• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প

  • প্রকাশিত ০৭ মে ২০১৮

ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল আয়তনের ক্ষুদ্র একটি দেশ আমাদের প্রিয় এই মাতৃভূমি। আয়তনে ছোট হলেও বাংলাদেশের আছে এক সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য। আর আছে এ দেশের অপার সৌন্দর্য। এ দেশের সৌন্দর্যে যুগে যুগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকেরা মুগ্ধ হয়েছেন। কালে কালে এ দেশের সৌন্দর্য এবং প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতি লোলুপ দৃষ্টি দিতেও কুণ্ঠিত হয়নি বিদেশি বেনিয়া শক্তি। বার বার বৈদেশিক আক্রমণের শিকার হয়েছে এই সোনার বাংলা। চতুর্দশ শতাব্দীতে মরক্কোর জগিবখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা নৌকাযোগে সোনারগাঁ থেকে সিলেট যাওয়ার পথে নদীর দু’কূলের অপার সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়েছিলেন। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য, বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি, দৃষ্টিনন্দন জীবনাচার বাংলাদেশকে করেছে আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্যস্থল। এ দেশের প্রকৃতির রূপ-রস এবং ঐতিহাসিক নিদর্শনের বিচিত্রতা সহজেই মন কাড়ে পর্যটকদের।

এ দেশে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম নিরবচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, পৃথিবীর একক বৃহত্তম জীববৈচিত্র্যে ভরপুর ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন, একই সৈকত থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত অবলোকনের স্থান সমুদ্রকন্যা কুয়াকাটা, দুটি পাতা একটি কুঁড়ির সবুজ রঙের নয়নাভিরাম চারণভূমি সিলেট, আদিবাসীদের বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি ও কৃষ্টি-আচার সমৃদ্ধ উচ্চ সবুজ বনভূমি ঘেরা চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চল, সমৃদ্ধ অতীতের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দেশের উত্তরাঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো। ফলে স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে উন্নয়নের সমূহ সম্ভাবনা বিদ্যমান।

বর্তমান পৃথিবীতে পর্যটন একটি সমৃদ্ধ এবং সফল শিল্প। পৃথিবীতে এমন অনেক দেশ আছে যাদের আয়ের সবচেয়ে বড় খাত এই পর্যটন শিল্প। শুধু তাই নয়, এই শিল্প এবং শিল্পসংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের সঙ্গে হাজার হাজার মানুষ জড়িত থাকে। ফলে একটি দেশের বেকার যুবকদের একটি বড় অংশের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। পৃথিবীর সমগ্র জনগোষ্ঠীর প্রতি ১১ জনের মধ্যে গড়ে ১ জন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত। এই তথ্য থেকেই পর্যটন শিল্পের সম্প্রসারণশীলতা অনুমান করা যায়।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি আমাদের বাংলাদেশে পর্যটন শিল্প বিকাশের সমূহ সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও স্বাধীনতার ৪৬ বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা খুব একটা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারিনি। এই খাতটি থেকে সরকারের বিপুল অর্থ উপার্জনের সম্ভাবনা থাকলেও বরাবরই উপেক্ষিত থেকেছে। পর্যটন শিল্প বিকাশের পথে আমাদের পর্বতপ্রমাণ সমস্যা নিয়ে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এ ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন খুব একটা সুবিধাজনক হয়ে ওঠেনি তেমনি যাতায়াত খরচও তুলনামূলক বেশি হওয়ায় আমরা পর্যটক আকর্ষণে ব্যর্থ হচ্ছি।

দেশের পর্যটক আকর্ষণকারী স্থানগুলোতে নিরাপত্তার যথেষ্ট ঘাটতি রয়ে গেছে। চুরি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনার কারণে বিদেশি পর্যটকেরা নিরাপত্তার অভাবে দর্শনীয় স্থানগুলোতে ভ্রমণে আগ্রহ প্রকাশ করেন না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এদিকে দৃষ্টি দেওয়া সবার আগে উচিত। অন্যদিকে নিজেদের সামান্য স্বার্থের আশায় আমরা সুন্দরবনের মতো প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা বন থেকে গাছ কেটে ও বন্যপ্রাণী শিকার করে ধ্বংস করে দিয়েছি এর অপরূপ জীববৈচিত্র্যকে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, কক্সবাজারের পৌর এলাকায় প্রতিদিন শহরে ৩০ টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এসব বর্জ্য নালা কিংবা সমুদ্রে ফেলা হয়। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ১০-১৫ বছরের মধ্যে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হবে এবং দূষিত গন্ধ ছড়াবে।

এত সমস্যা থাকার পরও আমাদের পর্যটন শিল্প ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। একটি পরিসংখ্যান মতে, ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে সরকারের বৈদেশিক আয় হয়েছে ৪ হাজার ১৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের মধ্যে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা আনুমানিক ১০ লাখে উন্নীতকরণের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এসব তথ্য অবশ্যই মনে আশার সঞ্চার করে এবং পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করতে পারার স্বপ্ন দেখায়। বাংলাদেশে হয়তো কোনো সোনা, রূপা কিংবা হীরার খনি নেই; কিন্তু আমাদের আছে প্রাকৃতিক সম্পদের এক বিপুল ভান্ডার। এ দেশের পর্যটনে প্রচলিত চিন্তা-চেতনার বাইরে বাংলাদেশের ভৌগোলিক পরিবেশকে বিবেচনায় নিয়ে দেশীয় পর্যটন শিল্পের বিকাশ করা সম্ভব। এতে অভ্যন্তরীণ পর্যটকের সংখ্যাও বিপুলভাবে বেড়ে যাবে। এর জন্য প্রয়োজন আন্তরিকতা ও নিজেদের সম্পদের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ। তবেই আমাদের পর্যটন শিল্প বিশ্বমানে উপনীত হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

 

আরাফাত শাহীন

নিবন্ধকার

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads