• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
কুষ্টিয়ায় পদ্মার ভাঙ্গনে দুইটি ইউনিয়ন নিশ্চিহ্নের শঙ্কা

পদ্মার ভাঙ্গনের কবলে দুইটি ইউনিয়ন নিশ্চিহ্নের শঙ্কা

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

প্রাকৃতিক দুর্যোগ

কুষ্টিয়ায় পদ্মার ভাঙ্গনে দুইটি ইউনিয়ন নিশ্চিহ্নের শঙ্কা

  • কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০১ নভেম্বর ২০১৯

প্রমত্ত পদ্মায় কমছে পানি, ভাঙ্গছে পাড় স্থাপনা আর বাড়িঘর। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ভাটিতে পদ্মার ডানপাড়স্থ কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ২নং বহলবাড়িয়া ও ৩নং তালবাড়িয়া দুই ইউনিয়নের ৭ কি:মি এলাকায় প্রবল ভাঙ্গনে কৃষিজমি, বাড়িঘর, সরকারী স্থাপনা, স্কুল মাদ্রাসা বিলিন হয়েছে ইতোমধ্যে। এছাড়া উত্তরবঙ্গের সাথে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগে একমাত্র মহাসড়কটিও চরম ঝুঁকিতে। এলাকা ভাঙ্গনের অন্যতম কারণ হিসেবে অবৈধ বালিঘাটকে চিহ্নিত করে আক্রান্তদের দাবি অবিলম্বে দীর্ঘদিনের এই ভাঙ্গন ঠেকাতে স্থায়ী তীররক্ষা বাঁধ নির্মানের। সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছেন প্রকল্প প্রেরণ করা হয়েছে।অনুমোদন পেলে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া যাবে।

মিরপুর উপজেলার ২নং বহলবাড়িয়া ইউনিয়ন সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ ১৫ বছরের নদী ভাঙ্গনে ৯টি গ্রাম বিশিষ্ট ১৮ দশমিক ৮৬বর্গ কি:মি: আয়তনের ইউনিয়নটির ৩টি গ্রামসহ ১৮ দশমিক ৮৬ হেক্টর জমির মধ্যে অন্তত: সাড়ে ৪শ হেক্টর কৃষি জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। এর ফলে সাড়ে ৭শ কৃষক পরিবার এখন ছিন্নমূল জনগোষ্ঠীতে পরিনত হয়েছে।

বহলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল রানা অভিযোগে জানা গেছে, একেতো নাচুনী বুড়ি তার উপর ঢাকের বারি, একদিকে ভয়াল পদ্মার ভাঙ্গনে জায়গা জমি বাড়িঘর নিশ্চিহ্ন হচ্ছে সেই সাথে সাম্প্রতিক কালের ভাঙ্গনের জন্য প্রধানত দায়ি অবৈধ বালিঘাট। এখানে সরাসরি নদী থেকে পানি মিশ্রিত বালি নদীর মধ্যে থেকে ২শ বা ৩শ মিটার দূরে সমতল কৃষি জমিতে পাহাড় সমান উঁচু করে রাখছে। এই বালির পানি ভু-গর্ভস্থ হয়ে নদীর পানির সাথে সংযোগ হওয়ার ফলে গলন সৃষ্টি হচ্ছে। এতে সমতল জমি ধ্বসে নদী গর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে।

মিরপুর ৩নং তালবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, বিগত ১০ বছরের নদী ভাঙ্গনে ১৪টি গ্রাম বিশিষ্ট ১৬দশমিক ২৬ বর্গ কি:মি: আয়তনের ইউনিয়নটির ৭টি গ্রামসহ ১৬শ ৪৫ হেক্টর কৃষি জমির মধ্যে সাড়ে ৭শ হেক্টর আবাদি কৃষি ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। সেই সাথে প্রায় এক হাজার কৃষক পরিবার সবকিছু হারিয়ে এখন গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা হয়েছেন।

আয়শা বেগম বলেন, ২০ পূর্বে আমার বিয়ের সময় শ^শুড়বাড়ি ছিলো স্বচ্ছল কৃষি নির্ভর। কিন্তু এখন সবকিছু হারিয়ে নি:স্ব কয়েকবার ভাঙ্গনের শিকার হয়ে এবছর শেষ সম্বল মাথা গোজার ঘরটিও ভেঙ্গে গেলো। এক সময়ে স্বামী আমানত কৃষি কাজ করলেও এখন সে ভ্যান চালিয়ে জীবন জীবন ধারণ করে। সর্বনাশা এই ভাঙ্গন ঠেকাতে স্থায়ী বাঁধ নির্মানের দাবি তার।

তালবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান মন্ডল বলেন, দীর্ঘদিনের ভাঙ্গনে ইতোমধ্যে ইউনিয়নের ৩ ভাগের দুইভাগ নদীগর্ভে চলে গেছে। সর্বশেষ এখন যেভাবে ভাঙ্গছে তাতে মিরপুর উপজেলার মানচিত্র থেকে খুব শীঘ্রই তালবাড়িয়া ইউনিয়ন হারিয়ে যাবে। সেই সাথে কুষ্টিয়া-ভেড়ামারা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কটিও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। জরুরী ভিত্তিতে পদ্মার ভাঙ্গন থেকে রক্ষায় স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি তার।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা অসীম সরকার বলেন, এখানকার ভাঙ্গনের যে তীব্রতা তাতে আমরা জনবল লাগিয়ে যা ফেলছি তার সবই গভীরে তলিয়ে যাচ্ছে। এর একমাত্র সমাধান বড় কোন প্রকল্পের মাধ্যমে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, পদ্মার ভাঙ্গন কবলিত ৭কি:মি: এলাকায় ভাঙ্গন রোধে ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞ টিমের পরামর্শক্রমে প্রকল্প প্রনয়ন ও প্রেরণ করা হয়েছে। সেটা এখন প্রি-একনেক পর্যায়ে আছে। অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। অনুমোদন পেলে এই ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন, পদ্মার ভাঙ্গন রোধে প্রেরিত প্রকল্প অনুমোদন পেলে স্থায়ী ব্যবস্থা হবে। সেই সাথে ওই এলাকায় বালিঘাটের কারণে যদি ভাঙ্গনের তীব্রতা বেশী হয় এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads