• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
চলে গেলেন চলচ্চিত্রাভিনেতা আনিস

বিশিষ্ট চলচ্চিত্রাভিনেতা আনিস

সংরক্ষিত ছবি

শোক সংবাদ

চলে গেলেন চলচ্চিত্রাভিনেতা আনিস

  • অভি মঈনুদ্দীন
  • প্রকাশিত ৩০ এপ্রিল ২০১৯

চলে গেলেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্রাভিনেতা আনিস (৭৮)। গত রোববার রাত ১১টায় রাজধানীর টিকাটুলীর অভয়দাস লেনে নিজ বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

গতকাল সকাল ৯টায় টিকাটুলী জামে মসজিদে প্রথম জানাজ, বিএফডিসিতে সকাল ১১টায় দ্বিতীয় জানাজা এবং তৃতীয় জানাজা তার জন্মস্থান ফেনীর ছাগলনাইয়ার বল্লবপুর গ্রামে অনুষ্ঠিত হওয়ার পর তাকে দাফন করা হয়। আনিস তার স্ত্রী কুলসুম আরা বেগমকে হারিয়েছেন ২০১৩ সালে। দুই মেয়ের এক মেয়ে থাকেন দেশের বাইরে। রাজধানীর টিকাটুলীর অভয় দাস লেনের গুছানো পরিপাটি এক বাসাতেই এখন একাই জীবনযাপন করছিলেন বরেণ্য এই অভিনেতা। তবে সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবনযাপনই করছিলেন তিনি। আনিসের বাবা আমিনুর রহমানের চা বাগানের ব্যবসা ছিল জলপাইগুড়িতে। বাবার ব্যবসার কারণে ফেনীর আমিনুর রহমানকে ওখানেই থাকতে হতো। তাই আনিসের জন্মও হয় সেখানেই।

একটু বেশি দেরিতে দাঁত উঠেছিল বিধায় পরিবারের অনেকেই আনিসকে বুড়া বলে ডাকতেন। এক সময় জলপাইগুড়ি ছেড়ে আনিসদের পরিবারকে গ্রামে চলে আসতে হলো। সেখানেই আনিসের পড়াশোনা শুরু। স্কুল জীবনে ‘ড্রেস এজ ইউ লাইক’ অনুষ্ঠানে আনিস নিজে মনের মতো সাজতেন। পুরস্কার হিসেবে পেতেন ৫০-৬০ টাকা। সেই টাকা স্কুলে পিয়নদের দিয়ে দিতেন। এক সময় ঢাকায় এলেন আনিস। বড় ভাই লুৎফর রহমান এফডিসিতে চাকরি করতেন।

এখনো পুরনো ছবি প্রদর্শিত হলে তার বড় ভাইয়ের নাম ‘অপটিক চিত্র-লুৎফর রহমান’ দেখা মিলে। বড় ভাই তাকে সেই সময়ের বিখ্যাত ফটোগ্রাফার সাঈদুর রহমানের স্টুডিওতে কাজ দিয়ে দিলেন। আনিস শুরু করলেন ফটোগ্রাফির কাজ। পরিচয় হয় এফডিসির সাউন্ড রেকর্ডিস্টের সঙ্গে। বড় ভাইয়ের অনুমতি নিয়েই তিনি আনিসকে সম্পাদনার চাকরি দিলেন। সেখানে পরিচয় হয় বিখ্যাত ক্যামেরাম্যান সাধন রায়ের সঙ্গে। তিনিই তাকে প্রথম উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ করে দিলেন। শুরু হলো শুটিং। আনিস বলছেন- ‘আহ একটা কথা বুঝনা কেন নানি, ঐ মাইয়া আমাগো ঘরে আইলে কপাল খুইলা যাইব।’ কিন্তু ক্যামেরাম্যান পরিচালককে বললেন, ‘এই মাল কোত্থেকে আনছেন আপনি, না আছে গলা, না আছে চেহারা’। এই কথা শুনে আনিস পালিয়ে আসেন। পরে জিল্লুর রহিমের ‘এইতো জীবন’ চলচ্চিত্রে অভিনয় দিয়ে শুরু হয় আনিসের অভিনয় জীবন। এটি ১৯৬৪ সালে মুক্তি পায়। সেই সময় তিনি চলচ্চিত্রের সম্পাদনার কাজ করতেন এহতেশাম ও মুস্তাফিজের সঙ্গে।

অভিনয়ে ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় সম্পাদনার কাজ তাকে এক সময় ছেড়ে দিতে হলো। আনিস একাধারে একজন চলচ্চিত্রাভিনেতা, রেডিও আর্টিস্ট এবং নাট্যাভিনেতা। টিভিতে অভিনয়ের সুযোগ করে দিয়েছিলেন কলিম শরাফী নিজেই। আবার রেডিওতে অভিনয় করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন খান আতাউর রহমান। তবে তিনি নিজে কোথাও কখনোই যাননি। সবাই তার প্রতিভারই মূল্যায়ন করার চেষ্টা করেছেন। আনিসের মাঝে যে প্রতিভা ছিল তা সবাই বুঝতেন বলেই তাকে নিয়ে সাহস করতেন কলিম শরাফী, খান আতাউর রহমানের মতো চৌকস, মেধাবী ব্যক্তিত্বরা। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে নায়কদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন আনিস নায়করাজ রাজ্জাক, ফারুক ও শাকিব খানের সঙ্গে। নায়িকাদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন শবনম, সুজাতা, শাবানা ও শাবনূরের সঙ্গে।

মৃত্যুর আগে আনিস বলেছিলেন, ‘আমার আজকের এই পর্যায়ে আসার পেছনে যাদের ভূমিকা ছিল ভীষণ তারা হলেন এহতেশাম, মোস্তাফিজ, কাজী জহির, কামাল আহমেদ, আজিজুর রহমান, ই আর খান মামা, উত্তম আকাশসহ আরো কয়েকজন পরিচালক।’

আনিস সবশেষ অভিনয় করেছেন উত্তম আকাশ পরিচালিত একটি চলচ্চিত্রে। আনিস অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হচ্ছে- ‘এই তো জীবন’, ‘পয়সে’, ‘মালা’, ‘জরিনা সুন্দরী’, ‘জংলী মেয়ে’, ‘মধুমালা’, ‘ভানুমতি’, ‘পদ্মা নদীর মাঝি’, ‘সূর্য ওঠার আগে’, ‘অধিকার’ ‘অঙ্গার’, ‘বারুদ’, ‘ঘর সংসার’, ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’, ‘পুরস্কার’, ‘লাল কাজল’, ‘নির্দোষ’, ‘সানাই’, ‘উজান ভাটি’, ‘তালাক’ ইত্যাদি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads