• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
রাজধানীতে আয় কমেছে রিকশাচালকদের

ছবি: বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

বাড়তি ভাড়া দিতে নাভিশ্বাস কর্মজীবীদের

রাজধানীতে আয় কমেছে রিকশাচালকদের

  • সালাহ উদ্দিন চৌধুরী
  • প্রকাশিত ০৭ এপ্রিল ২০২১

লকডাউনের দ্বিতীয় দিনেও গণপরিবহন বন্ধের সুযোগে রিকশা এবং সিএনজি অটোরিকশা চালকরা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে সিএনজি-অটোরিকশা চালকরা লাভবান হলেও বিপাকে পড়েছেন রিকশাচালকরা। কারণ রিকশা ভাড়া বেশি চাওয়ায় যাত্রী কম। কিন্তু সিএনজি-অটোরিকশায় শেয়ারে যাত্রী সংখ্যা বেড়েছে।

করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে গত সোমবার থেকে ১৮ টি নির্দেশনা দিয়ে এক সপ্তাহের লকডাউন  ঘোষণা করে সরকার। নির্দেশনায় গণপরিবহন বন্ধের কথা বলা হলেও খোলা রাখা হয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান। আর অফিসে অর্ধেক জনবল দিয়ে চালু রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। গণপরিবহন বন্ধের ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়ে অফিস যাত্রীসহ জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়া মানুষরা। এ সুযোগে রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশা চালকরা হয়ে উঠে বেপরোয়া। অতিরিক্ত যাতায়াত ভাড়া দিতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠছেন যাত্রীরা। জিল্লুর রহমান নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, দুই দিন মিরপুর থেকে মতিঝিল অফিসে যেতে তার এক হাজার টাকার বেশি খরচ হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে সংসারের অন্যান্য প্রয়োজন সঙ্কুচিত করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না বলে জানান তিনি।

রিকশা ভাড়া বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে দিলরুবা খানম নামে এক নারী অফিস যাত্রী জানান, টিকাটুলি মোড় থেকে দিলকুশার ভাড়া স্বাভাবিক সময়ে ৩০/৪০ টাকা থাকলেও এখন ৬০ টাকার কমে যেতে চায়না রিকশা চালকরা।

 বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ফিরোজ আলম বলেন, তার অফিস উত্তরাতে। থাকেন তিনি বাড্ডাতে। গত দুই দিন তিনি একশ টাকা দিয়ে শেয়ারে সিএনজি অটোরিকশায় যাতায়াত করছেন স্বস্থ্য ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও এমনটা করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানান তিনি।

ভাড়া বৃদ্ধিও বিষয়টি স্বীকার করেছেন রিকশা এবং সিএনজি অটোরিকশা চালকরাও। তবে  রিকশাচালকদের দাবি ভাড়া কিছুটা বাড়ালেও তাদের আয় অর্ধেকে নেমে এসেছে। তবে আয় বৃদ্ধির কথা স্বীকার করেছে সিএনজি অটোরিকশা চালকরা।

রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বর গুদারাঘাটে একটি রিকশা গেরেজের তত্ত্বাবধায়ক জুয়েল রানা জানান, তাদের গেরেজের দুই তৃতীয়াংশ রিকশাচালক লকডাউন ঘোষণার পরপরই গ্রামের বাড়িতে চলে গিয়েছেন। লকডাউনের কারণে রিকশা জমা আগের তুলনায় ২০/৩০ টাকা কমিয়ে দেওয়া হলেও চালকের অভাবে অনেক রিকশা গেরেজে পড়ে আছে বলে জানান তিনি।

আব্দুল কুদ্দুস দেওয়ান নামে মিরপুরের আরেকটি রিকশা গেরেজের তত্ত্বাবধায়ক জানান, তাদের গেরেজেরও অনেক রিকশা চালক লকডাউনের কারণে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। তাই তাদের আয়ও কমে গেছে।

রিকশাচালক বেলাল হোসেন জানান, গতকাল সকাল ৭টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে তার আয় হয়েছে ২শ টাকা। স্বাভাবিক সময়ে হতো ৫শ টাকা। একইকথা জানান নওগাঁর শাপাহারের বাসিন্দা রিকশাচালক সিরাজুল ইসলাম। তিনি জানান, গতকাল অর্ধবেলা রিকশা চালিয়ে তার আয় হয়েছে ২৫০ টাকা। যা স্বাভাবিক সময়ের অর্ধেক। লকডাউনের কারণে রাস্তায় যাত্রী কম থাকার কারণে ভাড়া কিছুটা বেশি নিলেও আয় কমে গেছে বলে জানা তিনি।

রিকশাচালকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যারা এখন ঢাকায় আছেন, তারা না পারছেন  গ্রামের বাড়িতে ফিরে যেতে, না পারছেন রাজধানীতে রিকশা চালিয়ে গ্রামে থাকা পরিবারের কাছে টাকা পাঠাতে। কারণ গ্রামের বাড়িতেও লকডাউনের কারণে কোনো কাজ জুটছে না। আবার ঢাকায় রিকশা চালিয়ে যে আয় হচ্ছে তা দিয়ে নিজের থাকা-খাওয়ার খরচ মেটাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। সরকারি সহায়তা না পেলে তাদের পক্ষে পরিবার নিয়ে জীবন চালানো দুষ্কর হয়ে পড়বে বলে জানান তারা। গত বছরের করোনা পরিস্থিতিতে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, যেহেতু তাদের কেউ ঢাকার ভোটার না তাই গতবার সরকারি সহায়তাও তাদের ভাগ্যে জুটেনি। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা তাদের নিজেদের লোকজনদেরই সহায়তা দিয়েছেন।

তবে রিকশাচালকদের আয় কমলেও বেড়েছে সিএনজি অটোরিকশা চালক ও মালিকদের আয়। যাত্রাবাড়ি, মিরপুর ও শাহবাগে বেশ কিছু সিএনজি অটোরিকশা চালকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় তাদের আয় ২৫-৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এই সুযোগে সিএনজি অটোরিকশা মালিকরাও বাড়িয়ে দিয়েছে জমা খরচ।

মো. সিদ্দিক নামে এক সিএনজি অটোরিকশা চালক জানান, ৯শ টাকার সিএনজি অটোর জমা এখন ১১শ থেকে ১২শ টাকা দিতে হচ্ছে। তাই তারাও ভাড়া বৃদ্ধি করেছেন। তবে অনেক যাত্রী এখন শেয়ারে যাচ্ছেন। এতে যাত্রীদের খরচ কম হচ্ছে। তারাও ভাড়া বেশি পাচ্ছেন। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় তাদের আয়  ৫শ থেকে ৭শ টাক বেশি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

 যাত্রাবাড়ির মিরহাজারিবাগে একটি সিএনজি অটোরিকশা গেরেজে মালিক আব্দুর রাজ্জাক জানান, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অফিস যাত্রীরা শেয়ারে সিএনজি অটোরিকশা ব্যবহার করছেন। এতে একদিকে যেমন যাত্রীরা অল্প ভাড়ায় গন্তব্যে যেতে পারছে তেমনি চালকরাও বেশি ভাড়া পাচ্ছে। তাই  অটোরিকশা মালিকরাও ভাড়া বৃদ্ধি করেছেন। আগে যে সিএনজি অটোরিকশার সারা দিনের ভাড়া ছিল ৯শ টাকা এখন তা ১১শ টাকা এবং অর্ধ বেলার জন্য ৬শ টাকা করা হয়েছে।

 

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads