• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় 

দক্ষ জনশক্তি গড়ার অন্যতম মাধ্যম হলো বিজ্ঞান শিক্ষা

সংরক্ষিত ছবি

মতামত

এক দশক পূর্তি

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় 

  • প্রকাশিত ০৫ জুন ২০১৮

বিজ্ঞান, প্রকৌশল আর প্রযুক্তি শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম ও অনস্বীকার্য। একটি দেশকে উন্নত পর্যায়ে পৌঁছাতে হলে আধুনিক দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার বিকল্প নেই। আর দক্ষ জনশক্তি গড়ার অন্যতম মাধ্যম হলো বিজ্ঞান শিক্ষা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বেশ কয়টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর অন্যতম হলো পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী চিন্তা, আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ার পরিকল্পনা, বিজ্ঞানমুখী শিক্ষাব্যবস্থা, বিশেষ করে দেশকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর উন্নত বিশ্বের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার যে স্বপ্ন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপের ফসল পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

আজ ৫ জুন ২০১৮ পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার এক দশক পূর্তি। দেখতে দেখতে দশটি বছর পেরিয়ে ১১ বছরে পদার্পণ করল এই নবীন বিশ্ববিদ্যালয়। পাবনার মতো অবহেলিত একটি জেলার শিক্ষা, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক তথা সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অতীব জরুরি ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি ইতোমধ্যে পাবনা তথা সারা দেশে আলো ছড়াতে শুরু করেছে। জ্ঞান অর্জনের তীর্থভূমিতে পরিণত হতে চলেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। বিজ্ঞানমুখী শিক্ষার প্রসার, সারা দেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, জ্ঞানচর্চা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যথাযথ গুরুত্ব প্রদানসহ পঠন-পাঠন এবং গবেষণার সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করেছে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

২০০১ সালের ১৫ জুলাই মহান জাতীয় সংসদে ‘পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প’ বিল পাস হয়। আইন পাসের পর নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে ২০০৮ সালে পাবনা শহর থেকে তিন কিলোমিটার পূর্বদিকে ৩০ একর জমির ওপর বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৯ সালের ৫ জুন শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। তারপর থেকেই হাঁটি হাঁটি পা পা করে বিশ্ববিদ্যালয়টি মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়িয়ে গেছে। এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে দক্ষ কর্মী তৈরি হচ্ছে এখানে।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচটি অনুষদে ২১টি বিভাগের অধীনে প্রায় চার হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। রয়েছে একটি আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, বি.অর্ক, বিএসসি (অনার্স), বি ফার্ম (অনার্স), বিএসএস (অনার্স), বিএ (অনার্স), বিবিএ, এমএসসি, এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, ইএমবিএ, এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি চালু আছে। এ ছাড়া রয়েছে বিভিন্ন সার্টিফিকেট কোর্স।

শুরু থেকেই এখানে মানসম্মত শিক্ষার পাশাপাশি  আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। পাঠদান কার্যক্রম সেমিস্টার পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়। আট সেমিস্টারের সময়সীমায় প্রতিবছর দুটি সেমিস্টার। মাত্র চার বছরেই এখান থেকে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারছে। ইতোমধ্যে চারটি ব্যাচ শিক্ষাজীবন শেষ করেছে। নেই কোনো সেশনজট।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান ভবন শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানচর্চার উর্বর ক্ষেত্র। রয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও শেখ হাসিনা ছাত্রী হল। লাইব্রেরিতে ই-বুক ও ই-জার্নালের সুবিধা ছাড়াও যুগোপযোগী ২৫ হাজার বই আছে। কম্পিউটার ল্যাব ও বিজ্ঞানাগার সর্বশেষ প্রযুক্তি সরঞ্জাম সমৃদ্ধ। বর্তমান যুগ অনলাইন সংবাদপত্রের যুগ। তারই অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের রয়েছে একটি পোর্টাল। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় তথা শিক্ষাক্ষেত্রে এটি নব উদ্যোগ। এর মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে অনন্য উদাহরণ তৈরি হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ছাড়াও পাঠকরা তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সংবাদ জানতে পারছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে। স্বাধীনতা চত্বর থেকে শিক্ষার্থীরা জানতে পারছে ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস। রয়েছে  জার্নালসহ বিভিন্ন প্রকাশনা।

ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম রোস্তম আলী ও প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আনোয়ারুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও দাফতরিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হয়। মাত্র দশ বছরেই এই বিশ্ববিদ্যালয় ‘সেন্টার অব এক্সিলেন্স’ হিসেবে গড়ে উঠেছে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ১৫০ জন শিক্ষক আপ্রাণ চেষ্টা করছেন শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ মানসম্মত শিক্ষা দিতে, যাতে তারা আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা পায় এবং প্রতিযোগিতার বাজারে নিজেদের যোগ্য ‘পণ্য’ করে তুলতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ফলে পাবনা তথা এ এলাকার মানুষের উচ্চশিক্ষার পথ সুগম হয়েছে। পাশাপাশি আর্থ- সামাজিক পরিমণ্ডলে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। স্বল্প সময়ে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় মানুষের প্রত্যাশা- বিশ্ববিদ্যালয়টি আধুনিক বিজ্ঞান-প্রযুক্তিময় জ্ঞানে সমৃদ্ধ, যুগোপযোগী, দক্ষ ও মানবিকতাবোধ সম্পন্ন মানবসম্পদ তৈরি করে বিশ্বে অনন্য গৌরব অর্জন করবে।

ফারুক হোসেন চৌধুরী

সহকারী পরিচালক, জনসংযোগ দফতর,

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads