• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

 নজরদারিতে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা

আরো ৫০ হাজার সিসিটিভি সংযোজনের অপেক্ষায়

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ১১ জানুয়ারি ২০২১

দেশের প্রায় গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও স্থাপনা এখন পুলিশের নজরদারিতে। অর্থাৎ সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। যদিও এরআগে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও স্থাপনা পুলিশের নজরদারিতে ছিল। এরপর বিভিন্ন বিভাগীয় শহর, গুরুত্বপূর্ণ জেলা, হাইওয়ে এমনকী অনেক পর্যটন এলাকাও সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। মূলত অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও অপরাধী শনাক্তে সিসিটিভি খুবই কার্যকর। এ কারণে পুলিশ সিসিটিভি স্থাপনের ওপর জোর দিয়ে তা বাস্তবায়ন করে চলেছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, সারা দেশে পুলিশের পর্যবেক্ষণের জন্য ১০/১৫ হাজারের মতো সিসিটিভি রয়েছে। এর বাইরে আবাসিক এলাকা, মার্কেটসহ ব্যক্তি উদ্যোগেও রয়েছে আরো প্রায় ৫০ হাজার। দিন দিন সংখ্যা বাড়ছে। গুরুত্বপূর্ণ অনেক এলাকায় যেমন পুলিশের নিজস্ব সিসিটিভি দ্বারা নজরদারি করা হয়, তেমনি প্রয়োজনে পাবলিক্যালি সিসিটিভি ফুটেজের সহায়তা নেওয়া হয়।

তিনি বলেন, পুলিশের নিজস্ব আরো ৫০ হাজার সিসিটিভি আনার পরিকল্পনা রয়েছে। খুব দ্রুততম সময়ে এই সিসিটিভি আসলে অনেক এলাকায় নজরদারির আওতায় আসবে। ইতোমধ্যে থানাগুলোকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে রাখার জন্য সিসিটিভির আওতায় আনার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ২০১২ সালে রাজনৈতিক সহিংসতার সময়ে রাজধানীর প্রায় অর্ধশতাধিক এলাকাকে ঘিরে সিসিটিভির আওতায় আনার কাজ শুরু করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। তৎকালীন সময়ে পেট্রোল বোমা, গাড়িতে আগুনসহ নানা নাশকতায় জড়িতদের শনাক্তের জন্য পুলিশ সিসিটিভির আওতায় আনার এ উদ্যোগ নেয়। কাকরাইল মোড়, নয়াপল্টন, শান্তিনগর, মালিবাগ মোড়, পল্টন মোড়, বায়তুল মোকাররম, দৈনিক বাংলা মোড়, পান্থপথ, ফার্মগেট, মিরপুর ১০ গোলচত্বর, ধানমন্ডি ২৭, সায়েন্স ল্যাব, মগবাজার মোড়, হাইকোর্ট টার্নিং মোড়, প্রেস ক্লাব, যাত্রাবাড়ি, মতিঝিল, খিলগাঁও, শনিরআখড়া, মহাখালিসহ অন্তত অর্ধশতাধিক স্থানে বসানো হয় সিসিটিভি।   

এরপর ২০১৪ সালের ১৫ মে রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকা হিসেবে পরিচিত বারিধারা, গুলশান, নিকেতনসহ পুরো এলাকা সিসিটিভির আওতায় আনার জন্য প্রথম পর্যায়ে ১০০ সিসিটিভি লাগানোর কাজ শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে ওই এলাকায় এখন ৭০০ সিসিটিভ ক্যামেরা লাগানো রয়েছে। এছাড়াও উত্তরা, মিরপুর, ধানমন্ডিসহ রাজধানীর প্রায় ৮০ শতাংশ পুলিশ ও ব্যক্তি মালিকানাধীনভাবে সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। আর বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে গড়ে উঠা আবাসিক ভবনগুলোতে পুলিশের পক্ষ থেকে সিসিটিভি লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ২৬৪ কিলোমিটার রাস্তায় স্থাপন করা হয় ১ হাজার ৪২৭টি সিসি ক্যামেরা। গণপরিবহনে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটলে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে অপরাধী শনাক্তের জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। ‘হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি’ প্রকল্পের আওতায় এমন উদ্যোগ নেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (উন্নয়ন) গাজী মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোর লেনজুড়ে সিসি ক্যামেরা। শুধু সেগুলোই নয় এর পাশাপাশি রয়েছে উন্নত ডিভাইস-সফটওয়্যার সিস্টেম।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপির) ১৬টি থানা এলাকায় ১০৪টি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো রয়েছে। আরো প্রায় ২০০ টি বসানোর কাজ চলছে।

সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, উন্নত প্রযুক্তির উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন আইপি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। জানুয়ারি থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নগরীর চারটি অপরাধ বিভাগকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে সদরঘাট, ডবলমুরিং, পতেঙ্গা, বন্দর, ইপিজেড ও কর্ণফুলী থানা এলাকায় ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। দ্রুতই পুরো নগরে ক্যামেরা লাগানো শেষ হবে।

তিনি বলেন, আমরা আরো দুটি  উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই এমন উদ্যোগ নিতে যাচ্ছি। এই সড়কে কোনো অপরাধী গাড়ি আটকে ডাকাতি করতে পারবে না। কোনো কারণ ছাড়া ফোর লেনে সন্দেহভাজন ঘোরাঘুরি করলে ধরা পড়বে। নিরাপত্তা জোরদার হবে প্রকল্পের মাধ্যমে। বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চলতে পারবে না। আমরা নির্দিষ্ট গতিসীমা বেঁধে দিয়েছি এর বেশি হলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে মামলা হবে। যানবাহনের নম্বর প্লেট রিড করতে পারে এমন যন্ত্রপাতিও কেনা হচ্ছে প্রকল্পের আওতায়।

অপরাধী শনাক্তকরণসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে রংপুর মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ১২৮টি পয়েন্টে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। রাজশাহী মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ১৭টি পয়েন্টে ৬৫টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

নগরীর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং অপরাধী শনাক্তে সিলেট মহানগরীর তালতলা পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে সুরমা মার্কেট পয়েন্ট-সিটি পয়েন্ট হয়ে জিন্দাবাজার পর্যন্ত অর্ধশতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে। অন্যদিকে, আরেকটি অংশে সিটি পয়েন্ট থেকে বন্দরবাজার হয়ে সোবহানীঘাট পয়েন্ট এরপর সোবহানীঘাট থেকে নাইওরপুল পয়েন্ট সিসি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে আরো প্রায় অর্ধশত।

এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া, টঙ্গী, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরিশাল, ভোলা, কুমিল্লা, ফেনি, নোয়াখালী, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জসহ দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা শহরের অধিকাংশই সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। এর পাশাপাশি হাইওয়ের অনেক স্থানেই বসেছে সিসিটিভি। আর চেকপোস্টগুলোতে নির্দেশনা অনুযায়ী চেকপোস্ট বসানোর কাজও চলমান।

এদিকে গত ২০১৮ সালে সারা দেশের থানাগুলোয় ক্লোজ সার্কিট টিভি (সিসিটিভি) বসিয়ে পুরো পুলিশ সিস্টেমকে এর আওতায় আনার প্রস্তাব করেছিল পুলিশ সদর দপ্তর। দেশের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, জনগণের হয়রানি রোধ, পুলিশের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত, পুলিশের জনসেবার মানোন্নয়নসহ উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করার জন্য পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এসব প্রস্তাব পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। বর্তমানে এই প্রস্তাবনার আওতায় দেশের অধিকাংশ থানা এখন জেলার পুলিশ সুপার কার্যালয়ের মনিটরিংয়ের আওতায় এসেছে।

সম্প্রতি ঢাকা রেঞ্জের ১৩ জেলার ৯৬ থানায় বসেছে সিসিটিভি ক্যামেরা। সেই ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় স্থাপিত রেঞ্জ অফিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে। ক্যামেরায় দেখা যাচ্ছে ডিউটি অফিসার, হাজতখানা ও নিরাপত্তারক্ষীর অবস্থান।

ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি আসাদুজ্জামান বলেন, থানার কার্যক্রম মনিটর করতে ঢাকা রেঞ্জের সব থানায় তিনটি করে ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এখন ঢাকার নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে কার্যক্রম মনিটর করতে পারছেন। ১ জানুয়ারি থেকে এই কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়েছে। এখন থানা মনিটরিংয়ের কাজ চলবে ২৪ ঘণ্টা। চাইলে নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে ক্যামেরাগুলো ৩৬০ ডিগ্রি কোণে ঘুরিয়েও আশপাশের দৃশ্য দেখা যাবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি ইব্রাহিম ফাতেমি বলেন, দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও স্থাপনাকে ঘিরে নজরদারির আওতায় আনার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে। ইতোমধ্যে অনেকাংশই বাস্তবায়ন হয়েছে। সরকারি এবং বেসরকারিভাবে সিসিটিভি বসানোর কাজ চলমান। আর বর্তমানে মানুষের মাঝে সচেতনতাও বেড়েছে। এখন কেউ একটু বেশি ইনভেস্টের দোকান করলেও সেখানে সিসিটিভি বসাচ্ছেন। এটি আমরা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছি।

তিনি বলেন, সিসিটিভির ফুটেজের কল্যাণে অনেক বড় বড় অ্যাচিভমেন্ট হয়েছে পুলিশের সুতরাং এটাকে আমরা অগ্রাধিকার দেই। সিসিটিভি লাগানোর জন্য মানুষকে আমরা উৎসাহিত করি। কিছুদিন আগে কুষ্টিয়াতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার সঙ্গে জড়িতদের সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। অথচ সেখানে সিসিটিভি না থাকলে অনেক সমালোচনা শুনতে হতো পুলিশের। জনকল্যাণকর কাজে পুলিশ সবসময় উৎসাহিত করে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads