• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
মৃত্যুপথযাত্রীদের প্রশান্তির জায়গা

বিশ্ব হসপাইস অ্যান্ড প্যালিয়েটিভ কেয়ার ডে উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তব্য রাখছেন বক্তারা

ছবি: বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

প্যালিয়েটিভ কেয়ার

মৃত্যুপথযাত্রীদের প্রশান্তির জায়গা

  • প্রকাশিত ১২ অক্টোবর ২০১৯

নিরাময় অযোগ্য রোগে আক্রান্তদের জীবনের শেষ দিনগুলোর ভোগান্তি কমাতে দেওয়া চিকিৎসাসেবাকেই বলা হয় প্যালিয়েটিভ কেয়ার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে দেশে ১০ লাখের মতো রোগী রয়েছে, যাদের এ সেবা প্রয়োজন। কিন্তু দেশে বর্তমানে প্যালিয়েটিভ সেবাদানে কাজ করছে হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান, যার পুরোটাই আবার ঢাকাকেন্দ্রিক। ফলে বিশ্বব্যাপী প্যালিয়েটিভ সেবাদানে বা রোগীর শেষ দিনগুলোর ভোগান্তি কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রয়েছে পেছনের সারিতে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান দ্য ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের করা ‘মৃত্যুর মান সূচক ২০১৫’-এর তথ্যানুযায়ী, প্যালিয়েটিভ সেবা প্রাপ্যতার বিচারে ৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৯তম।

নিরাময় অযোগ্য রোগে আক্রান্ত মানুষ নানা ধরনের শারীরিক-মানসিক-সামাজিক সংকটে বিপর্যস্ত ও অসহায়বোধ করে। বিশেষ ধরনের ক্যানসার, পক্ষাঘাত অথবা এ ধরনের আরো কিছু রোগের ক্ষেত্রে সাধারণত রোগীর পরিবারকে অনেক সময় বলা হয় ‘আর কিছু করার নেই, বাড়ি নিয়ে যান’। কিন্তু ‘প্যালিয়েটিভ কেয়ার’ এসব রোগীকে দূরে ঠেলে না দিয়ে সহায়তার হাত বাড়ায়। মৃত্যু পথযাত্রীদের এ ধরনের ভোগান্তি কমাতে পারে এই সেবা।

গত বুধবার বিকালে রাজধানীর ধানমন্ডি ইএমকে সেন্টারে বিশ্ব হসপাইস অ্যান্ড প্যালিয়েটিভ কেয়ার ডে উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে হসপাইস বাংলাদেশ, আস্থা হসপাইস, ওয়ার্ল্ড চাইল্ড ক্যানসার এবং ইএমকে সেন্টার। সেমিনারের শুরুতেই ‘ডেথ ক্যাফে’ শীর্ষক আলাপে মৃত্যু পথযাত্রীর অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি আড্ডার আয়োজন করা হয়।

এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্যালিয়েটিভ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শতকরা ১০ জনের মৃত্যু হঠাৎ করেই ঘটে। আর ৯০ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয় নানা ধরনের ভোগান্তির পর। ভোগান্তিগুলো আমাদের চোখের সামনে দিয়েই ঘটে কিন্তু আমরা বুঝতে পারি না। কারো ক্ষেত্রে অল্প কিছুদিন হয়, আবার কারো ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন হয়। ভোগান্তি বলছি এই কারণে, এর সঙ্গে শরীর, মন, সমাজ, আত্মা জড়িত।’

তিনি আরো বলেন, ‘ভোগান্তি কমানোর জন্য দুই ধরনের পথ পৃথিবী বেছে নিয়েছে। একটি ইনস্টিটিউশনের মাধ্যমে, আরেকটি প্যালিয়েটিভ কেয়ার। এ ধারণাটি এরকম যে-নতুন একটি শিশু জন্মানোর সময় যেমন কাঁথা বানিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় তেমনি যারা পৃথিবী থেকে বিদায়ের ক্ষণ গুনছেন তাদের জন্য সমাজ কিছুটা প্রস্তুত হতে পারে কি না। এ সমাজটিকে আমরা বলছি মমতাময় সমাজ। এই প্যালিয়েটিভ কেয়ারের ব্যবসাটি শুধু চিকিৎসক-নার্সদের না, সমাজের প্রত্যেকের।’

ওয়ার্ল্ড চাইল্ড ক্যানসারের প্যালিয়েটিভ কেয়ারের কনসালট্যান্ট মেগান ডহারটি বলেন, ‘প্যালিয়েটিভ কেয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছানো জরুরি। আমরা একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পারি এক্ষেত্রে। এতে মানুষের জীবনে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে বলে আমি মনে করি। প্যালিয়েটিভ কেয়ারে বাংলাদেশের সফলতা আমরা অন্যান্য দেশে তুলে ধরতে পারি।’

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাস্থ্য সচেতনতায় যোগ ব্যায়ামের উপকারিতা তুলে ধরেন জয়সান ইয়োগা অ্যান্ড অয়েলনেস সেন্টারের প্রশিক্ষক শর্মিষ্ঠা সরকার। দেহ ও মনের বিষাদ দূর করতে সংগীতের ভূমিকা তুলে ধরেন ইউল্যাবের শিক্ষক মিন্টু কৃষ্ণ পাল।

সেমিনারে রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী আমিনা আহমেদ বলেন, ‘যোগব্যায়াম একটি আধ্যাত্মিক বিষয়। আমরা ধ্যান করি, আমাদের চারপাশে জীবনীশক্তি অবস্থান করায় আমরা সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। ধ্যানের মাধ্যমে আমরা এই শক্তিগুলোকে একটি রাস্তা করে দিই। হিলিং ২১ দিন করতে হয়, এর মধ্যে টানা তিনদিন অবশ্যই করতে হয়। রেকি ২ করার পর রেকি ৩ করতে হয়।’

শিশুর মৃত্যু কীভাবে গ্রহণযোগ্য হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শিশুর মৃত্যুকে মেনে নিতে হবে। সবকিছু ক্ষণস্থায়ী, আমাদের সবাইকে মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবে এক দিন, এটা মনে রাখতে হবে। তাই আমরা অসুস্থ শরীর নিয়ে ভোগান্তির চেয়ে কীভাবে নিজেদের সুস্বাস্থ্য ধরে রাখা যায় সেটা নিয়ে ভাবী।’ 

সেমিনারে প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিষয়ে আরো বিস্তারিত তুলে ধরেন এ্যাপোলো হসপিটালের অনকোলজি বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. ফেরদৌস শাহরিয়ার, স্কয়ার হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগের সমন্বয়ক অধ্যাপক সৈয়দ আকরাম হোসেন, বাংলাদেশ প্যালিয়েটিভ অ্যান্ড সার্পোটিভ কেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ডা. রুমানা দৌলা প্রমুখ।

হসপিস বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও প্যালিয়েটিভ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহীনুর কবীর জানান, হসপিস বাংলাদেশ বছরে প্রায় দেড় হাজার রোগীকে প্যালিয়েটিভ সেবা দেয়। যদিও চাহিদা আরো অনেক বেশি। চাহিদা অনেক থাকলেও সীমাবদ্ধতার কারণে বেশিসংখ্যক রোগীকে এ সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। এর অন্যতম অন্তরায় জনবল সংকট। আবার বাসায় গিয়ে নার্সরা সেবা দিতে চান না। কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তাররাও অপারগতা প্রকাশ করেন। এ ধরনের সমস্যা আমাদের সমাজে এখনো বিদ্যমান। এর কারণ ডাক্তার ও নার্সরা যাদের এ সেবা দেন, তাদের প্রায় সবাইকেই চোখের সামনে মারা যেতে দেখেন। প্রতিনিয়ত এ মৃত্যু দেখতে দেখতে তারা মানসিক সংকটে ভোগেন এবং সেবা দিতে অনীহা প্রকাশ করেন।

লেখক: শাহ রাজন

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads