• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

সমাজ সংস্কারে দেশজুড়ে নির্মাণ হচ্ছে মডেল মসজিদ

সারা দেশে হবে ৫৬০টি

  • এম এ বাবর
  • প্রকাশিত ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১

আমাদের সমাজে মসজিদের ভূমিকা অপরিসীম। ধর্মীয় বিভ্রান্তি দূর করে মসজিদভিত্তিক সমাজব্যবস্থা ইসলামের চেতনায় অনুপ্রাণিত করে। তাই মডেল মসজিদ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ইসলামের ভ্রাতৃত্ব এবং মূল্যবোধের প্রচার ও উগ্রবাদ এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ইসলামের প্রকৃত মর্মবাণী প্রচার করে সমাজ সংস্কার করা। প্রধানমন্ত্রীর ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে উন্নত মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি ছিল। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ২০১৭ সালে সারা দেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপন কাজ শুরু হয়। এরমধ্যে আগামী মার্চে উদ্বোধন হবে ৫০টি মসজিদ। সেপ্টেম্বরে আরো ৬০টি এবং ডিসেম্বর মাসে ৬০টি মসজিদ উদ্বোধন করা হবে। সবমিলিয়ে মুজিববর্ষে উদ্বোধন হবে ১৭০টি মসজিদ। আর ২০২৩ সালের মধ্যে সবগুলো মসজিদ নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আশা প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্টরা। আট হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা)। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বোর্ড অব গভর্নরস-এর গভর্নর ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিক থেকে এক সময়ে মসজিদকে কেন্দ্র করে সামাজিক নানা কল্যাণমূলক কাজ দেওয়া হতো। সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা ও

ভারসাম্যময় পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানানো হতো মসজিদ থেকেই। তাছাড়া রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে নববীতে বসেই মানবজীবনের অর্থনৈতিক উন্নয়নেরও দিক নির্দেশনা দিতেন। মদিনারাষ্ট্র পুরোটাই পরিচালিত হতো মসজিদে নববীকে কেন্দ্র করে। মসজিদকেন্দ্রিক এসব কর্মকাণ্ড প্রায় উঠে গেছে। যার ফলে সামাজিক অবক্ষয় বেড়ে চলছে।

তিনি বলেন, দেশে প্রায় ৮৮ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। এরপরও সমাজে ইসলাম নিয়ে দিনদিন নানাবিদ সমস্যা ও জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এর অনেক কারণ থাকতে পারে। একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে দীনি ‘ইলম’ ও আধুনিক জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তির অভাব। আমাদের দেশের মূল শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামি শিক্ষার তেমন কোনো গুরুত্ব নেই। আবার মাদরাসার শিক্ষার্থীরা আধুনিক এলেম থেকে তুলনামূলক পিছিয়ে। তাই মসজিদকেন্দ্রিক ইসলামি জ্ঞান ভাণ্ডারসহ আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান সমৃদ্ধ ডিজিটাল পাঠাগার গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশের শিক্ষাগত বৈষম্য দূর করা সম্ভব। এতে একটি সুস্থ ও সুন্দর সমাজ গড়ে ওঠবে।

৫৬০টি মডেল মসজিদ এবং ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প পরিচালক মো. নজিবর রহমান বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধর্মীয় বিভ্রান্তি দূর ও ইসলামের প্রকৃত বার্তা প্রচারের লক্ষ্যে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে মোট ৫৬০টির মধ্যে প্রায় ১৭০টি মসজিদ তিনটি ধাপে উদ্বোধন করা হবে। আসন্ন রমজানের আগে প্রথম ধাপে ৫০টি মসজিদ (কুমিল্লা, কিশোরগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, রংপুর ও নীলফামারী) উদ্বোধন করা হবে যেখানে সেপ্টেম্বর মাসে আরো ৬০টি এবং ডিসেম্বরে ৬০টি মসজিদ উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত। এ পর্যন্ত প্রকল্পের মোট কাজের ৩২ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। আগামী দুই বছরের (২০২৩ সাল) মধ্যে ৫৬০টি মডেল মসজিদের সবগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে যাবে।

ইসলামি ফাউন্ডেশন সূত্র জানায়, স্বপ্নের সুখী-সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে উন্নত মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপন (১ম সংশোধিত) প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়নে অনুমোদিত হয়। কিন্তু অর্থ ও প্রয়োজনীয় জমির সংকট এবং বৈশ্বিক মহামারীর কারণে নির্ধারিত সময়ে পুরো প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এরপর প্রকল্পের মেয়াদ এক ধাপ বর্ধিত করে এখনো দেশের কয়েকটি জেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ চলছে।

প্রকল্পের দলিল অনুসারে, মডেল মসজিদগুলো এ, বি ও সি ক্যাটাগরিতে নির্মিত হচ্ছে। ‘এ’ ক্যাটাগরির অধীনে, ৬৪টি জেলা ও সিটি করপোরেশন এলাকায় লিফটের সুবিধা সম্বলিত প্রায় ৬৯টি চারতলা মসজিদ নির্মিত হচ্ছে। একটি মসজিদের প্রতিটি তলায় ২ হাজার ৩৬০ দশমিক ০৯ বর্গমিটার জায়গা থাকবে।

‘বি’ ক্যাটাগরির অধীনে, প্রত্যেক তলায় ১ হাজার ৬৮০ দশমিক ১৪ বর্গমিটার জায়গাসহ ৪৭৫টি মসজিদ নির্মিত হচ্ছে। অন্যদিকে, সি-ক্যাটাগরিতে উপকূলীয় এলাকায় ১৬টি মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ২ হাজার ৫২ দশমিক ১২ বর্গমিটার। উপকূলীয় এলাকার মসজিদগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে নিচতলা ফাঁকা থাকবে।

একেকটি মসজিদ নির্মাণ করতে ব্যয় হচ্ছে জেলা শহর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় (এ ক্যাটাগরি) ১৫ কোটি ৬১ লাখ ৮১ হাজার টাকা। উপজেলা পর্যায়ে (বি ক্যাটাগরি)  ১৩ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং উপকূলীয় এলাকায় (সি ক্যাটাগরি) ১৩ কোটি ৬০ লাখ ৮২ হাজার টাকা।

প্রতিটি জেলা ও সিটি করপোরেশন মসজিদে এক সাথে নামাজের জন্য ১ হাজার ২০০ জন লোকের ব্যবস্থা ছিল এবং প্রতিটি উপজেলা ও উপকূলীয় অঞ্চলের মসজিদে ৯০০ জন লোক একসাথে নামাজ পড়তে পারত। এই মসজিদগুলোতে মোট প্রায় ৪ দশমিক ৯৯ লাখ পুরুষ এবং ৩১ হাজার ৪০০ জন নারী একসাথে নামাজ পড়তে পারবেন।

মডেল মসজিদগুলোতে ইসলামী গবেষণা ও দীন-ই-দাওয়াহ কার্যক্রম,  কোরআন হেফজখানা, শিশু ও গণশিক্ষা ব্যবস্থা, স্থানীয় ও বিদেশি পর্যটকদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা, মৃতদের জন্য গোসল ও দাফনের ব্যবস্থা, হজযাত্রী নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের মতো সুবিধা থাকবে। গাড়ি পার্কিংসহ ইমাম-মুয়াজ্জিন এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য থাকার ব্যবস্থাও থাকবে।

এই মসজিদগুলোতে গ্রন্থাগারের ব্যবস্থা থাকবে যেখানে প্রায় ৩৪ হাজার মানুষ একসাথে পবিত্র  কোরআন এবং অন্যান্য ইসলামিক বই পড়তে পারবে। এ ছাড়া প্রায় ৬ হাজার ৮০০ লোকের জন্য ইসলামিক বিষয় নিয়ে গবেষণা করার ব্যবস্থা থাকবে। অন্যদিকে, প্রকল্পটি শেষ হলে প্রায় ৫৬ হাজার লোক দোয়া ও মোনাজাত করতে পারবেন এবং মসজিদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাসবিহ জপতে পারবেন। 

অন্যান্য ধর্মীয় কর্মকাণ্ড ছাড়াও প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ৬৮ হাজার শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এই মসজিদ থেকে প্রতি বছর প্রায় ১৪ হাজার কোরআনে হাফেজ (সম্পূর্ণ কোরআন মুখস্থ যাদের) বের হবে। এছাড়াও পবিত্র হজ্বের জন্য ডিজিটাল নিবন্ধনের সুবিধার পাশাপাশি প্রায় ২ হাজার ২৪০ জন দেশি-বিদেশি অতিথির আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads