• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

নবায়নের আবেদন করেনি ৩ হাজার হাসপাতাল-ক্লিনিক

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৮ নভেম্বর ২০২০

শর্ত কঠিন হওয়ায় আগে অনুমোদন নেওয়া ক্লিনিকগুলোর মধ্যে ৩ হাজারই পুনঃনবায়নের জন্য আবেদন করেনি। গত ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে আবেদনের শেষ সময় ছিল। এই সময়সীমার মধ্যেই লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করেনি ২ হাজার ৯১৬টি ক্লিনিক ও হাসপাতাল। অনেকে ঠিকমতো শর্ত পূরণ করতে না পেরে আবেদন করছে না বলেও জানা গেছে। আর অবৈধ হাসপাতাল ক্লিনিক বলতে অধিদপ্তর তাদেরকেই ধরছে যারা অনলাইনে আবেদন করেনি। এদের বিরুদ্ধে আরো কঠিন অভিযানে নামছে অধিদপ্তর।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা ব্ল্যাড ব্যাংক চালানোর সুযোগ নেই। ১০ নভেম্বর সারা দেশে অনুমোদিত ও অনুমোদনহীন বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের তালিকা পাঠাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিভাগীয় পরিচালকদের নির্দেশ দেয়। পরে বিভাগীয় কার্যালয় থেকে পাঠানো তথ্য নিয়ে লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকা তৈরি করে অধিদপ্তর।

৮ নভেম্বর বিভাগীয় পরিচালকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম নিজ নিজ জেলার অনিবন্ধিত, অবৈধ ও সেবার মান খারাপ এমন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া ও প্রয়োজনে সিলগালা করার নির্দেশ দেন বিভাগীয় পরিচালক ও সিভিল সার্জনদের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ২০১৮ সালে লাইসেন্স নেওয়া ও নবায়নের জন্য অনলাইনে আবেদনের পদ্ধতি চালু হয়। তাতে কোনো একটি শর্ত পূরণ না হলে রেজিস্ট্রেশন হয় না, নবায়নও হয় না।

এদিকে, হাসপাতাল মালিকরা বলছেন, লাইসেন্স করা ও নবায়নের নতুন নিয়মে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। শর্তগুলোও কঠিন। ২০১৭ সালের আগে ক্লিনিকের নবায়নের জন্য শুধু ফি জমা দিতে হতো পাঁচ হাজার টাকা। সঙ্গে ভ্যাট। যেটা এখন করা হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। এর সঙ্গেও আছে ভ্যাট। ডায়াগনস্টিক সেন্টার নবায়নে যেখানে আগে ছিল ভ্যাটসহ এক হাজার টাকা, বর্তমানে সে ফি হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। জানা গেছে, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের নিবন্ধন ফি এবং নবায়ন ফি পাঁচ হাজার থেকে বাড়িয়ে সর্বনিম্ন ৫০ হাজার ও সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। অপরদিকে, বিভাগীয় ও সিটি করপোরেশন এলাকায় ১০ থেকে ৫০ শয্যার বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের নবায়ন ফি ৫০ হাজার টাকা, ৫১ থেকে ১০০ শয্যার জন্য এক লাখ টাকা, ১০০ থেকে ১৪৯ শয্যার জন্য দেড় লাখ টাকা ও ২৫০ শয্যার জন্য নির্ধারণ হয় দুই লাখ টাকা।

একইভাবে একই শয্যাসংখ্যা ধরে জেলা হাসপাতালগুলোর জন্য ধরা হয় ৪০ হাজার টাকা, ৭৫ হাজার টাকা ও এক লাখ টাকা। উপজেলা পর্যায়ে এ ফি নির্ধারণ হয় ২৫ হাজার, ৫০ হাজার, ৭৫ হাজার ও এক লাখ টাকা। তবে এসব হাসপাতালে কমপক্ষে তিন জন এমবিবিএস চিকিৎসক, ছয়জন নার্স ও দুইজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকার শর্তও আছে। প্রতিটি শয্যার জন্য থাকতে হবে ৮০ বর্গফুট জায়গা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অস্ত্রোপচার কক্ষ, আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং নারকোটিকসের লাইসেন্সও থাকতে হবে।

এরসঙ্গে আরো দরকার হবে ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) ও বিআইএন (বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নম্বর)। সঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। শয্যা বেশি হলে আনুপাতিক হারে জনবলও থাকতে হবে। আবেদনের ভিত্তিতে অধিদপ্তরের টিম সরেজমিনে পরিদর্শন করে লাইসেন্স দেবে।

ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন ডা: আবু হোসেন মোঃ মঈনুল আহসান বলেন, ‘ঢাকা জেলার ভেতরে আছে, তবে মহানগরের বাইরে এমন অবৈধ হাসপাতালের তালিকা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি ক্লিনিককে এসংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়েছে আলাদা করে। আমরা হাসপাতাল বন্ধ করতে পারি না। কেবল কার্যক্রম স্থগিত করতে পারি।’ ঢাকা জেলায় প্রায় ৩০টি ক্লিনিক বন্ধ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

চলতি সপ্তাহে ঢাকা জেলা মেট্রোপলিটনে থাকা ক্লিনিক-হাসপাতালের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হবে বলেও জানান ডা: মইনুল হোসেন।

বেশিরভাগ ক্লিনিকগুলোর প্যাথলজি ল্যাবে অসঙ্গতিও পাওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এগুলোতে কনসালটেন্ট প্যাথলজিস্ট নেই। টেকনোলজিস্ট দিয়ে ল্যাব চালানো হচ্ছে। সার্বক্ষণিক চিকিৎসাব্যবস্থাও নেই। চিকিৎসকও থাকেন না অনেক সময়।’

দেশের সব সিভিল সার্জনদের কাছ থেকে হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোর তালিকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পেয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা: ফরিদ হোসেন মিঞা। তিনি বলেন, যেহেতু নিবন্ধন প্রক্রিয়া অনলাইনে হওয়াটা নতুন তাই অনেকে ভালো করে বুঝতে পারেনি। অনেকেই নিবন্ধনে অনীহা প্রকাশ করেছে। আবার কোভিড পরিস্থিতির জন্য অধিদপ্তর ঠিকমতো সময় দিতে পারেনি বলেও জানান তিনি।

ডা: ফরিদ আরো জানান, ‘২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৬১০৫টি হাসপাতাল-ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। ৩১০৯টি লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে। যারা অনলাইনে সঠিকভাবে আবেদন করেছে তারা সব শর্ত পূরণ করে থাকলে তাদেরকেও লাইসেন্স দিতে পারি।’

আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স পেতে কঠিন শর্ত ছিল জানিয়েছেন হাসপাতাল-ক্লিনিক মালিকরা। সে কঠিন শর্তে এবার অধিদপ্তর কিছুটা ছাড় দিচ্ছে কিনা জানতে চাইলে ডা: ফরিদ হোসেন মিঞা বলেন, ‘আগেতো পরিবেশ অধিদপ্তর আর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র দিতে হতো। সেক্ষেত্রে একটু নমনীয় হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি আগে সবাইকে নিয়মের ভেতর আনতে। কে কোন ধাপে আটকে আছে সেগুলো বোঝার চেষ্টা করবো আমরা। তারপরও যাদের নবায়ন পেতে অসুবিধার যৌক্তিক কারণ আছে তাদের বিষয়টাও দেখা হবে। যারা ইচ্ছাকৃতভাবে লাইসেন্স এড়িয়ে যাচ্ছে তাদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা হবে।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads