• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
প্রাকৃতিক পরিবেশের দূষণ-দখল

অস্ব্বীকার করার উপায় নেই, পরিবেশ বাঁচলেই বাঁচব আমরা

সংরক্ষিত ছবি

মতামত

প্রাকৃতিক পরিবেশের দূষণ-দখল

  • প্রকাশিত ৩০ জুন ২০১৮

সাঈদ চৌধুরী

সুস্থ-সুন্দর-সমৃদ্ধ মানব প্রজন্মের জন্য সবুজে ঘেরা প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার বিকল্প নেই। অথচ নির্বিচারে বৃক্ষনিধন আর অপরিকল্পিত শিল্পায়নের কারণে যে হারে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে তাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে শঙ্কা আছে। শুধু বেঁচে থাকার তাগিদেই নয়, বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার জন্যও সবুজে আচ্ছাদিত বৃক্ষশোভিত প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রয়োজন। প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশে প্রতিবছরই ঝড়-জলোচ্ছ্বাস-খরা-বন্যা আঘাত হানে। এসব দুর্যোগে সবুজ প্রকৃতি প্রাকৃতিক ঢাল হয়ে মানব প্রজাতিকে রক্ষা করে। যুগ যুগ ধরে এভাবেই এদেশের মানুষকে সুরক্ষা দিয়ে আসছে সবুজ প্রকৃতি। কিন্তু এই সবুজ-শ্যামল প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার বিষয়ে জনসচেতনতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। সবুজ রক্ষার ব্যাপারে সরকারি প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলেও বাস্তবায়ন কার্যক্রমে সন্তুষ্ট হওয়া যায় না। 

সবুজ প্রকৃতি বাঁচিয়ে রাখার প্রধান উপাদান হলো বিভিন্ন জলাধার। এই জলাধার কি আমরা সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে পারছি? ব্রিটিশদের শিল্পায়নে যখন তারা নিজেরাই ধুঁকছিল ঠিক তখনই তারা শিল্পায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের আইন প্রণয়ন করে, সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলে এবং সঠিক উপায়ে শিল্পায়নের দিকে এগিয়ে যায়। ব্রিটিশরা যখন নানামাত্রিক শিল্পের দিকে ঝুঁকছে ঠিক তখনই অধিক দূষণসমৃদ্ধ শিল্পগুলোর বিস্তার ঘটে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশ এখন শিল্পায়নে অনেক এগিয়ে গেছে। শিল্পায়নে এগিয়ে যাওয়া মানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির অগ্রযাত্রা। তবে অপরিকল্পিত শিল্পায়নের কারণে আমাদের হারাতে হয়েছে অনেক কিছু। প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের এ দেশে বর্তমানে দূষণ প্রক্রিয়া এমনভাবে বেড়েছে যে, মিঠা পানির মাছ এখন নদীতে বিলুপ্তপ্রায়। বাতাসের দূষণের কারণে গাছগাছালিতে বিভিন্ন জাতের ফল-ফলাদি উৎপাদনের হার কমেছে অনেকাংশে। অন্যদিকে মানুষের ফুসফুস, কিডনি, যকৃতের রোগ বেড়েছে কয়েকগুণ।

শিল্পে আমাদের যেমন এগিয়ে যেতে হবে, তেমনি পরিবেশকে বাঁচানোর উদ্যোগও নিতে হবে। এক্ষেত্রে টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। প্রয়োজন আছে যুগোপযোগী আইনেরও। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে কোনো কোনো সময় অমনোযোগিতা, অনেক সময় না জানা এবং সংশ্লিষ্টদের কর্তব্যে অবহেলার কারণে পরিবেশ আজ বড়ই বিপজ্জনক অবস্থানে পৌঁছেছে। পরিবেশ রক্ষার্থে আইন আছে, কিন্তু প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাও কম নয়। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষার জন্য আগামীর পরিবেশ দূষণমুক্ত ও নির্মল রাখা জরুরি। অস্ব্বীকার করার উপায় নেই, পরিবেশ বাঁচলেই বাঁচব আমরা।

পরিবেশবিষয়ক শিল্পের দখল ও দূষণ প্রসঙ্গে কথা এলেই উচ্ছেদ অভিযানের কথা চলে আসবে। তার জন্য বাজেটের ব্যাপার চলে আসবে এবং পরিকল্পনার ব্যাপারও রয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, এই বিষয়গুলো সমন্বয় করে কাজ করা কখনো কখনো কঠিন হয়ে যায়। এটাও তো সত্য যে, সবকিছুর মেলবন্ধন করা সম্ভব হলে যাবতীয় অনিয়ম, প্রতিবন্ধকতা দূর করা সম্ভব।

নদ-নদী, প্রাকৃতিক জলাধারগুলোকে রক্ষা করতেই হবে। সেজন্য সরকার ও প্রশাসনের পাশাপাশি জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে। নদ-নদীর অধিকার জনগণের। জনগণকেও সচেতন হতে হবে। আমরা নদীর দখল ও দূষণ দেখতে চাই না।

খাল, নদী দখল ও দূষণের বিরুদ্ধে কাজ করতে গেলে প্রয়োজন মন্ত্রণালয়ের একক সিদ্ধান্ত এবং সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজের জন্য প্রয়োজন সঠিকভাবে অর্থায়ন। যেসব শিল্প-কারখানা ইতোমধ্যেই নদীদূষণের কারণ হয়ে আছে, সেসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াও জটিল কাজ। একটি প্রতিষ্ঠানকে পরিবেশ অধিদফতর সর্বোচ্চ যে সাজা দিতে পারে, তা কিন্তু সমাধানের পথ উন্মোচন করে না। শুধু জরিমানা করে একটি প্রতিষ্ঠানকে কখনই দূষণ বন্ধে উৎসাহিত করা সম্ভব হবে না। যারা শিল্পায়ন করছেন তাদের মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন। জলাভূমি ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ আইনকে সুসংহত করতে অবশ্যই প্রায়োগিক ব্যাপারটি গতিশীল করতে হবে। তাদের কিছু বাধ্যবাধকতার মধ্যে নিয়ে আসা যায় কি না, সেটা ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে। কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করলেও অন্তত তার অর্ধেক পরিমাণ পানি পুনরায় যদি ব্যবহার করা যায়, তবেই সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান হতে পারে। সেজন্য প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আশপাশে থাকা নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয় দখল ও দূষণমুক্ত রাখতে হবে।

নদী কমিশনের কাছে অনুরোধ, তারা যেন নদী রক্ষার ব্যাপারে আইন ঠিকমতো ব্যবহার করে। তা ছাড়া দুর্নীতিগ্রস্ত শিল্প-কারখানার বিরুদ্ধে যাতে সরাসরি ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়, সে ব্যাপারে একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। বিষয়টি পরিবেশ আইনের মধ্যে যুক্ত করা যায় কি না, তাও ভাবতে হবে। সামগ্রিকভাবে পরিবেশ আইনের সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাংলাদেশের শিল্পের বিকাশ হলে এদেশ যেমন বাঁচবে দূষণ থেকে তেমনি এদেশের শিল্পগুলো হয়ে উঠবে সারা বিশ্বের মডেল। আশা করি, আইনগুলোর সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ ও আইনের কিছু পরিবর্তন এনে শিল্পগুলোকে সঠিকভাবে পরিবেশ উপযোগী করে পরিচালনা করা বাঞ্ছনীয়। তাহলেই শিল্পায়নের পাশাপাশি সবুজায়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে সামনের দিনগুলোতে। এ ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবার সুদৃষ্টি কামনা করছি।

লেখক : সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, শ্রীপুর, গাজীপুর 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads