• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
চরম ভোগান্তি শিল্প শ্রমিকদের

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

চরম ভোগান্তি শিল্প শ্রমিকদের

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৬ এপ্রিল ২০২১

কোভিডের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ঠেকাতে দেশজুড়ে সপ্তাহব্যাপী সর্বাত্মক লকডাউন কর্মসূচি চলছে। কিন্তু কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে দেখা গেছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। অন্যদিকে পরিবহন ব্যবস্থা ছাড়াই অনেক গার্মেন্ট খোলা রাখায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন শ্রমিকরা। 

গতকাল বিভিন্ন রাস্তায় চেকপোস্ট বসিয়ে গাড়ির বৈধ কাগজপত্র পরীক্ষা করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় চেকপোস্টে তৈরি হয় যানজট।  সকালে কারওয়ানবাজার, বিজয় সরণি,  গ্রিন রোড, পান্থপথসহ রাজধানীর সকল সড়কে এমন চিত্র দেখা গেছে। কেউ বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারলে গাড়ি নিয়ে যেতে দিচ্ছে না পুলিশ। পাশাপাশি কাগজপত্র দেখতে বেশি সময় লাগায় যানজটের সৃষ্টি হয়। তা ছাড়া অনেক জায়গায় দেখা গেছে প্যাসেঞ্জারের মুভমেন্ট পাস না থাকার অপরাধে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে রিকশাচালকদের। বিমানবন্দর সড়কের নিকটবর্তী পুলিশ চেকপোস্টে প্রায় প্রতিটি গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা যায়। ফলে সেখানে গাড়ির লম্বা লাইন তৈরি হয়। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনেও একইভাবে পুলিশি নজরদারির কারণে সড়কে গাড়ির গতি ধীর হয়ে আসে। পুলিশ সড়কে যাত্রীদের থামিয়ে চলাচলের কারণ জানতে চাইলেও সরকার কর্তৃক জারি করা মুভমেন্ট পাস দেখতে চায়নি বলে অভিযোগ কয়েকজন যাত্রীর।

মেরুল বাড্ডার প্রগতি সরণিতে যানজটে আটকেপড়া যাত্রী মাহবুব আলম শোয়েব বলেন, ‘আজকের লকডাউন শিথিলভাবে পালন করা হচ্ছে। রাস্তায় প্রচুর লোক, অন্যদিকে পুলিশের জেরাও কম। আমি কাউকে পাসের জন্য জিজ্ঞেস করতে দেখিনি। গুলশান-১ বাংলাদেশ শুটিং ফেডারেশন ভবনের সামনে থেকে গাড়ির লম্বা লাইন চলে যেতে দেখা যায় পুলিশ প্লাজা ব্রিজ পর্যন্ত।

সেখানে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদের দায়িত্বে থাকা একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ‘যারা বাইরে আসার যথাযথ কারণ ব্যাখ্যা করতে পারছে না, তাদের চেক পোস্ট পেরোনোর অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। প্রগতি সরণি, বাড্ডা, গুলশান, কারওয়ানবাজার ও বিজয় সরণি এলাকায়ও যানজট লক্ষ করা গেছে। নিয়মিত যাত্রী ও সরকারী চাকরিজীবী জিসান হক বলেন, বৃহস্পতিবার তুলনামূলকভাবে বাইরে আসা লোকজনের সংখ্যা অনেক বেশি।

বিপরীতে গত বুধবার লকডাউনের প্রথম দিন রাজধানীর পথঘাট ছিল নির্জন, বিভিন্ন সড়কে ছিল পুলিশের চেকপোস্ট। যারা লকডাউন নিয়ম লঙ্ঘন করে বেরিয়ে আসে, তাদের জরিমানা করা হয়। এদিন নিত্যপণ্যের বাড়তি দাম দেখা যায়। দোকানগুলো আধ-খোলা অবস্থায় বিক্রিবাট্টা চালিয়ে যায়।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, কারখানা এবং ব্যাংক খোলা থাকায় বুধবারের তুলনায় আজ (বৃহস্পতিবার) সড়কে লকডাউন বিধি অমান্য করে বেরিয়ে আসা মানুষ এত বেশি।  ডিএমপির মহাখালী ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনার মো. শামসুল ইসলামও একই কথা বললেন। তিনি বলেন, বুধবার সরকারি ছুটি ছিল। আজ তাই তুলনামূলকভাবে বাইরে লোকের সংখ্যা বেশি। গতকালের চাইতে আজ জনসমাগম তিন থেকে চারগুণ বেশি।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে লকডাউনেও গতকাল থেকে কলকারখানাগুলো খোলা রাখা হয়। সরকারের নির্দেশনায় খোলা রয়েছে রাজধানী, গাজীপুরসহ শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার সব পোশাক কারখানা। কর্মকর্তাদের অফিসে যাতায়াতের জন্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পরিবহন ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠানই শ্রমিকদের জন্য কোনো পরিবহন ব্যবস্থা রাখেনি। ফলে করোনার প্রকোপ রোধে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার গার্মেন্টে উপস্থিত হতে বেশ ভোগান্তিতে পড়েন শ্রমিকরা। তারা তিন চাকার রিকশা-ভ্যান করে ছুটে চলতে দেখা গেছে। কেউ কেউ আবার পায়ে হেটেও ছুটছে গন্তব্যে। 

স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্ব-স্ব কারখানায় যোগ দিয়ে উৎপাদন শুরু করে ওইসব কারখানার পোশাকশ্রমিকরা। কারখানার পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কারখানায় প্রবেশের আগে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে তাপমাত্রা পরীক্ষার পর ভেতরে প্রবেশ করতে হয় শ্রমিকদের। বাধ্যতামূলক করা হয় মাস্ক। এ ছাড়া আর্থিক লেনদেনের সুবিধার্থে ব্যাংকের কার্যক্রম চলবে সকাল দশটা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। তবে, লেনদেন পরবর্তী আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ব্যাংক খোলা রাখতে পারবে।

এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউন চলাকালে অতি জরুরি প্রয়োজনে বাসা থেকে বের হবেন যারা, তাদের জন্য মুভমেন্ট পাসের ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। এটি ছাড়া বের হওয়ার কোনো অনুমতি নেই। চেকপোস্টগুলোতে নিজ নিজ মুভমেন্ট পাস দেখাতে না পারলে মানুষকে ঘরে ফেরত পাঠানো হবে।  একদিন আগে অ্যাপটি চালু হওয়ার পর গতকাল সকাল ৭টা পর্যন্ত মুভমেন্ট পাস পেয়েছে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ। ‘https://movementpass.police.gov.bd/’ এই ঠিকানায় ভিজিট করে অ্যাপের মাধ্যমে পাস পাওয়া যাবে। উল্লেখ্য, এ দফায় লকডাউন চলবে আগামী ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত। 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads