কাঁচামাল কিনেই ওষুধ প্রস্তুত করত।

এ বিষয়ে একাধিক ফার্মা কোম্পানির মার্কেটিং কর্মকর্তারা জানান, ওষুধ কোম্পানিগুলো ফ্যাক্টরিতে নতুন করে রেনিটিডিন উৎপাদন করছে না। তবে আগের উৎপাদিত রেনিটিডিনগুলো বাজারে বিক্রি করছে। কেননা এত পরিমাণ ওষুধ নষ্ট করে ফেললে কোম্পানিগুলো ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। মূলত যে ওষুধগুলো বাজারে খুব বেশি পরিমাণ বিক্রি হয়, সেই ওষুধগুলো অনেক বেশি পরিমাণে উৎপাদন করা হয়। তাই এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া খুবই কঠিন বিষয়।

একই রকম হিসাব বাজার থেকে ওষুধগুলো আবার ফিরে আনার ক্ষেত্রেও। এই ওষুধগুলো ফিরিয়ে আনতে গেলেও কোম্পানিগুলোর একই রকম ক্ষতি হবে। তবে ধারণা করা যায়, দেশে বিভিন্ন ফার্মা কোম্পানিগুলোতে এখনো যে পরিমাণ রেনিটিডিন উৎপাদিত রয়েছে, সেগুলো দিয়ে বর্তমান বিক্রির হার অনুসারে আরো মাস দেড়েক সময় লাগবে ওষুধের বাজার রেনিটিডিন শূন্য হতে।

তবে ক্রেতা থেকে শুরু করে ওষুধ প্রস্তুতকারী ও বিক্রেতারা পর্যন্ত সবাই জানেন ওষুধটি শরীরের জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। কেননা মার্কিন ফুড ও ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) প্রতিবেদন অনুসারে রেনিটিডিনের কাঁচামালে এনডিএম (মেটালো বেটা ল্যাকটামেজ) ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই ব্যাকটেরিয়া মানবদেহে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে থাকে। দূষিত বাতাস থেকে এটি মানবদেহে প্রবেশ করেই মারাত্মক ক্ষতি করে। সেক্ষেত্রে যদি ওষুধের মাধ্যমে সরাসরি রক্তের সঙ্গে মিশে যায়, তাহলে ক্যানসারের ফ্যাক্টর বা সৃষ্টিকারী উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে। এ কারণে ভোক্তাদের নিজ দায়িত্ব থেকেই ওষুধটি কেনা ও সেবন বাদ দেওয়া উচিত। তাই বাজারে থাকলেও রেনিটিডিন না কেনার পরামর্শই দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads