• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
স্বরূপে ফিরছে দুদক

ফাইল ছবি

জাতীয়

স্বরূপে ফিরছে দুদক

  • এমদাদুল হক খান
  • প্রকাশিত ২৯ অক্টোবর ২০১৯

হাই-প্রোফাইল দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে দুর্নীতি দমন কমিশন। ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে প্রভাবশালী নেতারাও রেহাই পাচ্ছে না দুদকের হাত থেকে। এ ছাড়া গত কয়েক মাসে প্রশাসনের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দুদকের হাতে গ্রেপ্তারের পর অনেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে ইতোমধ্যে গা-ঢাকা দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের শতাধিক নেতাকর্মী। কেউ কেউ ইতোমধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে কারো কারো বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। শুধু তাই নয়, দুদকের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতিও তদন্ত করছে সংস্থাটি। ইতোমধ্যে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের পরিচালক এনামুল বাছিরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে দুদকের মামলায় কারাগারে আছেন।

সরকারদলীয় সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরীসহ ৫০ জনের ব্যাংক হিসাব ও লেনদেনের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত সপ্তাহ থেকে পর্যায়ক্রমে কয়েকটি চিঠির মাধ্যমে এসব তথ্য জানতে চাওয়া হয় বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে এসব চিঠি পাঠান দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন। চিঠিতে অভিযুক্তদের কয়টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে, অ্যাকাউন্টগুলোতে কত টাকা রয়েছে এবং কবে কার কার সঙ্গে লেনদেন হয়েছে- এসব তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে।

দুদকের চিঠিতে জাতীয় সংসদের হুইপ ও চট্টগ্রাম-১২ আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী, সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ছাড়াও বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ, সাবেক যুবলীগ নেতা জি কে শামীম, অনলাইন ক্যাসিনোর সেলিম প্রধান, কৃষক লীগের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ, গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক রুপুসহ ৫০ জনের তথ্য চেয়েছে দুদক। চিঠিতে ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িতদের লেনদেনের হিসাবের যাবতীয় তথ্য দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া যুবলীগের চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া ওমর ফারুক চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোল্লা আবু কাউছার ও পংকজ দেবনাথের ব্যাংক হিসাব ও লেনদেনের তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানায় দুদক সূত্র।

দুদক সূত্র জানায়, দুর্নীতির অভিযোগে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমান, কারা অধিদপ্তরের ডিআইজি পার্থ ও বজলুর রশীদসহ প্রশাসনের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা।

দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, যার বিরুদ্ধেই সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যাবে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে দুদক। কেউ কোনো প্রভাব বিস্তার করে দুদকের হাত থেকে রেহাই পাবেন না। যত বড় ক্ষমতাশালীই হোন না কেন, দুর্নীতি করে এখন আর কেউ পার পাবেন না।

দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন সরকারি সেবা প্রদানে হয়রানি-অনিয়ম দূর করতে পদ্ধতিগত সংস্কারের জন্যও কাজ করছে। কমিশন আইন অনুযায়ী সরকারের সেবা প্রদানের পদ্ধতি অর্থাৎ বিজনেস প্রসেস রি-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্যও সরকারের নিকট সুপারিশ করছে। সরকারি পরিষেবায় প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে দুর্নীতিমুক্ত সরকারি পরিষেবা প্রদানের বিষয় নিয়েও কাজ চলছে। আমরা আশাবাদী, সবার সমন্বিত উদ্যোগে দুর্নীতিমুক্ত সরকারি পরিষেবা নিশ্চিত করার পথ ক্রমাগত মসৃণই হচ্ছে।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ কেবল একটি নগর রাষ্ট্র নয়, এর সিংহভাগ মানুষই পল্লী এলকায় বসবাস করেন। তাদের উন্নয়নে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বহুমাত্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য এসব কার্যক্রমেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে  দুর্নীতির ঘটনা ঘটে। কমিশন তৃণমূলের এই দুর্নীতি দমনেও কাজ করছে।

দুুদকের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দুর্নীতি নেই সেটা বলতে পারব না। দুর্নীতি যেমন আছে, সেখানে জবাবদিহিতাও রয়েছে। তাই কমিটমেন্ট অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। দুর্নীতি ঘটার আগে যেন সেটা ধরতে পারি, সেটাই হবে আসল উদ্দেশ্য। দুর্নীতি যদি ঘটেই যায় তাহলে আমাদের থাকার উদ্দেশ্য কী? তাই আগে থেকে দুর্নীতি ধরতে আমাদের সোচ্চার হতে হবে।

তিনি বলেন, কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কমিশন প্রদত্ত আইন ও বিধিমালার আওতায় ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকেন। তাদের কেউ যদি এই ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতি, নির্ধারিত সময়ে অনুসন্ধান বা তদন্ত কার্য সম্পন্ন না করে কিংবা ক্ষমতার অপব্যবহার করে কাউকে হয়রানি করেন তাহলে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি দমন কমিটি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত রাখবে। যারা কমিশন প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন, তাদেরকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।

কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ সততা ও স্বচ্ছতার দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, অভিযোগের অনুসন্ধান ও তদন্তের গোপনীয় তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কর্মকর্তাদের দায়িত্ব। তথ্য পাচারের মতো অনৈতিক কাজে কেউ জড়িত হলে তাদের বিরুদ্ধেও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরো বলেন, দুদকের কাজকর্ম যথাযথভাবে সময়মতো সম্পন্ন করার জন্য যেসব পদ্ধতিগত  সংস্কার করা হয়েছে বা হবে, সেগুলো আমলে নিয়ে আপনারা সব কাজ সম্পন্ন করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads