• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

পাহাড়ধসের শঙ্কায় দিন কাটছে রোহিঙ্গাদের

  • হুসাইন রবিউল
  • প্রকাশিত ১১ মে ২০১৮

বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই পাহাড়ধসের শঙ্কায় দিন কাটছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গার। কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় পাহাড়ের ওপর তৈরি করা আশ্রয় শিবিরগুলোতে এখন আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠায় দিন গুনছে তারা। আসন্ন বর্ষায় পাহাড়ধস থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো পথও খুঁজে পাচ্ছে না রোহিঙ্গারা। পাহাড়ে নির্মিত আশ্রয় শিবির ছেড়ে সমতলে আশ্রয় নেওয়ারও কোনো সুযোগ নেই তাদের। তা ছাড়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে চাইলেই রাতারাতি কোনো নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে সেখানে ঝুপড়ি ঘরে বাস করা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে সম্ভাব্য পাহাড়ধস ঠেকাতে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) যৌথভাবে কিছু কাজ শুরু করেছে। তারা উখিয়ার প্রায় ৩৩টি পাহাড় কেটে বসবাসের উপযোগী করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে এ উদ্যোগ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।

অপরদিকে পাহাড়ধস ঠেকাতে গিয়ে পুরো পাহাড় কেটে সমতল করে ফেলা অনেকটা মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার মতো অবস্থা বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা। পাহাড় কেটে সমতল করে ফেলায় ওই এলাকার প্রকৃতিতে পড়তে শুরু করেছে বিরূপ প্রভাব। বিদেশি সংস্থাগুলোর এমন কর্মকাণ্ডে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও করছেন পরিবেশবিদরা। কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। পাহাড়ে আশ্রয় শিবির তৈরি করতে গিয়ে সেখানকার বেশিরভাগ পাহাড়ের গাছপালা কেটে ফেলা হয়েছে। জীববৈচিত্র্যও পড়েছে ভয়াবহ হুমকির মুখে। ওই অঞ্চলের পাহাড়গুলো মূলত বেলে মাটির। এমনিতেই বর্ষা মৌসুমে এগুলোতে ধসের আশঙ্কা থাকে। তার ওপর পাহাড়ের গাছপালা কেটে ফেলার কারণে সেখানকার পাহাড়গুলোর মাটির গঠন অনেকটাই দুর্বল হয়ে গেছে। তা ছাড়া পাহাড়ে আশ্রয় শিবির করতে গিয়ে অপরিকল্পিতভাবে কাটা হয়েছে সেখানকার পাহাড়। সবকিছু মিলে আসন্ন বর্ষায় এখানে পাহাড়ধসের শঙ্কা বেড়েছে বহুগুণে। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের কারণে পাহাড়ি ছড়াগুলোও বিভিন্ন জায়গায় বন্ধ হয়ে গেছে।

আসন্ন বর্ষায় প্রবল পাহাড়ি ঢল শুরু হলে ছড়াগুলো দিয়ে স্বাভাবিকভাবে পানি নিষ্কাশন না হতে পারলে পাহাড়ধসের ঘটনা বাড়বে। আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বর্ষা মৌসুমে টানা বৃষ্টিপাতে পাহাড়ধসের শঙ্কার পাশাপাশি বিভিন্ন রোগবালাইয়ের ঝুঁকিতেও রয়েছে। বিশেষ করে শিবিরে থাকা নারী ও শিশুদের বর্ষাকালীন স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রবল। কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া এই দুই উপজেলায় যে দশ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে তাদের মধ্যে দেড় লক্ষাধিক বাস করছে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে। কিছুটা আশার কথা হচ্ছে, স্থানীয় প্রশাসন অধিক ঝুঁকিতে থাকা রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করে তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত কত সংখ্যক শরণার্থীকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে তা স্পষ্ট নয়। কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা রোহিঙ্গাদের আসন্ন বর্ষার ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য প্রায় ৮৪ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এতে রোহিঙ্গা শরণার্থীর একটি অংশ পাহাড়ধসের আশঙ্কা থেকে কিছুটা নিস্তার পেলেও বাকিরা থেকে যাচ্ছে যথারীতি ঝুঁকির মধ্যে।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আসন্ন বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ধস থেকে রক্ষা করতে যেভাবে সেখানে পাহাড় কেটে সমতল করা হচ্ছে সে চিত্র ভয়াবহ। যে পাহাড়গুলো সমতল করে ফেলা হচ্ছে পরবর্তী সময়ে সেগুলো চাইলেও আর পাহাড়ে রূপান্তরিত করা যাবে না। তার মানে চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছে ওই অঞ্চলের ভূমি রূপ। রাতারাতি ভূমির এই রূপান্তর সেখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের তথ্য মতে, সেখানে প্রায় ৫ হাজার ৫১৩ একর জায়গা বর্তমানে রোহিঙ্গাদের দখলে রয়েছে। সেখানে অবাধে কাটা হচ্ছে পাহাড়। তবে সবকিছু ছাপিয়ে ওই অঞ্চলে আশ্রয় নেওয়া বিপন্ন রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিই এখন মুখ্য হয়ে উঠেছে।

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads