• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

পাকবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা চূড়ান্ত

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১২ ডিসেম্বর ২০১৯

১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্র রাশিয়ার প্রতিনিধি ভোরেন্টসভকে হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘পরদিন (১২ ডিসেম্বর) মধ্যাহ্নের আগে ভারতকে অবশ্যই যুদ্ধ বিরতি মেনে নিতে বাধ্য করতে হবে। অন্যথায় যুক্তরাষ্ট্র নিজেই প্রয়োজনীয় সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’ যুক্তরাষ্ট্রের এমন হুঁশিয়ারি ও হুংকার সামান্যতম মনোবল ভাঙতে পারেনি মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর অকুতোভয় বীর সেনানীদের। চূড়ান্ত বিজয় ছিনিয়ে আনতে পাক হানাদারদের ওপর তাদের আক্রমণ আরো শানিত হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলতে থাকে চারদিকে। এক এক করে মুক্ত হচ্ছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি।

সব জায়গায় পরাজয় ও মিত্রবাহিনীর সহায়তায় ঢাকার কাছাকাছি মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান করায় পাকিস্তানিরা বিদেশি সাহায্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু সাহায্য না পেয়ে তারা শেষ কামড় হিসেবে ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যার নীলনকশা চূড়ান্ত করে। ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা মুখ থুবড়ে পড়ে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিনিধিদের দীর্ঘ বক্তব্যের পর অধিবেশন মুলতবি হয়ে যায়। ১২ ডিসেম্বর বঙ্গোপসাগর থেকে মাত্র ২৪ ঘণ্টা দূরত্বে গভীর সমুদ্রে চলে আসে মার্কিন সপ্তম নৌবহর।

সেদিন রাতে প্রাদেশিক সরকারের বেসামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী আলবদর ও আলশামসের কেন্দ্রীয় অধিনায়কদের ডেকে পাঠান সদর দপ্তরে। তার সভাপতিত্বে গোপন সলাপরামর্শ অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা প্রণয়ন করা হয়। তাদের হাতে ফরমান আলী তুলে দেন বুদ্ধিজীবীসহ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নামের তালিকা।

অন্যদিকে ১৯৭১ সালের এ দিনে মেজর আবু তাহেরের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ভালুকা ও হালুয়াঘাট হয়ে ময়মনসিংহ সড়কের দিকে এগিয়ে যান। দিনাজপুর অঞ্চলের মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী খানসামা থানা আক্রমণ করে। যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর ১৫ জন ও সাত মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাদের হাতে এক মেজরসহ পাকবাহিনীর ১৯ জন ধরা পড়ে। এদিন নীলফামারী হানাদারমুক্ত হয়। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর, কালিয়াকৈর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে মিত্রবাহিনী ছত্রীসেনা নামিয়ে দেয়। রাতে টাঙ্গাইলে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায় মিত্রবাহিনী। তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে কাদেরিয়া বাহিনী। তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়।

নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী নূরুল আমিন অত্যন্ত কঠোর ভাষায় ভারতকে পাকিস্তান ছেড়ে যেতে বলেন। তিনি বলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ মাতৃভূমি রক্ষায় শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।’ তিনি ঘোষণা করেন, ‘কোনো শক্তি নেই পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে পারে।’ ১২ ডিসেম্বর রেডিও পিকিং ঘোষণা করে, ‘সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতের মাধ্যমে পাকিস্তান আক্রমণ করে মূলত চীনকেই দমন করতে চায়।’

’৭১ সালের এ দিনে এপিআইয়ের জেনারেল ম্যানেজার ও সাংবাদিক নিজামউদ্দিনকে ধরে নিয়ে যায় আলবদর বাহিনী। তার বাসায় যখন হানা দেওয়া হয়, তখন তিনি বিবিসির জন্য সংবাদ লিখছিলেন। ওই অবস্থায় তাকে ধরে নিয়ে হত্যা করে আলবদররা।

১২ ডিসেম্বর সকালে নরসিংদী মুক্ত হয়। তিন দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতায় ভারতীয় বাহিনীর পাঁচটি ব্যাটালিয়ন, দুটি গোলন্দাজ রেজিমেন্ট ও ৫৭ ডিভিশনের ট্যাকটিক্যাল হেডকোয়ার্টার মেঘনা অতিক্রম করে। সূর্যাস্তের আগে জামালপুর ও ময়মনসিংহ থেকে ভারতীয় জেনারেল নাগরার বাহিনী চলে আসে টাঙ্গাইলে। বিমান থেকে অবতরণ করা ছত্রীসেনারা মিলিত হয় নাগরার বাহিনীর সঙ্গে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads