• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

হিলিতে বিন লাদেনের দাম ১৫ লাখ টাকা

  • হিলি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৪ জুলাই ২০২০

কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে দিনাজপুরের হিলিতে প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা করে বিভিন্ন জাতের গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। এদের মধ্যে আবার বিন লাদেন, রাজা মশাই, সাদ্দাম ও গাদ্দাফি নামেও রাখা হয়েছে গরুর নাম। বিন লাদেনের দাম হাঁকা হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। তবে এই দামে কোনো ক্রেতা গরুটি কিনলে একটি ষাঁড় ফ্রি পাবেন। কিন্তু এখানো পর্যন্ত সাড়া পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন গরুর মালিক। ফলে বিক্রি না হওয়ার শঙ্কায় দিন কাটছে তার। করোনার কারণে শেষ পর্যন্ত এই অবস্থা চলতে থাকলে পথে বসা ছাড়া কোনো উপায় দেখছেন না তিনি।

হিলি চারমাথা থেকে ৬ কিলোমিটার পূর্বে ছাতনী গ্রাম। গ্রামটি পেরিয়ে একটু সামনে গেলেই আশরাফ ফার্মস। স্থানিয় সৌখিন খামারী মাহফুজার রহমান বাবু এই খামারটি গড়ে তুলেছেন। নিজের নিবিড় পরিচর্যা আর মমতায় চার বছর ধরে তিনি গরুগুলো লালন পালন করছেন।

আজ মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তার খামারের সাদা-কালো রঙের এই গরুর নাম রাখা হয়েছে বিন লাদেন। ফ্রিজিয়ান জাতের লাদেনের উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি, লম্বায় সাড়ে ১১ ফুট। আর কালচে লাল রঙের পাকিস্তানি সিন্ধি জাতের গরুটির উচ্চতা ৬ ফুটের একটু উপরে, লম্বা ৯ ফুটের মত। মানুষ বিন লাদেনের বিশ্বে সন্ত্রাসী হয়ে উঠার গল্প এবং নিহতের খবর কার না জানা। কিন্তু গরুর নাম যে বিন লাদেন এটিই হয়ত এই প্রথম শোনা। প্রায় ১২’শ কেজি ওজনের এই লাদেনের দাম হাঁকা হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। এটি যে ক্রেতা কিনবে তাকে ১টি দেশিয় ষাঁড় ফ্রি দেওয়া হবে বলে ঘোষনা করেছেন এই খামারী।

শুধু লাদেন নয়, আলোচনায় উঠে এসেছে রাজা মশাই, সাদ্দাম, গাদ্দাফিরও কথা। এসব বিশ্ব নেতাদের নাম অনুসারেও রাখা হয়েছে গরুর নাম। এই তিনটি গরুর দামও ধরা হয়েছে ৮ লাখ টাকা করে। বাবু তার খামারে ফ্রিজিয়ান, ব্রাহাম, সিন্ধু সহ বিভিন্ন জাতের এই গরুগুলি লালন-পালন করছেন।

খামারী মাহফুজার রহমান বাবু বলেন, গত চার বছর আগে আমার খামারের ফ্রিজিয়ান গাভী থেকে জন্ম নেয় সাদা-কালো এই বাছুরটি। এখন তার বয়স চার বছর। এর পরের বছর পাকিস্তানি সিন্ধি ও ব্রাহাম জাতের দুটি বাছুরও কেনা হয়। এরপর থেকেই সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতি ও প্রাকৃতিক খাবারের মাধ্যমে যত্ন সহকারে লালন পালন করছি। সাদা-কালো রঙের ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়টির নাম দিয়েছি বিন লাদেন। অন্যগুলো নাম দেওয়া হয়েছে রাজা মশাই, সাদ্দাম ও গাদ্দাফি। এই তিনটি গরুর ওজন বিন লাদেনের চেয়ে কম হলেও দেখতে বেশ আকর্ষণীয়। এ পর্যন্ত তিনটি গরুর খাবারে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬ লাখ টাকা। করোনার কারণে ভালো দাম পাওয়া নিয়ে সংশয়ে আছি। আমার আশা সারাদেশের সবচে বেশি ওজনের গরুরগুলোর মধ্যে বিন লাদেনও জায়গা করে নিবে।

নিরাশ না হয়ে তিনি আরও বলেন, বিন লাদেন, রাজা মশাই, সাদ্দাম, গাদ্দাফি (গরু) বিক্রির জন্য বিভিন্ন অনলাইন হাটে ছবি পাঠিয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো সাড়া পাইনি। আশা করছি ঈদের বাকি সময়ের মধ্যেই সাড়া পাবো। অনলাইনে বিক্রি করতে না পারলে ঢাকার বাজারে তোলা হবে গরুগুলি।

আশরাফ ফার্মের শ্রমিকেরা জানান, খুবই শান্ত প্রকৃতির বিন লাদেন। অনেকে দেখতে এসে কাছে গেলেও তেড়ে আসে না। ভুষি, ডালি, ভুট্টা, খৈল, ঘাস ও খড় খাওয়ানো হয় গরুগুেিলাকে। আদর-যত্নে গরুগুলো বেড়ে উঠছে। বিন লাদেনের ওজন প্রায় ১২’শ কেজি হবে। যা সাধারণ দেশি গরুর চেয়ে ১০ গুণ বেশি।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের ভেটেরিনারী সার্জন ডা. রতন কুমার ঘোষ জানান, আমরা সব সময় গরুগুলোর প্রতি নজর রাখি এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকি। সৌখিন খামারী মাহফুজার রহমান বাবু একেবারেই প্রাকৃতিক ও নির্ভেজাল পদ্ধতিতে ষাঁড়গুলোকে লালন পালন করেছেন। দেখতেও দৃষ্টিনন্দন। তবে এবার কোরবানির ঈদে গরুর খামারীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো বাজারজাত করা। এই ধরনের বড় আকারের ষাঁড় সাধারণত ঢাকাসহ বাইরের ক্রেতারা কিনে থাকেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত খামারীরা কোনো সাড়া পাচ্ছে না। আমরা চেষ্টাই আছি অনলাইনের মাধ্যমে আগ্রহী ক্রেতাদের কাছে পৌছাতে। খামারী তার গরু ঢাকায় নিয়ে যেতে চাইলে ট্রেনের মাধ্যমে পাঠানোরও উদ্যোগ নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads