• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
একই তারিখে বিশ্বে রমজান শুরুর সম্ভাবনা

সংরক্ষিত ছবি

মতামত

একই তারিখে বিশ্বে রমজান শুরুর সম্ভাবনা

  • ড. যুবাইর এহসান
  • প্রকাশিত ১৬ মে ২০১৮

ইসলামী ক্যালেন্ডার চন্দ্রভিত্তিক। তাই আরবি মাসের সূচনা জানার জন্য নতুন চাঁদ দেখা গুরুত্বপূর্ণ। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা নতুন চাঁদ দেখে রোজা রেখো, নতুন চাঁদ দেখে রোজা ভেঙো।’ রোজা রাখা বা ঈদ উদযাপনের জন্য নতুন চাঁদ দেখার অর্থ এই নয় যে, সিয়াম সাধনা বা ঈদ উৎসব পালনের সঙ্গে চাঁদের কোনো সম্পর্ক আছে। চাঁদ দেখতে হয় রমজান বা শাওয়াল মাসের সূচনা জানার জন্য। চাঁদ দেখার মাধ্যমে রমজান মাস শুরু হয়েছে এটি নিশ্চিত হওয়ার পর সিয়াম পালন শুরু হবে। এরপর পুরো রমজানে আর চাঁদ দেখার প্রয়োজন নেই।

প্রাকৃতিক কারণে পৃথিবীর সব স্থানে একই সন্ধ্যায় নতুন চাঁদ দেখা যায় না। নতুন চাঁদ দেখতে কখনো কখনো ৩৬ বা ৪৮ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। তাই প্রশ্ন ওঠে- পৃথিবীর বিভিন্ন জনপদ বা দেশের মানুষ কি স্থানীয় চন্দ্রদর্শনের ওপর ভিত্তি করে রোজা-ঈদ পালন করবে, না পৃথিবীর কোনো এক স্থানে চাঁদ দেখা গেলে সারা পৃথিবীর মানুষ রমজান মাস শুরু করবে? ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর অভিমত ছিল এই যে, উদয় স্থলের বিভিন্নতা ধর্তব্য নয়; অর্থাৎ বিশ্বের কোনো স্থানে চাঁদ দেখা গেলে সেই সংবাদ বিশ্বস্ত উপায়ে যেখানেই পৌঁছবে, সেখানেই রোজা শুরু করতে হবে। ইমাম মালিক ও আহমদ ইবন হাম্বল (রহ.) থেকেও অনুরূপ অভিমত বর্ণিত হয়েছে। তবে এটা সত্য যে, সেই যুগে এই অভিমত বাস্তবায়ন করা সম্ভব ছিল না। তাই পরবর্তী আলিমরা মতপ্রকাশ করেন যে, স্থানীয় চন্দ্রদর্শনের ভিত্তিতে ঈদ-রোজা পালন করতে হবে। এতদিন তা-ই হয়ে আসছিল। এ কারণে আমরা কোনো কোনো বছর সৌদি আরবের চেয়ে একদিন বা দুদিন পরে রোজা-ঈদ পালন করি।

বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে পৃথিবীর এই প্রান্তের খবর ওই প্রান্তে পৌঁছে যায়। এ অবস্থায় পুরনো প্রশ্নটি নতুনভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে— ‘এখন তো সংবাদপ্রাপ্তিতে কোনো অসুবিধা নেই। এখন কি বৈশ্বিক চন্দ্রদর্শন ধর্তব্য হবে?’ এ বিষয়ে আলিমরা ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেননি। উপমহাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ আলিম এখনো স্থানীয় চন্দ্রদর্শনের পক্ষে। সৌদি আলিমরা এ বিষয়ে ঐচ্ছিকতার সুযোগ গ্রহণের পক্ষপাতি; তাদের মতে, বৈশ্বিক চন্দ্রদর্শন বা স্থানীয় চন্দ্রদর্শন— এ দুটির যেকোনো একটির ওপর আমল করা যেতে পারে। তবে শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে এ বিষয়ে নিজ নিজ দেশের আলিমদের মতের ওপর নির্ভর করা প্রয়োজন। আমাদের দেশে একদল মানুষ বৈশ্বিক চন্দ্রদর্শনের ওপর আমল করার ব্যাপারে অতিরিক্ত উৎসাহী। তাই তারা সৌদি আরবের অনুসরণে বাংলাদেশের একদিন আগে (কখনো বা দুদিন আগে) রোজা-ঈদ পালন করেন।

এমন প্রেক্ষাপটে এ বছর (১৪৩৯ হিজরি) একটি বিরল ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে আর তা হলো, সমগ্র বিশ্বে একই দিনে রমজান মাস শুরুর সম্ভাবনা। এটি বলার আগে চন্দ্রোদয় সম্পর্কে সামান্য আভাস দেওয়া প্রয়োজন। পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে, আবার পৃথিবীকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় চাঁদ। তবে চন্দ্রের আবর্তনের হিসাব পৃথিবীর মতো সুনির্ধারিত নয়। প্রতিমাসে কক্ষপথের একই স্থানে নতুন চাঁদের জন্ম হয় না। তাই একই স্থান থেকে প্রতিমাসের নতুন চাঁদ দেখা যায় না। কখনো উত্তর গোলার্ধে সবার আগে নতুন চাঁদ দেখা যায়, কখনোবা দক্ষিণ গোলার্ধে। তবে নতুন চাঁদ সাধারণত পশ্চিমের দেশগুলোতে আগে দেখা যায়। এবারের ঘটনাও ভিন্ন নয়। বিজ্ঞানীদের হিসাবমতে, এ বছর রমজান মাসের জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক নতুন চাঁদের [Astronomical New Moon] (এটি কখনো খালি চোখে দেখা যায় না) জন্ম হবে ১৫ মে ২০১৮, মঙ্গলবার গ্রিনিচ মান সময় সকাল ১১টা ৪৭ মিনিট ২৭ সেকেন্ডে। তখন বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার বিকাল ৫টা ৪৭ মিনিট। সৌদি সময় দুপুর ২টা ৪৭ মিনিট। এই চাঁদ দৃশ্যমান হতে কমপক্ষে ১৩ থেকে ১৮ ঘণ্টা সময় প্রয়োজন। নতুন চাঁদ সর্বপ্রথম খালি চোখে দেখা যাবে পাপুয়া নিউগিনিতে ১৬ মে, বুধবার সন্ধ্যায়। তারপর ধীরে ধীরে যতই পশ্চিমের দেশগুলোতে রাত আসবে, ততই চাঁদটিকে উজ্জ্বল দেখা যাবে। খালি চোখে চাঁদ দেখার বিচারে এবার আমরা সৌদি আরবের আগে চাঁদ দেখতে পাব। অর্থাৎ পূর্বের দেশ অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিমে আমেরিকা-কানাডায় এ বছর একই তারিখ/বার তথা ১৭ মে বৃহস্পতিবার প্রথম রোজা পালিত হবে। অন্য কথায় বলা যায়, মুসলমানদের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা না হলেও আল্লাহতায়ালা প্রাকৃতিকভাবে তাদের একই দিনে রোজা পালনের সুযোগ করে দিলেন। তবে এখানে একটি কথা বলা যায়, কয়েকটি দেশ স্থানীয় বা বৈশ্বিক চন্দ্রদর্শন— এই দুটির কোনোটি অনুসরণ করে না। যেমন— তুরস্ক। এ দেশটি কয়েক বছর ধরে জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাবের ওপর নির্ভর করে রোজা-ঈদ পালন করে আসছে। সেই হিসাবে ১৬ তারিখ বুধবার তুরস্কে রোজা শুরু হয়ে যাবে। চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করলে সেটা স্থানীয় দর্শন হোক বা বৈশ্বিক দর্শন— এ বছর সারা বিশ্বে রোজা শুরু হবে ১৭ মে বৃহস্পতিবার, ইনশাল্লাহ! আশা করি, নানা কষ্ট ও বিভক্তির মাঝে মুসলিম উম্মাহ এতটুকু ঐক্যের আনন্দ ভাগাভাগিতে কুণ্ঠাবোধ করবে না।

সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads