• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

ষড়যন্ত্রের নতুন আঙ্গিক : প্রমাণিত মিথ্যার পুনঃঅপপ্রচার

  • সৈয়দ আবুল হোসেন
  • প্রকাশিত ০৬ অক্টোবর ২০১৮

আমি গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, ইদানীং একটি সংঘবদ্ধ চক্র আমার সুনাম ও সুখ্যাতি ক্ষতিগ্রস্ত করতে নতুনভাবে আবার প্রপাগান্ডা শুরু করেছে। আমি ১/১১-এর সময় আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করেছি, আমার স্বাক্ষর সুপার ইম্পোজ করা সেই গায়েবি চিঠি আবার প্রচার করে আমার দল আওয়ামী লীগ ও জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। আমার মর্যাদা ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। ১/১১-এর সময় প্রচারিত সেই গায়েবি চিঠির ভাষা, আঙ্গিক এবং শব্দাবলি দেখলেই বোঝা যায়- চিঠিটি কত অসার, মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। গায়েবি পদত্যাগপত্রের সেই ভাষা, আমার ব্যক্তিজীবন চরিত্রের সম্পূর্ণ বিপরীত। আমি যে ১/১১-এর সময় পদত্যাগ করলাম তা জননেত্রী শেখ হাসিনা জানেন না। আমি জানি না। আওয়ামী লীগের তখনকার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিল্লুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আশরাফ ভাই জানেন না। আওয়ামী লীগ অফিসেও এ ধরনের চিঠি জমা হয়নি। তাহলে এটাকে গায়েবি চিঠি ছাড়া কী বলা চলে। এটা তখনকার স্বার্থান্বেষী মহলের যে বানানো, তা মিথ্যা পদত্যাগপত্রের ভাষা-ই প্রমাণ করে।

আমি জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে ১৯৯০ সালে রাজনীতিতে এসেছি। আমি জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও আদর্শের রাজনীতি করি। উৎপাদন ও কল্যাণের রাজনীতি করি। আমি সৎভাবে ব্যবসা করে অর্থ উপার্জন করেছি। মন্ত্রী থাকাকালীন সরকারি কাজে সততা ও স্বচ্ছতা প্রতিপালন করেছি। এলাকার শিক্ষার প্রসারে অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। এলাকায় নানামুখী উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করেছি। সর্বোপরি, মানুষের সেবা করেছি। সেবা করে চলেছি। আমি আমার কাজে শতকরা একশ’ ভাগ স্বচ্ছ। কখনো কোনো অনিয়ম করিনি, কোনো অবৈধ কাজ করিনি। আদর্শের সঙ্গে আপস করিনি। ১৯৯০ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে জনগণের বৃহত্তর সেবায় রাজনীতিতে এসে দল ও আদর্শের সঙ্গে কখনো বেইমানি করিনি। দলের প্রতি, নেত্রীর প্রতি বিশ্বস্ত থেকেছি। যতদিন বেঁচে থাকব আওয়ামী লীগ ও জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও কল্যাণের রাজনীতি করে যাব।

এ কথা সত্যি- এলাকার উন্নয়ন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও সরকারে মন্ত্রী হিসেবে যোগ দেওয়ার পর আমার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার হয়েছে। ১৯৯০-২০১৪ সাল পর্যন্ত আমি পর পর চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই। এ সময় রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নানা অপপ্রচার চালিয়েছে, হয়তো এখনো চালাচ্ছে। হয়তো এ অপপ্রচার তাদের। মূলত আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ ছিল বায়বীয় ও ভুল ধারণাপ্রসূত। পদ্মা সেতু প্রস্তুতি পর্বে নানা মিথ্যা অভিযোগ, যোগাযোগমন্ত্রীর অফিস মেরামত, যোগাযোগমন্ত্রীর জন্য গাড়ি ক্রয়, কালকিনিতে বাড়ি নির্মাণ, সড়ক দুর্ঘটনায় যোগাযোগমন্ত্রী দায়ী, দুটি পাসপোর্ট সংক্রান্ত বিষয়- সব ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমার গড়া প্রতিষ্ঠান সাকো প্রভাব বিস্তার করে ব্যবসা পাওয়া সংক্রান্ত আমার কোম্পানির এক কর্মকর্তার জাল স্বাক্ষর সংবলিত চিঠি, আমার স্বাক্ষর জাল করে ব্যবসাসংক্রান্ত জাল চিঠি প্রচার করে আমার ইমেজ নষ্টের নানা অপচেষ্টা বিভিন্ন সময়ে হয়েছে। এসব অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। বিএনপি শ্বেতপত্রে উল্লেখ করে এসব বিষয় সম্পর্কে তদন্ত করে। বিএনপির তদন্তেই সব মিথ্যা প্রমাণিত হয়। পরে ১/১১-এর সময় আমাকে আটক করতে না পেরে নানা ছলচাতুরীর আশ্রয় নেওয়া হয়। আমার সাকো অফিস ও বাড়ি তল্লাশি করা হয়। সাকো কর্মকর্তাদের নির্যাতন করা হয়। আওয়ামী লীগ থেকে আমার গায়েবি পদত্যাগপত্র, আমার স্বাক্ষর সুপার ইম্পোজ করে প্রচার করে। ১/১১-এর সময় আমার জন্ম থেকে উত্থাপিত এসব মিথ্যা অভিযোগ এবং পদ্মা সেতুর মিথ্যা অভিযোগ দেশি-বিদেশি তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

ষড়যন্ত্র, হিংসা, পরশ্রীকাতরতা, অপপ্রচার- এগুলো নেতিবাচক শব্দ। প্রবাদ আছে, ‘সংসারে একটি জিনিস সবচেয়ে খারাপ তা হচ্ছে পরচর্চা, পরশ্রীকাতরতা।’ কোনো এক ইংরেজ মনীষী বলেছেন, ‘হিংসা-বিদ্বেষ থেকেই অধিকাংশ ষড়যন্ত্র হয় এবং কুৎসা রটানো হয়।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার এক শিক্ষক বলেছিলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারী ব্যক্তি কখনো সত্য কথা বলে না। অসত্যের আশ্রয় নিয়ে সৎ লোকের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলে, অপপ্রচার করে।’ তবে মনে রাখতে হবে, কোনো দিন মিথ্যা স্থায়ী হয় না। সত্য প্রকাশ হয়ই, সত্যের জয় হয়ই, ঞৎঁঃয ংযধষষ ঢ়ৎবাধরষ. আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত মিথ্যা অভিযোগ, ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার শেষ পর্যন্ত মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। দুদক ও বিদেশি তদন্ত এবং কানাডার আদালতের রায়ে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছি।

আমি সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি অনুরোধ করব, এ ধরনের ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার থেকে বিরত থাকুন। মিথ্যা প্রমাণিত বিষয় পুনঃপ্রচার বন্ধ করুন। বিএনপির আমলে, ১/১১-এর সময় এবং পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক ও স্বার্থান্বেষী গ্রুপের ষড়যন্ত্রের বিষয় নিয়ে দেশি ও আন্তর্জাতিক তদন্ত হয়েছে। আমার আয়-ব্যয়, আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত সব অভিযোগের গ্লোবালি তদন্ত হয়েছে। সব তদন্তে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছি। কাজইে কল্পনাপ্রসূত অভিযোগ- যা বার বার করা তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত, তা আবার টেনে এনে আমাকে বিব্রত, আমার মর্যাদা ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন না করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ করছি। ইবনে মুয়াইদের একটি উক্তি হলো, ‘হিংসুক ব্যক্তি তিন প্রকার কষ্টে নিপতিত হয়, আত্মদহন, মানুষের ঘৃণা ও আল্লাহর গজব।’ আমরা তার এই বাক্যটি অনুসরণ করে আত্মশুদ্ধি করি। সবার মধ্যে শুভবুদ্ধির উদয় হোক, আমরা সবাই হিংসা-বিদ্বেষ-পরশ্রীকাতরতা ও ষড়যন্ত্র থেকে দূরে থাকি- এই প্রত্যাশা করি। সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় হোন।

 

লেখক : রাজনীতিক ও সাবেক মন্ত্রী

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads