• শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪২৯
স্বপ্ন ও সাংঘর্ষিক শিক্ষাজীবন

প্রত্যেক ব্যক্তির জীবনে স্বপ্ন থাকে

সংরক্ষিত ছবি

মতামত

স্বপ্ন ও সাংঘর্ষিক শিক্ষাজীবন

  • প্রকাশিত ২৬ মে ২০১৮

স্বপ্ন মানুষকে বাঁচায়। অনুপ্রেরণা জোগায় জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার। প্রত্যেক ব্যক্তির জীবনে স্বপ্ন থাকে। কেউ স্বপ্ন দেখে আকাশ ছোঁয়ার, কেউ-বা স্বপ্ন দেখে ডাক্তার হওয়ার, কেউ-বা স্বপ্ন দেখে শিক্ষক, প্রকৌশলী কিংবা বিসিএস ক্যাডার হওয়ার। সবাই নিজের স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে সফল হওয়ার চেষ্টা করে। কেউ সফল হয়, কেউ হেরে যায়। ব্যক্তিভেদে স্বপ্ন আলাদা। তবে বুকে স্বপ্ন লালন করা সেই স্বপ্নবাজদের কতটুকু সহায়তা দিতে পারছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। প্রশ্নটা থেকেই যায়?

বর্তমানে অধিকাংশ পিতামাতা নিজের সন্তানের পড়ালেখা ও কর্মজীবনের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করে দেন। সন্তান স্বপ্ন দেখে শিক্ষক হওয়ার, আর পিতামাতা স্বপ্ন দেখে সন্তানকে ডাক্তার বানানোর। পিতামাতার চাপানো স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে সন্তান তার স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যায়। যার ফলে সন্তানটি পড়ালেখা করে ঠিকই কিন্তু সাফল্যের হার কমে যায়। এটাই বাস্তবতা। এই বাস্তবতা মেনে নিয়েই অনেক শিক্ষার্থী নিজের সেরাটা দেওয়ার পরও জীবনে সাফল্য থেকে বঞ্চিত থাকে। তাহলে দোষটা কার? পিতামাতা নাকি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা?  

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা মানেই বৈষম্য। শিক্ষাব্যবস্থার পরতে পরতে তা বিদ্যমান। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় সর্বক্ষেত্রে তা লক্ষ করা যায়। এখন শিক্ষার জন্যে চাই টাকা। আর টাকা থাকলেই শিক্ষা পাওয়া সম্ভব। শিক্ষা বলতে ভালো স্কুল কিংবা কলেজে ভালো পড়ালেখা। এসব স্কুল-কলেজে পড়তে গেলেই গুনতে হয় বিশাল অঙ্কের টাকা। ঢাকা মহানগরীতে প্রায় ৩০০ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে অবকাঠামো, খেলার মাঠ, শিক্ষকসহ অন্যান্য সুবিধা থাকার পরও সেখানে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ভর্তি করাতে চান না। মূলত এসব স্কুলে নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা পড়ালেখা করে। অন্যদিকে ঢাকা মহানগরীতে ৩২১টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে, যার সবই শুরু হয় প্রথম শ্রেণি থেকে। এর মধ্যে ২০ থেকে ২৫টি নামিদামি স্কুল। এসব প্রতিষ্ঠানে অভিভাবকরা সন্তানদের ভর্তি করাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে থাকেন। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এসব প্রতিষ্ঠানে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানো হয়। মেধা দিয়ে নয়, ভাগ্য দিয়ে ভর্তি করানো হয়। ছোটবেলা থেকেই একটি শিশুর ভবিষ্যৎ লটারির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়। এই হচ্ছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা।

সম্প্রতি এসএসির ফল প্রকাশিত হয়েছে। আর ফলাফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের ভর্তি হতে হবে উচ্চমাধ্যমিকে। যেসব শিক্ষার্থী মেধার স্বাক্ষর রেখে জিপিএ-৫ পেয়েছে তারা ভালো কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবে। বিষয়টি স্বাভাবিক। যারা খারাপ ফলাফল করেছে তারা খারাপ কলেজে পড়ার সুযোগ পাবে। আমার কথাটা হচ্ছে, খারাপ শিক্ষার্থীরা তাহলে কি ভালো করার সুযোগ পাবে না? এখানেও বৈষম্য। কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থায় একই নিয়ম। ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তির সুযোগ। যার ফলে একশ্রেণির শিক্ষার্থী বেশি লাভবান হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা ভালো পরিবেশের অভাবে ভালো ফলাফল করতে পারে না। হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে জিপিএ-৫ পাওয়ার খবর শোনা যায়। অন্যদিকে শহরের এক প্রতিষ্ঠান থেকে ৫০ কিংবা ১০০ জনের জিপিএ-৫ পাওয়ার খবর পত্রপত্রিকায় পাওয়া যায়। এসব প্রতিষ্ঠানে কাদের সন্তানেরা পড়াশোনা করে? আমার সুযোগ হয়েছিল দিনাজপুরের এক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাজ করার। সেই সুবাধে আমি দেখেছি কীভাবে খুব সহজে জিপিএ-৫ পাওয়া যায়। দেখবেন, পাবলিক পরীক্ষার সময় এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রের এক কক্ষে বসানো হয়। এজন্য, যাতে সবাই ভালো করতে পারে। এদের নীতি হচ্ছে একজন পারলে সবাইকে তা দিতে হবে। কারণ জিপিএ-৫ ছাড়া তাদের প্রতিষ্ঠান চলবে না। আর এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকরা স্বভাবতই প্রভাবশালী হয়ে থাকে। তবে কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা সত্যিকার অর্থে শিক্ষার্থীদের মেধাবী করে গড়ে তোলে। তবে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার গুণগত মান উপলব্ধি করা যায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষার সময়। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে যে হারে জিপিএ ৫ আসে সে হারে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চান্স পায় না। কারণ কী?

উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর অধিকাংশ শিক্ষার্থীর লক্ষ্য থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। সেই স্বপ্নে বুক বেঁধে ৩ মাস কঠোর পরিশ্রম করে শিক্ষার্থীরা। দিনরাত সমান তালে চলে পড়ালেখা। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর লক্ষ্য থাকে দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। একটা কথা প্রচলিত আছে, যে বিষয়েই হোক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেই ভবিষ্যৎতে ভালো কিছু করা যায়। আমার কথাটা হচ্ছে, নিজের স্বপ্নকে প্রাধান্য না দেওয়া। পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনা করে আমরা নিজের স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দিয়ে থাকি। কেন আমরা নাম বিচারে বাস্তবতাকে অস্বীকার করি। এই কারণেই দেশে বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ছে। কারণ অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিজের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারে না। যার ফলে কর্মজীবনে গিয়ে হতাশ হয়ে পড়ে তারা। অনার্সপড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থী নিজের লক্ষ্য নির্ধারণ করে তৃতীয় বর্ষ কিংবা অনার্স পাস করে। যার ফলে স্বল্প সময়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে ব্যর্থ হয় তারা। এর জন্য দায়ী যেমন অভিভাবক, তেমনিভাবে শিক্ষাব্যবস্থা সমানভাবে দায়ী। কারণ অভিভাবকদের স্বপ্ন পূরণ করতে সন্তানরা নিজের স্বপ্নকে হারিয়ে ফেলে। যার ফলে ক্ষতি হয় দেশের, ক্ষতি হয় নিজের। তাই অপার সম্ভাবনাময় দেশকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরতে তরুণদের নিজের স্বপ্ন পূরণের সুযোগ করে দেওয়া সমাজেরই দায়িত্ব। তাতেই সাফল্য ও কল্যাণ নিহিত।

ইমানুল সোহান

সমাজসেবী, কুষ্টিয়া

eshohan17@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads