• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
প্যাকেজ পণ্যে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা

ছবি: বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

প্যাকেজ পণ্যে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা

  • সালাহ উদ্দিন চৌধুরী
  • প্রকাশিত ১৮ এপ্রিল ২০২১

নিয়ম না থাকলেও প্যাকেজ করে পণ্য বিক্রি করছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর ডিলাররা। এতে একদিকে যেমন ব্যাহত হচ্ছে সরকারের উদ্দেশ্য, অন্যদিকে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য ক্রয় করতে পারছেন না দরিদ্ররা। তবে পেঁয়াজের স্টক শেষ হয়ে গেলে এ অবস্থা আর থাকবে না বলে জানা গেছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর মিরপুর ও কচুক্ষেতে সরেজমিনে দেখা যায়, সেখানে প্যাকেজ করে বিক্রি করা হচ্ছে টিসিবির পণ্য। বেশ কিছু ক্রেতা তাদের ইচ্ছেনুযায়ী পণ্য কিনতে চাইলেও বিক্রেতারা পণ্য বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানান।

গতকাল মিরপুর-১৪ নম্বরে টিসিবির ট্রাকে (ঢাকা মেট্রো-ন ১৪-৬৯০৫) ৮৫০ টাকা প্যাকেজ করে ৬টি পণ্য বিক্রি করে ডিলারের প্রতিনিধিরা। এর মধ্যে ছিল ১০০ টাকা লিটার দরে ৪ লিটার তেল,  ৫৫ টাকা দরে ২ কেজি করে ছোলা, মসুর ডাল ও চিনি, ৮০ টাকা দরে এক কেজি খেজুর এবং ২০ টাকা দরে ২ কেজি পেঁয়াজ। লকডাউনের মধ্যেও ক্রেতারা তীব্র দাবদাহ উপেক্ষা করে পণ্য সংগ্রহ করেন। তবে প্যাকেজ করে পণ্য বিক্রি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে।

নাজমুল হোসেন নামে এক ক্রেতা জানান, টিসিবি থেকে ডাল, তেল ও চিনিসহ বাজার থেকে অন্যন্য পণ্য কিনতে তিনি বাসা থেকে এক হাজার টাকা নিয়ে বের হয়েছেন। কিন্তু প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও তাকে টিসিবি থেকে ৮৫০ টাকা দিয়ে পণ্য কিনতে হচ্ছে। এতে তার অন্যান্য পণ্য ক্রয়ে টাকার ঘাটতি হবে বলে এরকম সিস্টেমের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

প্যাকেজ করে কেন পণ্য বিক্রি করছেন-এমন প্রশ্নের উত্তরে এখানকার বিক্রয়কর্মীরা জানান, ‘আমাদের সবকিছু সমন্বয় করে পণ্য বিক্রি করতে বলা হয়েছে, তাই করছি। তা না হলে নির্দিষ্ট কিছু পণ্য বিক্রি হবে, আর অন্য পণ্যগুলো অবিক্রীত থেকে যাবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ডিলার।’ কে সমন্বয় করে পণ্য বিক্রি করতে বলেছে এমন প্রশ্নে নিশ্চুপ থাকেন ওই বিক্রেতা। তিনি নিজের নামটিও বলতে অস্বীকৃতি জানান। কথা বলার সময় বাইসাইকেলে এক ব্যক্তি আসেন খেজুর কিনতে। কিন্তু ওই ব্যক্তির কাছে খেজুর বিক্রি করেননি বিক্রেতারা।

একই অবস্থা দেখা যায় কচুক্ষেত স্বাধীনতা চত্বর মাঠের সামনে অবস্থানরত টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে (ঢাকা মেট্রো-ন ১১-৯৮৮৫)। এখানে প্রথমে খেজুর বাদে ৫টি পণ্য ৫৭০ টাকা এবং পরে ডাল শেষ হয়ে যাওয়ায় ৪টি পণ্য ৪৬০ টাকা প্যাকেজ করে বিক্রি করেন বিক্রেতারা। এখানে ২ লিটার তেল, ২ কেজি করে ছোলা, চিনি, ডাল এবং পেঁয়াজর প্যাকেজ করে বিক্রি করছিলেন তারা। এখানকার বিক্রেতারাও নিজেদের নাম বলতে চাননি। তারা বলেন, পণ্য নিতে হলে প্যাকেজের সব পণ্যই নিতে হবে। পণ্য কিনতে আসা মাসুদ নামে এক ব্যক্তি বলেন, তার ছোলার প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে কিনতে হচ্ছে তাকে। গোলাম রসুল নামে আরেক ব্যক্তি জানান, তার চিনির প্রয়োজন নেই; কিন্তু প্যাকেজ ছাড়া ডিলারের লোকজন পণ্য বিক্রি করছেন না বলে সবই নিতে হচ্ছে।

রমজান মাস শুরু হওয়ার পূর্বে টিসিবির পণ্য কিনতে গিয়ে ফেরত আসতে হয় গৃহপরিচারিকার কাজ করা রাহেলা খাতুনকে। তিনি জানান, গত ১৩ এপ্রিল মিরপুর-১৪ নম্বরে টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে যান তিনি। তার চাহিদা ছিল এক কেজি করে চিনি, ছোলা, মসুর ডাল আর ২ লিটার তেলের। সেই অনুযায়ী টাকা নিয়ে যান তিনি। কিন্তু সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, ৯৭০ টাকার প্যাকেজের সব পণ্য কিনতে হবে। অনেক অনুরোধ করলেও বিক্রতারা তার কাছে চাহিদামাফিক পণ্য বিক্রি না করায় ফেরত আসেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বাংলাদেশের খবরকে বলেন, প্যাকেজ করে পণ্য বিক্রির কোনো নিয়ম নেই। কোনো ডিলার এটা করে থাকলে তারা তা অন্যায় করছে। এ ধরনের ডিলারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নাম না প্রকাশের শর্তে টিসিবির একটি সূত্র জানায়, টিসিবিতে বিপুল পরিমাণ আমদানি করা পেঁয়াজ রয়ে গেছে। ডিলারদের সেইসব পেঁয়াজ বিক্রির জন্য বলা হয়েছে। ডিলাররাও তাই ক্রেতাদের প্রথমদিকে ১৫ টকা কেজি দরে ১০ কেজি করে পেঁয়াজ কেনার শর্তে অন্যান্য পণ্য বিক্রি করা শুরু করেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে লেখালেখির পর ১০ কেজির বদলে তা ২/৩ কেজিতে নামিয়ে আনে ডিলাররা। তবে সেইসাথে টিসিবি পেঁয়াজের দামও ৫ টাকা বৃদ্ধি করে কেজি প্রতি করে ২০ টাকা। শুধু পেঁয়াজই নয়, মূল্য বৃদ্ধি করা হয় অন্যান্য পণ্যেরও। টিসিবি গত ১৭ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতি লিটার সয়াবিন ৯০ টাকা দরে বিক্রি করলেও এখন তা ১০০ টাকায় বিক্রি করছে। প্রতি কেজি চিনির দাম ৫০ টাকা থাকলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়।

জানা যায়, ডিলারর শুধু পেঁয়াজ বিক্রিই নয়, এরপর থেকে প্যাকেজ করে পণ্য বিক্রি শুরু করে। বিষয়টি নজরে আছে টিসিবি কর্তৃপক্ষেরও। কিন্তু পেঁয়াজ বিক্রির স্বার্থে টিসিবি দেখেও না দেখার ভান করে আছে। বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, আমদানি করা পেঁয়াজ আগামী সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে। এরপর থেকে ডিলারদের এই প্যাকেজের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে টিসিবি।

জানা যায়, সারা দেশে বর্তমানে ৫০০টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে করে টিসিবির ভর্তুকি মূল্যে ৬টি পণ্য বিক্রি শুরু করে। এই কার্যক্রম চলবে ৬ মে পর্যন্ত। এর মধ্যে রাজধানীতে রয়েছে ১৩০টি ট্রাক। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads