কক্সবাজারে বিভিন্ন শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের উদ্যোগ আটকে গেছে। এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হলেও শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মতি না থাকায় সেখানে রোহিঙ্গাদের নেওয়ার উদ্যোগ থমকে গেল। এখন এই অনিশ্চিত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য রোহিঙ্গা সম্পর্কিত জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটির একটি বৈঠক ডাকা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ সরকার স্থানান্তর করার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলে কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বিবিসি। নোয়াখালীর ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জোর তৎপরতা শুরু করা হয়েছিল। কিছুদিন আগেই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবার শীতের আগেই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর শুরু করার তাদের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেছিলেন। শাহরিয়ার আলম এটাও উল্লেখ করেছিলেন যে, এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের জন্য ভাসানচর পুরোপুরি প্রস্তুত।
গত বর্ষা মৌসুমের আগেই সরকার রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরে শুরু করতে চেয়েছিল, সেটা তখন সম্ভব হয়নি। এখন আবার শীতের আগে স্থানান্তরের চেষ্টাও থমকে গেছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেছেন, স্থানান্তরের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মতি মিলছে না। কিছু পরিবার স্বেচ্ছায় যেতে চেয়েছিল, সে ব্যাপারে আমরা প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। যেহেতু আমরা এই মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে জাতিসংঘ এবং ইউএনএইচসিআরসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার ওপর নির্ভরশীল, সেজন্য আমরা তাদের সাথে বসেছি। কয়েক দফা বৈঠকের পরও জাতিসংঘ, ইউএনএইচসিআর এবং আইএমও-সহ অন্যান্য সংস্থাগুলো এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের সেখান যাওয়ার পক্ষে মতামত দেয়নি। যার কারণে আমরা এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। সত্যি কথা বলতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মতি না পাওয়ায় এটা আটকে আছে।’
তিনি জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের ৬৪০টি পরিবারের সাড়ে তিন হাজার জন ভাসানচরে স্থানান্তরের জন্য স্বেচ্ছায় তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন, এরপর তাদের ভাসানচরে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে বৈঠক করে সপ্তাহখানেক আগে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সম্মতি দেয়নি।
এখন এই অনিশ্চিত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য রোহিঙ্গা সম্পর্কিত জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটির একটি বৈঠক ডাকা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। তবে বাংলাদেশ সরকার স্থানান্তর করার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলে কর্মকর্তারা বলছেন।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, এই স্থানান্তর স্বেচ্ছায় হতে হবে। সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পর তা করতে হবে। সেজন্য তারা বাংলাদেশ সরকারকে আরো সময় নেওয়ার কথা বলছে।
এদিকে, কক্সবাজারের উখিয়ার একটি ক্যাম্প থেকে কয়েকজন রোহিঙ্গা শরণার্থী বলছিলেন, বাংলাদেশের কর্মকর্তারা স্থানান্তরের বিষয় নিয়ে গত দুই সপ্তাহে ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতাদের সাথে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। ভাসানচরে স্থানান্তরের জন্য তালিকভুক্ত হতে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলেও তারা অভিযোগ করেছেন। তারা বলেন, ‘ভাসানচরে যেতে হলে তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের চিকিৎসা সেবা এবং শিক্ষার ব্যবস্থা করাসহ মৌলিক অধিকারগুলোর কী হবে-তার বিস্তারিত আগে তাদের জানাতে হবে।’
প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান কোনো চাপ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘চাপ প্রয়োগের কোনো বিষয় নেই। স্বেচ্ছায় না গেলে কাউকে জোর করা যাবে না। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন যে কোনো বলপ্রয়োগ করা হবে না।’
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে যারা দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্যাম্পে আছেন, তাদের মধ্যে এক লাখ লোককে ভাসানচরে স্থানান্তর করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।