• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

টিকা গ্রহণকারী এক-তৃতীয়াংশ নারী

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১

গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া জাতীয় টিকাদান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েছেন ২৯ লাখ ৮৪ হাজার ৭৭৩ জন মানুষ। মোট টিকা নেওয়া ব্যক্তির মধ্যে পুরুষ ১৯ লাখ ৩৭ হাজার ২৬ জন এবং নারী ১০ লাখ ৪৭ হাজার ৭৪৭ জন। গতকাল শনিবার টিকা নিয়েছেন এক লাখ ৩৩ হাজার ৮৩৩ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ৮০ হাজার ৭৬১ জন আর নারী টিকা নিয়েছেন ৫৩ হাজার ৭২ জন। করোনাভাইরাসের টিকাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ তথ্য জানায়। অবশ্য টিকাদান কর্মসূচিতে শুরু থেকেই নারীদের উপস্থিতি কম ছিল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অজ্ঞতা ও প্রচারের অভাবই এর কারণ। তবে নারীদের একটা বড় অংশ গর্ভবতী ও সন্তানকে বুকের দুধ পান করাচ্ছেন বলেও তাদের উপস্থিতি কম।

সাধারণ ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রামগুলোতে গ্রামে গ্রামে গিয়ে টিকা দিতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। কিন্তু করোনা টিকাদান কর্মসূচিতে তা একেবারেই দেখা যাচ্ছে না। নির্বাচনের সময় ঘরে ঘরে গিয়ে নারীদের ভোট দিতে আসার জন্য জনপ্রতিনিধিরা খোঁজ নেন; কিন্তু টিকার বেলায় তাদের দেখা নেই।

সিলেটের সালেহা বেগমের বয়স ৭০ বছর। দেশে করোনা টিকাদান কর্মসূচি শুরুর পর থেকেই টিকা নিতে আগ্রহী ছিলেন তিনি। স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারেন না। ছেলেমেয়েরাও থাকে দেশের বাইরে। তাকে নিবন্ধন করিয়ে টিকা নিতে যাওয়ার মতো কেউ ছিল না। সালেহা বেগম তার এক আত্মীয়কে বলার পর তিনি এসে নিবন্ধন করিয়ে দেন। এরপর টিকা নিতে পেরেছেন তিনি।

টিকাদান কর্মসূচিতে নারীর উপস্থিতি কম কেন জানতে চাইলে চিকিৎসক ডা. তানজিনা হোসেন বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নারীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। জুনিয়র চিকিৎসকদের মধ্যে শতকরা ৮০ শতাংশই নারী। নার্স, আয়াসহ মিলিয়ে সংখ্যাটা আরো বেশি। সেখানে টিকাকেন্দ্রে নারীর কম উপস্থিতি উদ্বেগজনক ও হতাশার।

তিনি আরো বলেন, বয়স্ক নারীদের পক্ষে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে নিবন্ধন করে টিকাদান কেন্দ্রে যাওয়া অনেক কঠিন। মায়েদের না নিয়ে এলে তাদের পক্ষে সম্ভব নয় টিকা নেওয়া। তারা যে নিজেরা নিবন্ধন করবেন, সে অবস্থাও তৈরি হয়নি। কারণ আমাদের মায়েরা কম্পিউটার বা মোবাইলে অভ্যস্ত নন। যারা পারছেন না, তাদের সাহায্য করতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসা উচিত।

নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে ডা. তানজিনা বলেন, ভোটের সময় জনপ্রতিনিধিরা ঘরে এসে আমার শয্যাশায়ী শাশুড়ির খোঁজ নিয়ে গিয়েছিলেন। এখন কেন খোঁজ নেবে না? এটা তো ভোটের মতোই জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

টিকাদান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার জন্য প্রচারও অনেক কম জানিয়ে তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক আশা করেছিলাম প্রচার নিয়ে। সেভাবে হয়নি।

টিটেনাস টিকা গ্রামের সব মাকে দেওয়া হয়। হেলথ ওয়ার্কার, মিডওয়াইফরা ঘরে ঘরে গিয়ে তাদের উদ্বুদ্ধ করেন। হেলথ কমপ্লেক্সে ব্যানার টাঙানো হয়। নারীরা টিকা নিতে চান না, এটা ঠিক নয়। কিন্তু করোনা টিকার বেলায় এমন কার্যক্রম আমি দেখছি না, বলেন ডা. তানজিনা।

নারীরা কেন টিকাদান কর্মসূচিতে কম জানতে চাইলে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বিলকিস বেগম চৌধুরী বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ের নারীদের একটা বড় অংশ শিক্ষিত নয়। তারা টিকাদান কর্মসূচি সম্পর্কে জানে না। আবার একটা বড় অংশ গর্ভবতী বা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন। তারা কর্মসূচির বাইরে। সংখ্যাটা একেবারে কম নয়।

করোনার টিকা নিতে নারীর উপস্থিতি বাড়াতে গ্রামে গ্রামে গিয়ে নারীদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। নিবন্ধনে করিয়ে টিকাদান কেন্দ্রে আনার ব্যবস্থাও করতে হবে। এসব না করলে এ অবস্থার উন্নতি হবে না, বলেন ডা. বিলকিস চৌধুরী।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, নারীদের টিকা গ্রহণের হার কম হওয়ার কারণ সরাসরি বলা যাবে না। তবে কাজকর্ম ও চাকরির কারণে পুরুষরা বেশির ভাগ ঘরের বাইরে অবস্থান করেন। এ কারণে সহজে তারা টিকাকেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিচ্ছেন। এটি একটি কারণ হতে পারে। আবার এখন পর্যন্ত যেসব ক্যাটাগরিতে টিকা দেওয়া হচ্ছে, তাতেও নারীর সংখ্যা পুরুষের তুলনায় কম। গার্মেন্ট ও বেসরকারি সেক্টরে নারীরা বেশি চাকরি করেন। টিকার জন্য এই সেক্টরগুলো এখনো উন্মুক্ত করা হয়নি। এসব সেক্টর উন্মুক্ত হলে তখন হয়তো নারীদের মধ্যে টিকা গ্রহণের হার বাড়বে।

মহাপরিচালক আরো বলেন, আবার দেশে সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নারীদের তুলনায় করোনায় পুরুষ প্রায় তিন গুণ বেশি আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যুও প্রায় তিন গুণ বেশি পুরুষের। সুতরাং টিকা নেওয়ার বিষয়েও হয়তো এ কারণে পুরুষের আগ্রহ বেশি। তবে আমাদের আহ্বান থাকবে, যার যখন সময় আসবে, তিনি যেন তখন টিকা নিয়ে নেন। কারণ, করোনায় একমাত্র টিকাই আপনাকে সুরক্ষিত রাখবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সম্প্রতি বলেন, দেখা যাচ্ছে, যারা অন দ্য স্পট রেজিস্ট্রেশন করছে, তাদের সংখ্যাই বেশি। আর যারা রেজিস্ট্রেশন করেছেন কষ্ট করে তারাই ঢুকতে পারছেন না। এখন আমাদের যেহেতু রেজিস্ট্রেশন সফলভাবে হচ্ছে, তাই এখন থেকে অন দ্য স্পট রেজিস্ট্রেশন আর করব না আমরা।

তিনি বলেন, এখন থেকে যারা নিবন্ধন করে আসবেন, শুধু তাদেরই ভ্যাকসিনেট করব। আর ভবিষ্যতে যদি প্রয়োজন পড়ে তখন আমরা আবার জানাব, তখন টিকাদান কেন্দ্রে এসে সশরীরে উপস্থিত হয়ে টিকা দেওয়া যাবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads